![]() |
বিজনেস প্রসেসিং আউটসোর্সিং (বিপিও) নিয়ে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের নানা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। বিপিও খাতের নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো দেশের নানা প্রতিষ্ঠান যেমন এখন বিভিন্ন বিপিও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সার্ভিস নিচ্ছে তেমনি দেশের বিপিও প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন দেশেরও কাজ করছে নিয়মিত। বিপিও খাতে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন ইমপেল সার্ভিস অ্যান্ড সলিউশনস লিমিটেডের (আইএসএসএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিনুল হক। এছাড়াও তিনি যুক্ত আছেন বিপিও খাতের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্ট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের ( বাক্কো )-এর নেতৃত্বে। নিজের উদ্যোগ ও বিপিও খাতের বিষয়ে কথা বলেছেন টেকশহর ডটকমের নিয়মিত আয়োজন ‘টেক ভেঞ্চারস টক’-এ।
টেকশহর: শুরুতে জানতে চাই আইএসএসএলের যাত্রা শুরু হলো কিভাবে? আপনি কিভাবে বিপিওতে যুক্ত হলেন?
মো. আমিনুল হক: আমার শুরুটা হয়েছিল কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ব্যবসা দিয়ে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায় যুক্ত হই ১৯৯৭ সালে। ২০০১ সালে আমি আইএসপি সেটআপ ব্যবসায় যুক্ত হই। এটি এখন দেশব্যাপী সার্ভিস দিচ্ছে। ২০০৮ সালে আমি ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করি। পরবর্তীতে ২০১১ সালে শুরু হয় আইএসএসএলের যাত্রা। বিপিও খাতে সার্ভিস দেয়ার চিন্তা করেই আইএসএসএলের যাত্রাটা শুরু করে এবং এক্ষেত্রে আমার একটি সুবিধা হয়েছে আমি যেহেতু আগে থেকেই আইএসপি, কনটেন্ট ভিত্তিক ব্যবসার আগের অভিজ্ঞতা ছিল। শুরুতে মাত্র ৮টি সিট নিয়ে কাজ শুরু করি। পরবর্তীতে সুইডিশ একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করার মাধ্যমে আমরা ভালো ভাবে শুরু করি। বর্তমানে আমাদের প্রায় ১৫০টি সিটের মাধ্যমে নিয়মিত নানা ধরনের সার্ভিস দিচ্ছি।
টেকশহর: বিপিও বা এ ধরনের ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে চাকুরির অভিজ্ঞতা নেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন?
মো. আমিনুল হক: ব্যক্তিগত ভাবে আমি নিজে কখনো চাকুরি করিনি বা চেষ্টা করিনি। তবে আমি বিশ্বাস করি উদ্যোক্তারা প্রত্যেকেই এক একজন সাহসী মানুষ। কারণ, উদ্যোক্তা কাজ শুরুর সময়েই একটি ঝুঁকি নেন এবং লেগে থাকেন। এটা শুধু বিপিও খাতেই নয়, যে কোন খাতেই হয়। আপনি যদি নির্দিষ্ট একটি কাজে লেগে থাকেন, ধীরে ধীরে কাজের উন্নতি করতে থাকেন সে বিষয়ে বা খাতে ভালো করা সম্ভব।
টেকশহর: বিপিও খাতের বিশ্ববাজার অনেক বড়। আমাদের কেমন সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন?
