![]() |
টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : প্যাকেজের সময়সীমা শেষ হলেও এখন হতে অব্যবহৃত ডেটার মেয়াদ ফুরাবে না।
একই সঙ্গে ইচ্ছেমতো অসংখ্য প্যাকেজ আর তৈরি করতে পারবে না মোবাইল ফোন অপারেটররা।
বিটিআরসির নতুন নির্দেশনায় গ্রাহক প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অব্যবহৃত ডেটা নতুন প্যাকেজে পাবেন এবং প্যাকেজের মেয়াদেই আবার প্যাকেজ নিলে দুই প্যাকেজের ডেটাই একসঙ্গে পাবেন।
মঙ্গলবার প্যাকেজের এই নতুন নির্দেশিকার উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
বিটিআরসির প্রধান সম্মেলন কক্ষে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল সংযুক্তির মাধ্যমে এমন এক মহাসড়ক তৈরি করা হচ্ছে যাতে বাংলাদেশ পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের নেতৃত্ব দিতে পারে।
সামনে ফোরজি ও ফাইভজি সেবা পাশাপাশি চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, সারাদেশে ফোরজি নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণে জোর দিতে হবে।
ডেটা প্যাকেজের মেয়াদ আনলিমিটেড রাখার কথা উল্লেখ করে তিনি অপারেটরদের কলড্রপ ও কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিতের পাশাপাশি ওয়েবসাইটে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভার্সন রাখারও পরামর্শ দেন।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, নতুন নির্দেশিকার ফলে টেলিকম খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। তবে শিক্ষিত মানুষের পাশাপাশি যাতে সাধারণ মানুষ প্যাকেজ সর্ম্পকে অবহিত হতে পারে সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া, কলড্রপ ও কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিত করতে হবে অপারেটরদের।
সভার শুরুতে বিটিআরসির ভাইস-চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, নতুন ডেটা প্যাকেজ নির্দেশিকা চালুর ফলে গ্রাহক সহজেই প্যাকেজ সর্ম্পকে বিস্তারিত জানতে পারবে।
বিটিআরসির মহাপরিচালক (সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাসিম পারভেজ নতুন প্যাকেজ নির্দেশিকার বিষয়ে কার্যক্রমের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি জানান, প্রতিটি অপারেটর সব মিলিয়ে ৯৫ টি প্যাকেজ চালু করতে পারবে। এর মধ্যে নিয়মিত প্যাকেজ এবং গ্রাহক কেন্দ্রিক বিশেষ প্যাকেজ মিলে সবোর্চ্চ ৮৫টি এবং রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর জন্য সর্বোচ্চ ১০ টি প্যাকেজ থাকবে।
এছাড়া সকল প্যাকেজের সময়সীমা হবে ৩, ৭, ১৫ এবং ৩০ দিন।
তিনি আরও বলেন, পূর্বে চারটি অপারেটর মিলে মোট প্যাকেজ সংখ্যা ছিল ৬২৯টি । বর্তমানে চার অপারেটর মিলে মোট প্যাকেজ সংখ্যা ৩১২টি । ফলে পূর্বের চেয়ে প্যাকেজ সংখ্যা কমেছে ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ।
নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী ডেটা ক্যারি ফরওয়ার্ডের ক্ষেত্রে কোনো গ্রাহক তিন দিন মেয়াদে ৪ জিবি ডেটা প্যাক ক্রয় করলেন এবং তৃতীয় দিনে তার ২ জিবি বা ১জিবি ডেটা অব্যবহৃত থাকলো । সেক্ষেত্রে তৃতীয় দিনের মধ্যে গ্রাহক ৪ জিবি ৩০ দিন মেয়াদে একই প্যাকেজ কিনলে তার আগের অব্যহৃত ডেটা নতুন প্যাকের সাথে যোগ হবে এবং তিন দিন প্যাকের অব্যবহৃত ডেটা পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন।
এছাড়া একজন গ্রাহক একই পরিমাণ ডেটা ক্রয় করে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে ডেটা প্যাক ক্রয় করলেও তা ক্যারি ফরওয়ার্ড করার সুযোগ পাবেন। নতুন নির্দেশিকায় প্যাকেজের নির্দিষ্ট ধরন, সর্বোচ্চ সংখ্যা, প্যাকেজের কোডভিত্তিক নামকরণ, প্যাকেজের নির্দিষ্ট সময়সীমাসহ সব প্যাকেজ অপারেটরদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
