মৃত ও জীবিত ব্যক্তিদের শনাক্তে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে ইউক্রেন

টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে নিহত এবং আহত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করছে ইউক্রেন সরকার। গত মাসেই বিতর্কিত ফেসিয়াল রিকগনিশন কোম্পানি ক্লিয়ারভিউ এআই ইউক্রেন সরকারকে তাদের প্রযুক্তি দিয়েছে। এই প্রযুক্তির সহায়তায় হাজার হাজার মৃতদেহ ও জীবিত অনেককে খোঁজে বের করতে পারছে ইউক্রেন সরকার।

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে একটি মৃতদেহ পাওয়া যায়। ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ মৃত ব্যক্তির পরিচয় জানত না। এ অবস্থায় তারা লোকটির পরিচয় বের করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তা নেয়।

ক্লিয়ারভিউ সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বিতর্কিত মুখবায়ব শনাক্তকরন ব্যবস্থা। কোম্পানিটি ফেইসবুক এবং টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ কোম্পানিগুলোর থেকে হাজার হাজার ছবি চুরি কওে বিশাল একটি ডাটাবেস তৈরি করেছে। কোম্পানিটির সিইও এবং প্রতিষ্ঠাতা হোয়ান টন-দ্যাট একে ‘ফেইসের সার্চ ইঞ্জিন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

Techshohor Youtube

তিনি এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, এটি গুগলের মতো করে কাজ করে। এখানে কোন শব্দ বা বার্তার পরিবর্তে মুখের ছবি পোস্ট করা হয়।

তবে কোম্পানিটি একাধিক আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ফেইসবুক, ইউটিউব,গুগল এবং টুইটার থেকে ছবি নেয়ার কারনে ক্লিয়ারভিউকে এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যেও ইনফরশেন কমিশনারের কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে ফটো নেয়ার সময় ওক্ত ব্যক্তির কোন অনুমতি নেয়া হয় না।

তবে চলমান যুদ্ধের মধ্যে ইউক্রেন সরকারের এই শক্তিশালী প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ক্লিয়ারভিউ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হলেও আমেরিকায় এটা নিয়ে বিভাজন রয়েছে। কিন্তু এরপরেও তিন হাজার ২০০ সরকারি সংস্থা এই প্রযুক্তিটি কিনেছে অথবা পরখ করে দেখছে।

ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে হামলা করলে প্রযুক্তিটি ব্যবহারের আরেকটি সুযোগ দেখতে পান ক্লিয়ারভিউয়ের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধবন্দী এবং পালাতে থাকা মানুষদের ছবি আমরা দেখেছি। আমরা বোঝতে পেরেছি পরিচয় খোঁজে বের করতে প্রযুক্তিটি খুবই সহায়ক হবে। ’

এরপরেই তিনি দ্রুত ইউক্রেন সরকারকে প্রযুক্তিটি নেয়ার প্রস্তাব দেন এবং ইউক্রেন সরকারও তা গ্রহন করে।

সাধারনত যে ব্যাক্তির পরিচয় জানতে চাওয়া হয় তার একটি ছবি তুলে ক্লিয়ারভিউয়ের ডাাটাবেসে রাখা হয়। এরপর সার্চ দেয়ার পর এই ব্যাক্তির মতো দেখতে অনেকের ছবিই চলে আসে। এভাবেই ব্যাক্তির পরিচয় খোঁজে বের করা হয়।

তবে ফেসিয়াল রিকগনাইশন ব্যবহার করে মৃতের পরিচয় বের করা নতুন কিছু নয়। এছাড়া ইউক্রেনে এ কাজের জন্য ব্যবহার করা ক্লিয়ারভিউ একমাত্র প্লাটফর্ম নয়।

বেলিংক্যাটের গবেষণা পরিচালক অ্যারিক টলার বলেছেন, ‘আমরা কয়েকবছর ধরে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছি। ’

তবে ইউক্রেনে অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় অনেক বড় পরিসরে যুদ্ধ চলছে। এ অবস্থায় রাশিয়ায় ফাইন্ডক্লোন নামে একটি ফেসিয়াল রিকগনিশন প্লাটফর্ম ব্যবহার করছেন বলে জানিয়েছেন টলার। এটি নিহত রুশ সেনাদের পরিচয় খোঁজে বের করতে বেশ সহায়ক বলে জানিয়েছেন তিনি।

তবে এসব প্রযুক্তির সাহায্যে খোঁজে পাওয়া পরিচয় কতটুকো সঠিক তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সমালোচকরা। বিশেষ করে যুদ্ধের সময়ে যে কোন ভুল বড় ধরনের বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে।

এদিকে ক্লিয়ারভিউ শুধুমাত্র ইউক্রেনে মৃতদেহ শনাক্তের কাজে ব্যবহৃত হয় না। সন্দেহভাজন শত্রুদের চিহ্নিত করতেও বিভিন্ন চেকপয়েন্টে ইউক্রেন সরকার এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি।

বিবিসি/আরএপি

আরও পড়ুন

মেটাভার্সের জন্য আসছে ‘সার্বজনীন ভাষা অনুবাদক’ এআই

এআই নিয়ে গবেষণা ও বিনিয়োগ বেশি যুক্তরাষ্ট্রে

ফেইসবুক এআই প্রযুক্তির কাজে ইনস্টাগ্রামের ছবি

ইউক্রেন-রাশিয়া: বৈশ্বিক ইন্টারনেট ব্যবস্থা কি ভেঙ্গে পড়ার দ্বারপ্রান্তে?

*

*

আরও পড়ুন