![]() |
আল-আমীন দেওয়ান : দেশের ৪১ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের ‘সুযোগ না পাওয়ার’ কথা বলছেন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতারা।
চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি(পিইডিপি৪) আওতায় এসব বিদ্যালয়ে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যেখানে টেন্ডার বা দরপত্রের মাধ্যমে গ্রামীণফোন ইতোমধ্যে এই কাজ পেয়েছে, অপারেটরটিকে প্রথম পর্যায়ের কার্যাদেশও দেয়া হয়েছে।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবি এই টেন্ডার আহবানের পরপরই টেন্ডারের বেশ কিছু শর্ত নিয়ে আপত্তি জানিয়ে তা সংশোধনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে চিঠি দেয়।
আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক টেকশহর ডটকমকে বলছেন, ‘টেন্ডারে যেসব শর্ত দেয়া হয়েছিলো তাতেই শুধু মোবাইল ফোন অপারেটরাই সেখানে অংশগ্রহণ করার যোগ্য। এসব শর্ত সংশোধন করে মোবাইল অপারেটরদের পাশাপাশি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতাদেরও যেন টেন্ডারে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয় সে আবেদন জানিয়েছিলেন তারা।’
‘টেন্ডার আহবানের পরপরই আমরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে এই বিষয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। যার কপি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এবং বিটিআরসিকেও দেয়া হয়েছিলো। আমরা আশা করেছিলাম, সংশোধিত শর্তে পুন:টেন্ডার আহবান করা হবে এবং ব্রডব্যান্ড সেবাদাতারাও এতে অংশগ্রহণ করতে পারবে’ বলছিলেন তিনি।
‘অথচ সম্প্রতি দেখলাম টেন্ডার সম্পন্ন হয়ে গেছে এবং কার্যাদেশও দেয়া হয়েছে’ উল্লেখ করেন তিনি।
ইমদাদুল হক বলছেন, ‘প্রতিটি স্কুলে প্রতি মাসে ৫ এমবিপিএস গতিতে ২০ জিবিপিএস ডেটা দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু একটি স্কুলে ২০ জিবি ডেটা তো ৫ দিনেই শেষ হয়ে যাবে। যেখানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতারা আনলিমিটেড ডেটা দিতে পারতো।’
অন্যদিকে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতো দ্রুততম সময়ে চাহিদা অনুযায়ী এই বিপুল সংখ্যক স্কুলে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার সক্ষমতা সবচেয়ে বেশি ফোরজি কাভারেজ থাকা মোবাইল অপারেটর দিয়ে সম্ভব হচ্ছে।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর দায়িত্বশীল পর্যায়ে আলোচনার করার উদ্যোগ নিয়েছে আইএসপিএবি।
‘পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য শুনবেন বলে জানিয়েছেন, আমরা দু’একদিনের মধ্যেই ওনার সঙ্গে বসছি’ জানান আইএসপিএবি সভাপতি।
ইমদাদুল হক বলেন, ‘প্রয়োজনে সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে আমরা সংবাদ সম্মেলন করবো, বিভিন্ন কর্মসূচিতেও যেতে পারি ।’
৪১ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইন্টারনেট সংযোগ দিতে ২০২১ সালের নভেম্বরে উম্মুক্ত দরপত্র আহবান করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
দরপত্রে যাচাই-বাছাইয়ের পর ৬১ টি জেলার ৩৯ হাজার ৭০১টি বিদ্যালয়ে ওয়াইফাই পদ্ধতির মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দিতে গ্রামীণফোনকে কার্যাদেশ দেয়া হয়।