মো. আমিনুল হক: আমাদের কিন্তু দুটি বাজার আছে। একটি হচ্ছে স্থানীয় বাজার আরেকটি আন্তর্জাতিক বাজার। বিপিও খাতে নানা ধরনের সার্ভিস আছে। যেমন মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা। এ কাজটি কিন্তু স্থানীয় বাজারেই করা সম্ভব। আমরা যে বিপিও খাতকে পরিচিত করতে ‘বিপিও সামিট’ করছি সেখানে কিন্তু এ ধরনের সার্ভিসগুলো সম্পর্কে সবাইকে জানাই। আর এ ধরনের উদ্যোগের ফলেই দেখা গেছে আমাদের দেশের টেলিকম খাতের বেশির ভাগ সার্ভিসই এখন তৃতীয় পক্ষ বা বিপিও সার্ভিস দিচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো করছে। তবে আমাদের কিন্তু দেশের বাজারেই সীমাবদ্ধ থাকা যাবে না। আমাদের আন্তর্জাতিক বাজারে শক্ত অবস্থান করতেই হবে। আমাদের যে বার্ষিক তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে আয়ের লক্ষ্য সেটিকে পূরণ করতে হলে আন্তর্জাতক বাজারে আরো ভালো ভাবে যুক্ত হবে হবে এবং কাজের ক্ষেত্র বাড়াতে হবে। এ নিয়ে আমাদের বেশ কিছু পরিকল্পনা আছে। ধীরে ধীরে আমরা এ কাজগুলোতে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
টেকশহর: বিপিও খাতের সার্ভিসগুলো কিভাবে হয়? আপনারা কিভাবে করছেন?
মো. আমিনুল হক: আমরা যখন আমাদের প্রথম কাজ শুরু করি আমরা কিন্তু গ্রাহকসেবা সার্ভিসের মাধ্যমেই শুরু করেছি। শুরুতেই আমরা ইনবাউন্ড ও আউটবাউন্ড কল নিয়ে কাজ করেছি। কিন্তু দেখা যায়, গ্রাহকদের আরো নানা ধরনের সার্ভিস চায়। আমরা হয়তো গ্রাহককে ফোন করে একটি বিষয়ে বলি কিন্তু এর পরে যে সার্ভিসগুলো শুরু হয় সেগুলো করার জন্যও আবার আলাদা লোকবল লাগে। তখন আমাদের সেসব সার্ভিসগুলো দেয়ার ব্যাপারেও সুযোগ তৈরি হয়। কারণ, যিনি কাজগুলো দিচ্ছে তারা মূলত পূর্ণাঙ্গ সার্ভিস চায়। শুধু ফোন করে বা ফোন রিসিভ করেই সমাধান দিলেই তাদের সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয় না। এসব খাতে আমাদের সার্ভিস দেয়ার সুযোগ তৈরি হয় এবং এ ধরনের কাজগুলো যখন বিপিও প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয় তখন প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজেদের অনেক খরচ কমে যায়।
টেকশহর: বিপিও খাতের যে কাজগুলো হচ্ছে সেটি রাজধানী বা বড় শহরের বাইরে সম্প্রসারণের কোন কাজ করছেন কি? বা বাক্কো’র এ নিয়ে কোন পরিকল্পনা আছে?
মো. আমিনুল হক: বাংলাদেশে যে ফ্রিল্যান্সার কমিউনিটি আছে তারা কিন্তু বেশির ভাগই ঢাকার বাইরে কাজ করছে। প্রায় ৬ লাখেরও বেশি ফ্রিল্যান্সার কাজ করছে। এ ফ্রিল্যান্সাররা যে ধরনের কাজ করছে আমরাও কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে সেই একই কাজ করছি। তারমানে বিপিও খাতের কাজ কিন্তু সারাদেশেই হচ্ছে। এ ফ্রিল্যান্সারাদের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সহায়তার জন্য আমরা বাক্কো থেকে ওয়ানস্টপ সলিউশন শুরু করেছি যেখানে তাদের সব ধরনের সেবা দেওয়া হবে। তাতে করে তারাও প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে পারবে। এতে করে সারাদেশেই বিপিও’র বাজার ছড়িয়ে পড়বে বলে আমার বিশ্বাস।
[সাক্ষাৎকার নিয়েছেন টেকশহর ডট কমের স্পেশাল করসপনডেন্ট নুরুন্নবী চৌধুরী]