তোড়জোড় চলছে মহাকাশে বসতি স্থাপনের। কিন্তু সেখানে গিয়ে খাবেন কি?

টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: জেফ বেজোস এবং ইলন মাস্ক উভয়েই মহাকাশে বসতি স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি করতে চাইছেন। নাসাও মানুষকে মঙ্গলের ধূলাময় পৃষ্ঠে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। প্রশ্ন হ্েচ্ছ চাঁদ অথবা অন্যকোন গ্রহে যদি মানুষের বসতি স্থাপিত হয়ই তাহলে তারা সেখানে খাবে কি? মহাকাশে উদ্ভিদের লাগানো যায় কি না সে বিষয়ে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এমনকি অন্যগ্রহগুলোয় মাংসের কোষ বর্ধিত হয় কি না তা নতুন পরীক্ষা করা হচ্ছে।

সম্ভাব্য পুষ্টির উৎস যাচাই করার জন্য একটি ছোট পরীক্ষামূলক প্রকল্প ছিলো। আলফ ফার্মস নামের এক ইসরায়েল কোম্পানির স্বপ্ন ছিলো এটি। এই কোম্পানিটি কোষ থেকে মাংস উৎপাদন করার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং সর্ববেসরকারি মহাকাশচারী দলের ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন ভ্রমনের সময় পরীক্ষাটি সম্পন্নের প্রস্তুতি নেয়া হয়।

অবশ্য সংশয়বাদীরা বলছেন এই পদ্ধতিটি মহাকাশচারীদের নির্ভর করার মতো নয়। আর পৃথিবীতে কোষ থেকে মাংস উৎপাদন যতটা সহজ মহাকাশে তা নয়।

Techshohor Youtube

মাংস কিভাবে উৎপাদন করা হয়?

একটি নির্দিষ্ট পরিমানে কোষ থেকে মাংস উৎপাদন করা পৃথিবীতেও সম্ভব নয়। আলফস ফার্মসসহ একাধিক কোম্পানি ‘এ ধরনের মাংস তৈরির চেষ্টা’ করছে। কিন্তু সবার আগে পৃথিবীতেই তা উৎপাদনের চেষ্টা করতে হবে।

কোম্পানিটি ‘ল্যাব গ্রোন মিট’ এ শব্দটি ব্যবহার করতে চায় না। তবে বাস্তবতা হচ্ছে এটি গতানুগতিক খামারে তৈরির মতো কিছু দেখায় না।

গরুর কোষ (যে কোন প্রানীর হতে পারে) বৃদ্ধির জন্য অ্যামিনো এসিড এবং কার্বোহাইড্রেটের মতো জিনিসগুলো খাওয়াতে হয়। পেশি টিস্যু গঠন না হওয়া পর্যন্ত কোষগুলো বৃদ্ধি পায় এবং ক্রমে খাওয়ার উপযোগি মাংসে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়াকে ‘চাষ’ বা ‘প্রসারন’ বলে। এভাবে উৎপাদিত মাংস পানশালায় সাধারনত যে ধরনের মাংস দেয়া হয় সেরকম দেখায়।

এর পক্ষের ব্যাক্তিরা বলছেন এই প্রক্রিয়াটি পরিবেশের জন্য ইতিবাচক। এটি মিথেন দূষণ অনেকটাই কমায়।

কেন মহাকাশে মাংস উৎপাদন করা হবে?

আলফ ফার্মসের স্পেস কর্মসূচির প্রধান ভিকা তামারি বলেছেন বিজ্ঞানীরা জানেন না একে মহাশূণ্যে প্রতিস্থাপন করা যাবে কিনা। তিনি আরো বলেছেন, ‘পূর্বের অনেক বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা থেকে আমরা জেনেছি শরীরবিদ্যা এবং জীববিদ্য মাইক্রোগ্রাভিটি পরিবেশে ভিন্নরকম আচরন করে। তাই আমরা জানি না মাংস চাষের এই প্রক্রিয়া সত্যিকার অর্থেই মহাকাশে ঘটবে কিনা।’

আট এপ্রিল স্পেসএক্সে করে যখন চার ব্যাক্তি মহাকাশে রওনা দিলেন তখন তাদের সাথে প্রানীর কোষভর্তি ছোট একটি বক্স দেয়া হয়। এই কোষগুলো বৃদ্ধি পায় কি না সেটিই এখন দেখার বিষয়।

এই পরীক্ষাটি যদি সফলও হয় এবং প্রমানিত হয় যে মহাকাশে মাংস উৎপাদন সম্ভব তাহলেও একে ভালো কোন আইডিয়া বলা যায় না। কারন স্থানীয় বাজারগুলোয় সেল থেকে উৎপাদিন মাংস বিক্রি নাও করতে পারে। এমনকি এই শিল্পে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হলেও (লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও আলফ ফার্মসের একজন বিনিয়োগকারী) চাহিদা অনুযায়ি মাংস উৎপাদন করা সম্ভব নয়।

রেস্টুরেন্টে এ ধরনের মাংস বিক্রির জন্য আলফ ফার্মস এখনো ইসরায়েলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের অনুমোদনের অপেক্ষায়। এমনকি এই খাবারটি পৃথিবীতে এখনো প্রতিষ্ঠা অর্জন করতে পারে নি।

আরো কিছু সমস্যাও রয়েছে। বার্কলের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ডেভিড হামবার্ড বলেছেন, ‘প্রাণী কোষ খুবই ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। আর এখানে কোনভাবে যদি ব্যাকটেরিয়া অথবা ফাঙ্গাস প্রবেশ করে তাহলে তা প্রাণী কোষের চেয়েও দ্রুতগতিতে বাড়বে। ফলে দেখা যাবে আপনি মাংস নয় ব্যাকটেরিয়ার চাষ করছেন; যা ফেলে দেয়া ছাড়া কিছুই করা যাবে না।’

আলফ ফার্মস আরো জানিয়েছে মহাকাশে খাবার পরিবহনন করা খুবই ব্যয়ব্হুল। নাসার হিসেবে পৃথিবীর কক্ষপথে মাত্র এক পাউন্ড পেলোড পেতে ১০ হাজার পাউন্ড খরচ হবে।

বিবিসি/আরএপি

*

*

আরও পড়ুন