এছাড়া যেকোনো অপারেটর একজন গ্রাহককে দিনে সর্বোচ্চ ৪টি কমার্সিয়াল প্যাকেজের এসএমএস পাঠাতে পারবে এবং গ্রাহককে অবশ্যই প্রতি মাসের খরচ হিসাব সম্বলিত বাংলা এসএমএস প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে প্রদান করতে হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ইতোমধ্যে মোবাইল অপারেটরা বর্তমান নিয়মে সকল ডেটা প্যাকেজ তাদের ওয়েবসাইটে হালনাগাদ করেছে। মোবাইল অপারেটর প্রতিনিধিরা একটি ডেমো প্রদর্শনীতে তা দেখিয়েছেও।
অনুষ্ঠানে রবির চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার সাহেদ আলম বলেন, টেলিকম খাতে শৃঙ্খলা আনতে অপারেটর ও বিটিআরসি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। টেলিকম খাতে প্রবৃদ্ধি আনতে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে এ খাতকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক টেলিকম খাতে বিদ্যমান যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে তার ওপর গুরুত্ব প্রদানে বিটিআরসির প্রতি আহবান জানান তিনি।
গ্রামীণফোনের হেড অব রেগুলেটরি সাদাত হোসেন বলেন, নতুন ডেটা প্যাকেজ একটি গ্রাহকবান্ধব নির্দেশিকা । দীর্ঘদিন ধরে বিটিআরসি ও মোবাইল অপারেটররা সমন্বয় করে এ খাতে উদ্ভূত সমস্যা সমাধান করার পাশাপাশি প্রতিনিয়িত গ্রাহকবান্ধব নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
১৭ মার্চ টেলিটক একটি আনলিমিটেড ডেটা প্যাকেজ চালু করবে জানিয়ে টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সাহাব উদ্দিন বলেন, নতুন প্যাকেজ নীতিমালা একটি মাইলফলক। এর মাধ্যমে গ্রাহক রিচার্জ এমাউন্ট ও ডেটা ব্যবহারের চিত্র পেয়ে যাবে।
বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট এন্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, তাদের প্রতিযোগিতামুলক বাজারে টিকে থাকতে হচ্ছে। তারপরেও গ্রাহকদের স্বার্থে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন নির্দেশিকার ফলে গ্রাহক অভিযোগ কমে আসবে বলেও জানান তিনি।
অ্যামটবের মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এস এম ফরহাদ বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের গড়ার ক্ষেত্রে স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়াতে মোবাইলের মূল্য আরও কমিয়ে আনতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
সভাপতিত্বের বক্তব্যে শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, বিটিআরসি সবসময় গ্রাহক স্বার্থ এবং গ্রাহক আত্মতুষ্টির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
আগামীতে ভয়েস কলের চেয়ে ডেটার ওপর নির্ভরতা বেশি হবে বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, অপারেটরদেরকে এখন থেকে ডেটার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
বিটিআরসি ডেটার ফ্লোর প্রাইস র্নিধারণ করতে উদ্যোগ নেবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, কলড্রপ নিয়ে জনমনে তীব্র অসন্তুষ্টি আছে, তাই অপারেটরদেরকে ফাইবার অপটিক ও তরঙ্গের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
অনুষ্ঠানে কমিশনার (ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশনস) প্রকৈাশলী মোঃ মহিউদ্দিন আহমেদ, কমিশনার (লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং) আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো: দেলোয়ার হোসেন, মহাপরিচালক (স্পেকক্ট্রাম) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল, মহাপরিচালক (লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং) আশীষ কুমার কুন্ডু, মহাপরিচালক (অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব) প্রকৌশলী মোঃ মেসবাহুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন
অপারেটরের জন্য মোবাইল ডাটা প্যাকেজ নির্দেশিকা প্রকাশ করল বিটিআরসি