বিশ্বসেরা এই টেক-প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষপদে নারী

ইউটিউব, উইকিমিডিয়া, ক্রিয়েটিভ কমন্স – নামগুলো কতোই-না চেনা! কিন্তু আমরা ক’জন জানি যে এসব প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে আছেন একেকজন নারী? তাদের সম্পর্কে জানাচ্ছেন নুরুন্নবী চৌধুরী

সুসান ওজস্কি, প্রধান নির্বাহী, ইউটিউব

বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ভিডিও দেখার সাইট ইউটিউবের প্রধান নির্বাহী সুসান ওজস্কি। বিশ্বখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন গুগলের মালিকানাধিন এ ভিডিও সাইটের প্রধান নির্বাহী পদে যোগ দেওয়ার আগে দীর্ঘদিন ধরে সুসান গুগলের অ্যাডস ও কমার্স বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সুসানের জন্ম ১৯৬৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায়। বাবা স্ট্যানলি ওজস্কি যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক এবং মা এস্থার ওজস্কিও একজন শিক্ষাবিদ। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক শেষ করে অর্থনীতি বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া থেকে স্নাতকোত্তর করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি বাড়তি আগ্রহ ছিল সুসানের। পড়াশোনা শেষে নিজেদের গ্যারেজে চালু হওয়া গুগলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান তিনি। সেরা সব কাজের জন্য পেয়েছেন একাধিক স্বীকৃতি। বিশ্বখ্যাত সাময়িকী ফোর্বস ২০১১ সালের সারা বিশ্বে প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় স্থান করে নেন তিনি। ২০১২ ও ২০১৩ সালের তালিকায়ও ছিল তাঁর নাম। এ ছাড়া ফরচুন-এর সেরা ৫০ ব্যবসায়ী নারীর তালিকায় ২০১০ থেকে শুরু করে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন সুসান। সুসানের স্বামী গুগলের নির্বাহী ডেনিস ট্রপার।

Techshohor Youtube

ম্যারিয়ানা ইস্কান্দার, প্রধান নির্বাহী, উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন

সোশ্যাল এন্টারপ্রিনিয়ার এবং ক্রস সেক্টর পার্টনারশিপ ভিত্তিক কাজে বিশেষ দক্ষ ম্যারিয়ানা ইস্কান্দার উন্মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া পরিচালনাকারী সংস্থা উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। ২০১৩ সাল থেকে দক্ষিন আফ্রিকা ভিত্তিক অলাভজনক সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ হারামবি ইয়ুথ এমপ্লয়মেন্ট অ্যাক্সিলারেটর এর সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন ম্যারিয়ানা। এ সংস্থাটি বৈশ্বিক পর্যায়ে আফ্রিকার বেকার তরুণদের নিয়ে কাজ করে থাকে। ম্যারিয়ানার নেতৃতে সংস্থাটি ইতিমধ্যে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন আফ্রিকান তরুণকে সোশ্যাল এন্টারপ্রিনিয়রশিপ মডেলে সহায়তা করেছে। এছাড়াও দীর্ঘ সশয় ধরে স্বেচ্ছাসেবী ভিত্তিক ভাবে পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা ভিত্তিক উদ্যোগ প্ল্যানড প্যারেন্টহুড ফেডারেশন অব অ্যামেরিকা নামক প্রতিষ্ঠানে চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবেও কাজ করেছেন ম্যারিয়ানা। মিশরের কায়রোতে জন্মগ্রহণ করা ম্যারিয়ানা যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করেছেন। অক্সফোর্ড থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ম্যারিয়ানা পেয়েছেন ডিস্টিংগুইসড অ্যালুমনা অ্যাওয়ার্ড।

