বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর আধিপত্য ঠেকাতে আইন করছে ইইউ

টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর আধিপত্য হ্রাস করতে নতুন নীতিমালা প্রণয়নের বিষয়ে সম্মত হয়েছেন ইউরোপের আইনপ্রনেতারা। প্রস্তাবিত ডিজিটাল মার্কেটস অ্যাক্ট (ডিএমএ) শীর্ষক আইনটি প্রয়োগ করা হলে গুগল এবং অ্যাপলের মতো জায়ান্ট কোম্পানিগুলো অন্যান্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কাছে নিজেদের সার্ভিস ও প্লাটফর্ম উন্মুক্ত করতে বাধ্য হবে।

শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচনা রয়েছে তারা বাজার আধিপত্য ব্যবহার করে প্রতিযোগিতায় সুবিধা নিয়ে আসছে।

ইইউর এন্টিট্রাস্ট বিভাগের প্রধান মারগ্রেথ ভেততাগের এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমরা যা চাই তা খুবই সাধারন: ডিজিটালের ক্ষেত্রে সম-বাজার। বড় গেটকিপার প্লাটফর্মগুলো প্রতিযোগিতাশীল ডিজিটাল বাজার থেকে ব্যবসায় ও গ্রাহকদের সুবিধা গ্রহনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে।’

Techshohor Youtube

নীতিমালা প্রনয়নের ঘোষণাটি এখন পর্যন্ত  বড় বড় কোম্পানি বিশেষ করে মার্কিন প্রযুক্তি বিষয়ক কোম্পানিগুলোর ‘এন্টি-ট্রাস্ট’ অথবা ‘এন্টি-কম্পিটেটিভ’ আচরনের বিরুদ্ধে ইইউর নেয়া সবচেয়ে বড় রেগুলেটরি পদক্ষেপ।

জার্মান এমইপি অ্যান্ড্রিয়াস স্কুয়াব ইইউ পার্লামেন্টে এই নীতিমালা বিষয়ক আলোচনা পরিচালনায় নের্তৃত্ব দিয়েছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এই চুক্তিটি বিশ্বব্যাপি প্রযুক্তি আইনের নতুন যুগের উন্মোচন করবে।’

প্রস্তাবিত ডিজিটাল মার্কেটস অ্যাক্ট কার্যকর হলে নিজস্ব পেমেন্ট সিস্টেমের পরিবর্তে অ্যাপল তাদের অ্যাপ স্টোর তৃতীয়পক্ষের পেমেন্ট অপশনের কাছে উন্মোক্ত করতে বাধ্য হবে। এছাড়াও অ্যাপলকে তাদের আইফোনের ওপর নিয়ন্ত্রন শিথিলের বিষয়ে চাপ দেয়া হবে। এছাড়া আইফোন ব্যবহারকারীদের সাফারি ওয়েব ব্রাউজার এবং অন্যান্য কোম্পানির আরোপিত অ্যাপগুলো আনইস্টল করার সুযোগ দিতে হবে; যা বর্তমানে তারা ডিলিট করতে পারে না।

অন্যদিকে স্মার্টফোনে গুগলের অ্যান্ড্রয়েট অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদেরকে গুগল ম্যাপ অ্যাপ অথবা ক্রোম ব্রাউজারের মতো বিকল্প  সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে।

নতুন আইনটিতে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেইসবুক, ম্যাসেঞ্জার,আইম্যাসেজ,অ্যাপ স্টোর,গুগল প্লে এবং বড় কোম্পানিগুলোর অন্যান্য সেবাও ইইউর আইনের নিশানায় পড়বে। এছাড়া ব্যবহারকারীরা কিভাবে ম্যাসেজ পাঠাবে সে বিষয়ে আরো বিকল্প দিতে চায় ইইউ।

আইনটি প্রসঙ্গে অ্যাপল জানিয়েছে, তারা উদ্বেগে রয়েছে যে ডিএমএর কিছু কিছু নীতিমালা গ্রাহকদের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।’

এ প্রসঙ্গে গুগলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘গ্রাহকদের সামনে অনেক পছন্দের সুযোগ উপস্থাপনের লক্ষ্যের দিক থেকে আমরা ডিএমএ’কে সমর্থন করি। কিন্তু কিছু কিছু নীতিমালা উদ্ভাবন কমিয়ে দিতে পারে এবং ইউরোপিয়ানদের কাছে অনেক সুযোগ সীমিত করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’

এদিকে ইইউর এই আইনটি সব প্রযুক্তিকোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। যেসব কোম্পানির বাজার মূল্যমান ৭৫ বিলিয়ন ইউরোর বেশি, বার্ষিক ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের পণ্য বিক্রি হয় এবং কমপেক্ষ ৪৫ মিলিয়ন মাসিক ব্যবহারকারী রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেই এ আইন প্রযোজ্য হবে।

বড় প্রযুক্তিকোম্পানিগুলোর একচেটিয়া মনোভাবের কারণে প্রকৃতপক্ষে একবছর আগে আইনটি প্রস্তাব করেছিলেন ইইউর এন্টিট্রাস্ট বিভাগের প্রধান মারগ্রেথ। বড় মার্কিন কোম্পানিগুলো ইইউর জরিমানা করার প্রচেষ্টাকে বিলম্ব এবং অনেক সময় তা ব্যর্থ করা নিয়ে রীতিমতো হতাশ ছিলেন এই কর্মকর্তা।

আইনটি বাস্তবায়িত হলে শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে নজরদারিতে রাখতে বিপুল কর্তৃত্ব পাবে ব্রাসেলস। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক শীর্ষ কোম্পানিরই ওয়াশিংটনে বিশাল লবিং কার্যক্রম রয়েছে। এসব কোম্পানি জোর দিয়ে বলে আসছে সফল আমেরিকান কোম্পানিগুলোকে শাস্তি দিতেই এ ধরনের উদ্যেগ নেয়া হয়। বিবিসি/আরএপি

*

*

আরও পড়ুন