![]() |
আল-আমীন দেওয়ান : প্রায় সাড়ে ৬ বছর পর সম্প্রতি বসেছিলো ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের সভা।
দেশে ভবিষ্যত প্রযুক্তির বিকাশসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে রূপরেখা আসে এই টাস্কফোর্স হতে। টাস্কফোর্সে দেশের সরকারি-বেসরকারি খাতের শীর্ষ পর্যায়ের অংশগ্রহণ থাকে।
এবারও ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’-এর তৃতীয় সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশের পর ভবিষ্যত বাংলাদেশের রূপরেখা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বরাবরের মতো এই সভাতেও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী নেতাদের বক্তব্য শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী।
তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক টেকশহর ডটকমকে জানিয়েছেন, সভায় বেসিস, আইএসপিএবি, বাক্য, ই-ক্যাব সকলেই কথা বলেছেন। শিক্ষামন্ত্রী, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী, এলজিআরডি মন্ত্রীসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনবিআর চেয়ারম্যান প্রত্যেকেই প্রস্তাব দিয়েছেন।
‘প্রধানমন্ত্রী সকলের বক্তব্য ও পরামর্শ শুনেছেন এবং সে অনুযায়ী আমাদের বৈঠক করে যেগুলো যেগুলো গ্রহণযোগ্য সেটা গ্রহণ করার কথা বলেছেন’ উল্লেখ করেন পলক।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) সভাপতি ইমদাদুল হক প্রস্তাব দিয়েছেন তাদের খাতটি যেন আইটিইএসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ইমদাদুল হক টেকশহর ডটকমকে জানান, ‘আমরা আইটিইএসের অন্তভুর্ক্ত হলে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ট্যাক্স বেনিফিট পাবো। যেহেতু সরকার ইনফো সরকারি-৩ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেখানে লাস্ট মাইল কানেক্টিভিটি তো আমরা দেবো। এতে অনেক বড় বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।
‘এই ট্যাক্স বেনিফিটের টাকাটা এখানে বিনিয়োগ করে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ যাত্রায় আরও ভুমিকা রাখতে পারবো’ উল্লেখ করেন তিনি।
আইএসপিএবি সভাপতি বলেন, ‘এই সেক্টরে যারা ব্যবসা করেন, তারা দেশীয় উদ্যোক্তা। তাই দেশের টাকা দেশেই থাকে। তাই যে টাকাটা সরকার ছাড় দিক না কেনো তা আবার দেশেই বিনিয়োগ হবে। এখন ব্যবহারকারী আছেন ১ কোটি ২০ লাখ, এটি যদি আগামী ৩ বছরে ২ কোটি ৪০ লাখে উন্নীত করতে পারি তাহলে বেনিফিট হলো, সরকার ভ্যাট ঠিকই পাবে । এতে ইনডাইরেক্টলি সরকারের বেনিফিট হবে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সভাপতি রাসেল টি আহমেদ প্রস্তাব দিয়েছেন বেসিস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বা বিআইটিএম’কে শক্তিশালী করার প্রস্তাব। তিনি মূলত দক্ষ জনশক্তি তৈরির কথা বলেছেন।
রাসেল টি আহমেদ টেকশহর ডটকমকে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতিতে বেসরকারি খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে। এখন রপ্তানির চাহিদা আসছে। এই চাহিদা নতুন প্রযুক্তির, ব্লক চেইনের, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের, মেশিন লার্নিংয়ের । আমরা সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছি কিন্তু লোক পাচ্ছি না। তাহলে সরকারের লোক তৈরি করার যে পরিকল্পনা সেই পরিকল্পনায় ইন্ডাস্ট্রিকে ইনভলব করা হোক।
‘আমি একাডেমিয়া হতে পারবো না । একাডেমিয়ার পরবর্তী যে জায়গাটা, যে পাশ করে আসছে তাকে রেডি করার দায়িত্ব বিভিন্ন প্রজেক্টের মাধ্যমে নেয়া হচ্ছে। সে প্রজেক্টের মধ্যে আমি ইনভলব হতে চাই, আমি পারি এই ট্রেনিংগুলো দিতে। মানে আমার ইন্ডাস্ট্রির লোক আমি তৈরি করে নেই’ উল্লেখ করেন বেসিস সভাপতি।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো) এর সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ প্রস্তাব দিয়েছেন আইটিইএসের যে ট্যাক্স অব্যাহতি ২০২৪ পর্যন্ত আছে সেটা ২০৩০ পর্যন্ত বাড়ানোর।
ওয়াহিদ শরীফ টেকশহর ডটকমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন ট্যাক্স অব্যাহতি দিয়েছেন তখন আইটি, আইটিইএস ইন্ডাস্ট্রি বড় হয়েছে।
‘এখানে শুধু যে ট্যাক্স অব্যাহতি এটা নয়, সরকারও অন্যান্য দিক হতেও সুবিধা পাচ্ছে। যেমন, এমপ্লয়েমেন্ট ক্রিয়েন্ট হচ্ছে, তারা ইনকাম ট্যাক্স দিচ্ছে। আমাদের পারচেজ হচ্ছে, আমরা ভ্যাট দিচ্ছি। আমাদের যত ভেন্ডর আছে তারা ভ্যাট দিচ্ছে। এই যে ডিরেক্ট ও ইনডিরেক্ট এমপ্লয়েমেন্ট হচ্ছে, ইকোনোমিতে চারিদিক হতে গ্রোথ হচ্ছে-এগুলো হয়ে হয়ে কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি বড় হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর একটা সিদ্ধান্তের কারণে’ উল্লেখ করেন তিনি।
বাক্কো সভাপতি বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে ইন্ডাস্ট্রিটা পিছিয়ে গেছে। করোনার মধ্যে না পড়লে ইন্ডাস্ট্রি আরও বেটার পরিশনে থাকতো। এখন ২০২৫ সালে আমাদের ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির টার্গেট রয়েছে, ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ, ওই সময়ে আমরা চিন্তা করছি ২০ শতাংশ জিডিপি আইটি-আইটিইএস হতে আসুক। এই লক্ষ্যগুলো পূরণ করতে গেলে ইন্ডাস্ট্রিকে দাঁড়াতে হবে। তাই আমরা এই অব্যাহতি যদি এই বছরেই পাই তাহলে আবার নিশ্চিন্ত মনে আমরা এগুতে পারবো।’
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অন্যতম সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতিও এই টাস্কফোর্সের সদস্য। তবে এবারের সভায় সংগঠনটির কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।
বিসিএস সভাপতি সুব্রত সরকার টেকশহর ডটকমকে জানান, দেশের বাইরে থাকায় তিনি সভায় অংশ নিতে পারেননি। বিসিএসের সহ-সভাপতির অংশগ্রহণের আবেদন করা হয়েছিলো কিন্তু টাস্কফোর্স কমিটিতে সে সুযোগ নেই।
এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি খাত হতে টাস্কফোর্সের আরেক সদস্য ই-ক্যাব সভাপতি উপস্থিত ছিলেন। বর্তমান সভাপতি শমী কায়সার এতে যোগ দেন।