ক্যাথেরিন স্থিলার, সিইও, ক্রিয়েটিভ কমন্স

জনপ্রিয় উন্মুক্ত লাইসেন্স ক্রিয়েটিভ কমন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ক্যাথেরিণ স্থিলার। প্রায় ২০ বছরের বেশি সময় ধরে উন্মুক্ত দুনিয়া নিয়ে কাজ করা ক্যাথেরিন এর আগে বিশ্বব্যাপী ওপেন নলেজ নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ওপেন নলেজ ফাউন্ডেশনের সিইও হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে কাজ করা ক্যাথেরিন ডিজিটাল পলিসি, কপিরাইট রিফর্ম, সিটিজেন প্রাইভেসি এবং ডেটা প্রটেকশন, পাবলিক একসেস টু ডিজিটাল টুলস ইত্যাদি নিয়ে কাজ করেছেন। পার্লামেন্টের সকল সদস্যদের জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন অল-পার্টি লাইব্রেরি গ্রুপ যার মাধ্যমে ডিজিটাল দুনিয়ার নানা বিষয়ে সহজে পেতে পারে পার্লামেন্ট সদস্যরা। সম্প্রতি ক্রিয়েটিভ কমন্সের ২০ বছর পূর্তিতে নিজের ভাবনা থেকে নতুন বেশ কিছু কাজ করেছেন তিনি এবং উন্মুক্ত লাইসেন্স ছড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছেন।

চায়ান তা’ঈদ, সহ-প্রতিষ্ঠাতা, এনভাটো

জনপ্রিয় গ্রাফিকস টেমপ্লেটস, ওয়েবসাইট থিমস, ছবি, ভিডিও, অডিও ইত্যাদি কেনা-বেচার মার্কেটপ্লেস এনভাটো’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক চায়ান তা’ঈদ। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে জন্মগ্রহণকারী চায়ান পেশায় একজন গ্রাফিক ডিজাইনার। ২০০৬ সালে স্বামী কলিস তা’ঈদ এবং বন্ধু জুন রাংয়ের সঙ্গে মিলে শুরু করেন এনভাটো। শুরুর পর থেকে বর্তমানে অন্যতম জনপ্রিয় এ মার্কেটপ্লেসে অ্যাবস্ট্র্যাক্ট ভেক্টর বিক্রির পরিমান ১ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে এনভাটো থেকে নানা ধরনের কাজের মাধ্যমে কমিউনিটি সদস্যরা আয় করেছেন ২ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এনভাটোর বর্তমানে রয়েছে ডিজিটাল অ্যাসেটস নিয়ে ‘এনভাটো ইলিমেন্টস’, ডিজিটাল নানা কাজ বিক্রির মার্কেটপ্লেস ‘এনভাটো মার্কেট‘, ডিজাইনার ও ডেভলাপার নিয়োগ বিষয়ক সাইট ‘এনভাটো স্টুডি‘, বিভিন্ন ধরনের টিউটোরিয়ালস ও কোর্সের সাইট ‘এনভাটো টিউট+‘, বিনামূল্যে ওয়েবসাইট বানানোর সাইট ‘মিল্কশেক‘ এবং রিয়েল ওয়ার্ড স্টক ফটোর সাইট ‘টুয়েন্টি টুয়েন্টি‘। এনভাটো ছাড়াও অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর হিসেবেও সুপিরিচিত চায়ান। সবমিলিয়ে তিনি এ পর্যন্ত চারটি স্টার্টআপ উদ্যোগে প্রায় ৪.৫৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন। এখনো মনের আনন্দের নিজের প্রিয় ডিজাইনের কাজ করে থাকেন চায়ান তা’ঈদ।

শেরিল স্যান্ডবার্গ, চিফ অপারেটিং অফিসার, ফেইসবুক

বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের সাইট ফেসবুকের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) শেরিল স্যান্ডবার্গ। ২০০৮ সাল থেকে এ দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। শুরু থেকেই ছোট ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান কিভাবে সহায়তা করতে পারে সে বিষয়ে বিশেষ মনযোগ দিয়ে ২০২০ সালে ফেসবুকের বিজ্ঞাপন আয় ২১ শতাংশ বাড়িয়েছেন শেরিল যা আয়ের পরিমান ৮৪.২ বিলিয়ন ডলার। ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে জন্ম নেওয়া শেরিল ফেসবুকের কাজ শুরুর আগে সার্চ ইঞ্জিন গুগলের গ্লোবাল অনলাইন সেলস অ্যান্ড অপারেশনসের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন করা শেরিল গুগলে কাজ করারও আগে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রেজারির চিফ অব স্টাফ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

*

*

আরও পড়ুন