অপারেটরদের কর সংস্কারে সুপারিশ করবে টেলিযোগাযোগ বিভাগ-বিটিআরসি

টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : মোবাইল ফোন অপারেটরদের কর কাঠামো সংস্কারের দাবি-দাওয়া সুপারিশসহ এনবিআরকে পাঠাবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসি।

বুধবার এক পলিসি ডায়ালগ অনুষ্ঠানে অপারেটরদের এই আশ্বাস দেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার।

রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁয়ে ‘টেলিকম ট্যাক্স পলিসি এবং ইকোসিস্টেম’ শীর্ষক এই পলিসি ডায়ালগ আয়োজন করে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব এবং বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম (বিআইজিএফ)।

Techshohor Youtube

এতে অপারেটররা তাদের উপর করের চাপের বিষয়টি তুলে ধরে এবং প্রতি বছরই এ বিষয়ে দাবি-দাওয়ার পর খুব একটা সুরাহা না হওয়ার কথা জানান তারা।

অনুষ্ঠানে অপারেটরসহ অংশীজনদের প্রস্তাব এবং বক্তব্য শুনে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমাদের উন্নয়নের জন্য করের দরকার আছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একটা পলিসি আছে, আমি প্রায় ৩৫ বছর রাজস্ব বোর্ডের বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করি। এই পলিসিটা হচ্ছে, যেখান থেকে খুব সহজে কর আদায় করা যায় সেখানেই সবচেয়ে বেশি চাপ সৃষ্টি করা হয়। মোবাইল সেক্টরটা সেই সহজে কর আদায় করা যায় আর তাই চাপের মাত্রাটাও বেশি থাকে।’

‘কিন্তু এটি বোঝা দরকার, আপনি কোন জায়গায় চাপ দিচ্ছেন। আপনার সমগ্র জনগোষ্ঠীর জন্য যে প্রয়োজনটা আছে সেই জনগোষ্ঠীকে যদি এই চাপের তলায় রাখেন তাহলে জনগোষ্ঠীর বিকাশটাকে বিঘ্নিত করা হবে। আমার মনে হয়, আমরা সেভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বোঝাতে সক্ষম হয়নি’ উল্লেখ করেন মন্ত্রী।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, অপারেটরদের এবারের দাবি-দাওয়ার বিষয়গুলো বিটিআরসি সুপারিশ করে পাঠাবে সেখানে টেলিযোগাযোগ বিভাগও সুপারিশ করে রাজস্ব বোর্ডকে পাঠাবে ।

শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, সরকারকে এই বাজেট প্রক্রিয়ার যেতে বা বাজেট তৈরি করতে হলে একটা ক্ষেত্রে হতে আয় হয় আরেকটা ক্ষেত্রে বেশি ব্যয় হয়। এখানে একটা ব্যালেন্সিং পজিশনে রেখেই পরিকল্পনাগুলো হয়। এজন্য কখনও কখনও দেখা যায়, ট্যাক্স আরোপের ক্ষেত্রে কোথাও প্রত্যাশার চাইতে সেখানে বেশি ট্যাক্স আরোপ করা হয়। এটা পাবলিক পলিসি থাকবেই, সব দেশেই থাকে।

‘ট্যাক্স নিয়ে আপারেটরদের দাবি-দাওয়ার বিষয়গুলো এ আগে শুধু ফরওয়ার্ডিং দিয়ে দেয়া হতো, এবার বিটিআরসি হতে সুপারিশসহ পাঠানো হবে যেনো যৌক্তিকভাবে বিবেচনায় নেয় সরকার’ উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের সভাপতি ও সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: খলিলুর রহমান, রবির ভারপ্রাপ্ত সিইও এম রিয়াজ রশিদ।

এছাড়া বক্তব্য রাখেন বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান জুয়েল, অ্যামটব সেক্রেটারি জেনারেল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অবসরপ্রাপ্ত), এরিকসনের কান্ট্রি ম্যানেজার আব্দুস সালাম, গ্রামীণফোনের ভারপ্রাপ্ত চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার হোসেন সাদাত এবং বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার তৈমুর রহমান ।

অ্যামটব-বিআইজিএফ পলিসি ডায়ালগ, ছবি : টেকশহর

অনুষ্ঠানে অপারেটরদের পক্ষে আলোচনার বিষয়বস্তুর উপর উপস্থাপনা দেন রবির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম । 

এতে তিনি তুলে ধরেন, বিগত বছরগুলোতে মোবাইল খাতের রাজস্ব দেশের জিডিপির ১ শতাংশের বেশি ছিল এবং এই খাতটির কর ও ফি প্রদানের পরিমাণ ছিল মোট সরকারি কর রাজস্বের সাড়ে ৪ শতাংশের মতো।

তিনি বলেন, অর্থনীতিতে মোবাইল খাত সংশ্লিষ্ট করের অবদান এর আকারের ৪ গুণেরও বেশি। অপরদিকে সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে এই খাতের অবদান জিডিপিতে আনুমানিক ৭ শতাংশ। মোবাইল কাভারেজের বিস্তৃতি সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক এখনো মোবাইল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হতে পারেনি। তাই ডিজিটাল অন্তর্ভূক্তির অন্যতম শর্ত হচ্ছে মোবাইল খাতে কর কাঠামোর সংস্কার।

কর সংস্কারে অপারেটরদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, অলাভজনক অপারেটরের উপর ন্যূনতম ২ শতাংশ টার্নওভার ট্যাক্স প্রত্যাহার বা যুক্তিসঙ্গত করা।

কর্পোরেট করের হারকে যৌক্তিক এবং সহনীয় পর্যায়ে হ্রাস করা । তালিকাভুক্ত (বর্তমান ৪০ শতাংশ ) ও অ-তালিকাভুক্ত (বর্তমান ৪৫ শতাংশ) অপারেটরদের কর ২৫ শতাংশ ও ৩২ শতাংশে এ নামিয়ে আনা।

দ্বৈত ট্যাক্সেশন এভয়ডেন্স এগ্রিমেন্ট র্কাযকর করা এবং ধারা ৫৬ এর অধীনে অনাবাসীদের যুক্তিসঙ্গত করা ।

কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি এর উদ্দেশ্যে করা অর্থপ্রদান অনুমোদনযোগ্য ব্যয় হিসাবে বিবেচিত করা।

মোবাইল এয়ারটাইমে ৩৩ দশমিক ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রদান করতে হয়, যা প্রিপেইড প্রকৃতির। তাই, যে গ্রাহক প্রিপেইড এয়ারটাইম ব্যালেন্স ব্যবহার করে বিভিন্ন ডিজিটাল নন-টেলিকম পরিষেবা কেনেন, তাদের ১৬% অতিরিক্ত শুল্ক ( এসডি ১৫ শতাংশ এবং এসসি ১ শতাংশ) দিতে হয়। ভ্যাট আইন শুধুমাত্র ১৫ শতাংশ ভ্যাট সামঞ্জস্য করার অনুমতি দেয় । ভ্যাট আইনে প্রয়োজনীয় বিধান সন্নিবেশ করা ।

ফোরজির ক্ষেত্রে এই ভ্যাট ছাড়ের নির্দেশনা দেয়া ।

ডেটা পরিষেবায় সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং মূল্য সংযোজন কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আদর্শ কর হার বা ১৫ শতাংশ করা ৷

মোবাইল সিমের উপরে আরোপিত ২০০ টাকা কর বিলুপ্ত করা এবং সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোতে ভ্যাট ছাড় ।

*

*

আরও পড়ুন