এরপর প্রথম পর্যায়ে গ্রামীণফোনকে ১ হাজার বিদ্যালয়ে সংযোগ স্থাপনে জেলা শিক্ষা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ওয়াইফাই সিস্টেম এবং সিম সরবরাহ করতে বলে অধিদপ্তর।
এরমধ্যে মার্চ মাসে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।
৩ এপ্রিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশনা দেয় যে, গ্রামীণফোনের সরবরাহ করা ওয়াইফাই সিস্টেম ও সিম তালিকা অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বিতরণ করতে।
তবে পিইডিপি৪ এর ৪১ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবন জেলার ১২৯৯ টি সরকারি প্রাথমিক স্কুলের ক্ষেত্রে কোনো দরপত্র প্রস্তব না মেলায় এটি পুন:দরপত্রের অপেক্ষায় আছে।
এই কর্মসূচিতে গ্রামীণফোন প্রতিটি স্কুলে ৫ এমবিপিএস গতির সংযোগ দেবে, যেখানে ডেটা ক্যাপিং থাকছে ২০ জিবিপিএস। ঢাকা বিভাগে রয়েছে ৬৮৩০ টি স্কুল, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৯৪৪টি, খুলনায় ৫১১০ টি, বরিশালে ৩৯০৮টি, রাজশাহীতে ৫৪১৫, রংপুরে ৫৯৬৭ টি, সিলেটে ৩১৬০টি এবং ময়মনসিংহে ৩৩৬৭ টি স্কুল রয়েছে।
পিইডিপি৪ এর এই কার্যক্রম বাস্তবায়নে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে দরপত্র আহবানের পর এই দরপত্রের বেশ কিছু শর্তে আপত্তি তোলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতারা। তাদের সংগঠন আইএসপিএবি প্রথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে চিঠি পাঠায়। এ বিষয়ে টেলিযোগাযোগ বিভাগ, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ও বিটিআরসিকেও অবহিত করে তারা।
টেন্ডার ডকুমেন্টসের সেকশন-৭ এর টাইটেলে বলা ছিলো ‘টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন অব মোবাইল ইন্টারনেট সার্ভিস ফর গভর্মেন্ট প্রাইমারি স্কুল’। এখানে আইএসপিএবির প্রস্তাব ছিলো, ‘টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন অব ইন্টারনেট সার্ভিস ফর গভর্মেন্ট প্রাইমারি স্কুল’ করার।
হেডিং ছিলো ‘সিম কার্ড’, যেখানে ‘সিম কার্ড বা ইন্টারনেট কানেকশন’ করার প্রস্তাব ছিলো।
ক্যারিয়ার বা ভেন্ডরে ‘বিটিআরসির লাইসেন্স আছে এমন সেলুলার মোবাইল ফোন সার্ভিস অপারেটর’ । এখানে ‘ বিটিআরসির লাইসেন্স আছে এমন সেলুলার মোবাইল ফোন সার্ভিস অপারেটর এবং ন্যাশনওয়াইড ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার’ করার কথার কথা বলে আইএসপিএবি।
টেকনোলজিতে বলা হয়েছিলো ‘ফোরজি অথবা এর চেয়ে বেশি’, এখানে সংশোধনীতে ‘ফোরজি অথবা ফিক্স ব্রডব্যান্ড’ করার প্রস্তাব ছিলো।
নেটওয়ার্ক কাভারেজে, বরিশালে ৭০০, চট্টগ্রামে ২৫০০, ঢাকা ৩৫০০, খুলনায় ১৪০০ এভাবে প্রতি বিভাগে ফোরজি কাভারেজের টাওয়ার বা বিটিএস নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। সেখানে আইএসপিএবি সংশোধনী চায়, বিভাগভিত্তিক ফোরজি বা যেসব আইএসপি বিটিআরসি গাইডলাইন অনুযায়ী কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিত করে ন্যাশনওয়াইড কাভারেজের সক্ষমতা রয়েছে।
টেন্ডারে বলা হয়েছিলো এক বছরে প্রতি মাসে প্রতি স্কুলে ৫ এমবিপিএসে ২০ জিবি করে ডেটা দিতে হবে। সেখানে আইএসপিএবির সংশোধনী প্রস্তাব ছিলো প্রতি মাসে প্রতি স্কুলে ৫ এমবিপিএসে ২০ জিবি করে ডেটা অথবা ৫ এমবিপিএস ফিক্সড ব্রডব্যান্ড সংযোগ।
এছাড়া আরও কিছু বিষয় সংশোধনীর প্রস্তার দেয় সংগঠনটি যেন তারা ওই টেন্ডারে অংশ গ্রহণ করতে পারে।