প্রতিকূলতা থাকবে, সাহস হারানো যাবে না: ড. মাহমুদা নাজনীন

বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) এবং বাংলাদেশ ওমেন ইন আইটি (বিডব্লিউআইটি)-র উদ্যোগে ২২ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী ‘লুনা শামসুদ্দোহা গার্লস ইন আইসিটি উইক ২০২২’ শীর্ষক একটি আয়োজন। ২২-২৮ এপ্রিল নানা আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রতিদিন একজন সফল নারীকে নিয়ে বিশেষ ফিচার প্রচারিত হবে। এ আয়োজনের অন্যতম সহযোগী টেকশহরডটকম। আয়োজনের তৃতীয় দিনে থাকছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মাহমুদা নাজনীন’র কথা।

‘বিজ্ঞান ও প্রকৌশল ক্ষেত্রগুলোতে মেয়েদের বিচরণ ও অগ্রগতি তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তার অন্যতম কারণগুলো হচ্ছে, দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ ও সময় না পাওয়া। সামাজিক ভাবে সমর্থন না থাকা এবং মেয়েদের এগিয়ে আসার জন্য বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা, বৃত্তি ও কোটা না থাকা বিষয়গুলো অন্যতম।’ বললেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মাহমুদা নাজনীন।

বুয়েটের সিএসই বিভাগে পড়াশোনা করে এই বিভাগে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন তিনি। এর মধ্যে উচ্চ শিক্ষার্থে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন এবং পুরো ব্যাচের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন পিএইচডি করেছেন। বললেন, ‘৫১০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭ থেকে ৮ জন হবে হয়তো যারা পিএইচডি করেছে।’ পরিচিত গন্ডি থেকে বেরিয়ে অবিবাহিত অবস্থায় গবেষণা এবং উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে পা রাখা, এই পথটা মোটেও সহজ ছিল না ‍উল্লেখ করে মাহমুদা নাজনীন জানান, ‘আমি যখন পিএইচডি গবেষণায় ছিলাম তখন ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা খুবই কম ছিল। সে সময়ে আমি একাই সন্তানকে জন্ম দেই এবং বড় করতে থাকি। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে আমি কিন্তু সাহস হারিয়ে গবেষণা ছেড়ে দেইনি।’

Techshohor Youtube

দীর্ঘ কর্মজীবনে বিভিন্ন দেশের মেয়েদের সঙ্গে কাজ করা, কথা বলা ও ছাত্র-ছাত্রীদের মেন্টরিং, অ্যাডভাইজিং করার সুযোগ হয়েছে উল্লেখ করে জানালেন, ‘আমি মনে করি, মেয়েদের সাহসী হতে হবে। কোনো কারণে পিছিয়ে পরলে ভয় না পেয়ে আবার কাজ শুরু করতে হবে। আইসিটি বা কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল এমনি একটি ক্ষেত্র যেখানে নিজেকে প্রতিনিয়ত স্কিল আপডেট, ট্রেইনিং, অনলাইন কোর্স, ওয়ার্কশপ এসবের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’

বুয়েটের সিএসই বিভাগে প্রথম নারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন মাহমুদা নাজনীন। দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন সম্মেলন, জার্নাল ও গবেষণার ফল প্রকাশের জন্য কাজ করছেন অনেকদিন ধরেই। সম্প্রতি বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) ফ্যাকাল্টির প্রথম নারী বিভাগীয় প্রধান হিসেবেও সফল ভাবেই দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

২০১৪ সালে কয়েকজন সহকর্মী মিলে ‘উই আইসিটি নামে ওমেন ইন কম্পিুউটিং’ নামে একটি কর্মশালার আয়োজনের কথা উল্লেখ করে জানালেন, ‘সে সময়ে কর্মশালাটি খুবই জনপ্রিয়তা পায়। এই ধরণের আয়োজন এখন নিয়মিত করতে হবে। এবং বিজ্ঞান, প্রোগ্রামিং চর্চা ও গবেষণায় মেয়েদেরকে উৎসাহিত করতে হবে।’

বিডিওএসএনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘লুনা শামসুদ্দোহা গার্লস ইন আইসিটি উইক’ সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করে প্রয়াত লুনা শামসুদ্দোহাকে নিয়ে মাহমুদা নাজনীন বললেন, ‘লুনা শামসুদ্দোহার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয় যখন উনি আমাকে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ডে’র একটি আয়োজনে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন স্পিকার হিসেবে। এরপর বিভিন্ন প্রোগ্রামে দেখা হয়েছে। ২০২০ এ বিডিওএসএনের একটি সম্মাননা প্রোগ্রামে ওনার কর্মকান্ড সম্পর্কে জানতে পারি। অনেকের সাথে আমরা দুজনেই আমন্ত্রিত ছিলাম। এই আইসিটি উইকের মাধ্যমে ওনাকে সম্মান জানানোর প্রয়াসকে স্বাগত জানাই।’

নারীদের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মেয়েদের জন্য সবসময়ই আমি বলতে চাই, থেমে থেকোনা, ঘাবড়িয়ে যেওনা, এগিয়ে চলো। পড়ে গেলে উঠে দাঁড়াও।’

/জিপিডাব্লিউ/জেএ/এনসি

*

*

আরও পড়ুন