তথ্যপ্রযুক্তি দুনিয়াজুড়ে আজ বাংলা

হাতের মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে প্রযুক্তির প্রায় সকল মাধ্যমে বাংলা এখন যেমন সহজে পড়া যায় তেমনি লেখাও যায়। তথ্যপ্রযুক্তি ‍দুনিয়ায় বাংলা ভাষার অতীত-বর্তমান নিয়ে লিখেছেন নুরুন্নবী চৌধুরী

মোবাইল ফোনে বাংলা বাংলা এসএমএস

মোবাইল ফোনে বাংলা ভাষা বিল্ট-ইন থাকার বিষয়ে সরকারি নির্দেশনার পর এখন প্রায় ফোনই বাংলা ভাষায় ব্যবহার করা যায়। এছাড়া সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় অপারেটিং সিস্টেমে বিল্ট ইন অবস্থায় পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করা হয় মজিলার স্মার্টফোন। যদিও সেটি বাণিজ্যিক ভাবে চালু হয়নি। ২০১১ সালে মোবাইল ফোনে বাংলা ইউনিকোড এবং বিএসটিআরই স্ট্যান্ডার্ড চালু করে বিটিআরসি। এর ফলে বর্তমানে প্রায় সকল ফোনেই যেমন বাংলায় ব্যবহার করা যায় তেমনি সহজে বাংলা লেখাও যায়। ২০১৮ সালে অপারেটর কর্তৃক মোবাইল গ্রাহকদের বাংলায় ইংরেজি অক্ষরে বাংলা ভাষার এসএমএস না পাঠানোর নির্দেশনা দেয়। আর গতকাল (২০ ফেব্রুয়ারি) সকল মোবাইল অপারেটর মোবাইল গ্রাহকদের এসএমএস ও নোটিফিকেশন বাংলায় পাঠানোর বিষয়টি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করা হয়।

Techshohor Youtube

বাংলা কীবোর্ড ফন্ট

যে কোন ভাষা ইন্টারনেটে জনপ্রিয় হয়ে উঠার পরেই এর নানা দিক নিয়ে কাজ করে থাকেন অনেকেই। একই ভাবে বাংলায় শুরু থেকে জনপ্রিয় হয়ে উঠে বিজয় কীবোর্ড। যা পরবর্তীতে বিজয়ের ইউনিকোড লেআউটে অ্যান্ড্রোয়েড এবং আইওএস অপারেটিং সিস্টেমের জন্য উন্মুক্ত হয়। একই ভাবে বাংলা লেখার জন্য একাধিক লেআউটে কীবোর্ড তৈরি করে ডা. মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে ওমিক্রনল্যাব নামের সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০৩ সালে প্রকাশ করা হয় অভ্র কীবোর্ডের। ইন্টারনেটে বাংলা লেখালেখির ক্ষেত্রে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠে এ কীবোর্ডটি। এতে একাধিক লেআউট থাকায় ইন্টারনেটে সহজে বাংলা লেখার বিষয়টি সকল বয়সীদের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠে। অভ্র ছাড়াও বর্তমানে জনপ্রিয় আরেকটি বাংলা লেখার কীবোর্ড হচ্ছে রিদ্মিক। এটি এখন মোবাইলে বাংলা লেখার ক্ষেত্রে বেশ জনপ্রিয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা ধরনের নতুন নতুন লেআউটেও অনেকেই বাংলা লিখছেন। কীবোর্ডের পাশাপাশি গত কয়েক বছরে নানা ধরনের বাংলা ফন্ট তৈরি করছেন অনেক তরুণ। দারুণ সব নকশা এবং মননশীল এসব বাংলা ফন্টও এখন নানা মাধ্যমে ব্যবহৃত হচ্ছে। সরকারি ভাবে ‘নিকস’ নামের একটি ফন্ট বর্তমানে সরকারি সকল কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলা ফন্টের বড় ফাউন্ড্রির মধ্যে বর্তমানে জনপ্রিয় ফন্টবিডি , লিপিঘর , অমিক্রন ল্যাব, অক্ষর ৫২, ফন্টপ্ল্যাট টাইপ ফাউন্ড্রি ইত্যাদি। এসব সাইটে বিনামূল্যে যেমন ফন্ট পাওয়া যায় তেমনি চাইলে ফন্ট কেনাও যায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলা

সার্চ ইঞ্জিন গুগল থেকে শুরু করে প্রায় জনপ্রিয় সকল সার্চ ইঞ্জিনেই এখন বাংলা ভাষায় তথ্য খোঁজা যায়। গুগলে শুরু থেকেই বাংলা ভাষা নির্বাচন করেই নেয়া যায়। এছাড়া জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের সাইট ফেসবুকেও বাংলা ভাষা নির্বাচন করে পুরো বাংলা ভাষায় ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে। অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যে মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার, ছবি শেয়ারিংয়ের অ্যাপ ইন্সটাগ্রামসহ সব মাধ্যমেই বাংলা বিল্ট-ইন ভাষা হিসেবে যুক্ত আছে।

বাংলায় তথ্যের ভান্ডার

বাংলা ভাষায় ইন্টারনেটে সবচেয়ে বড় তথ্যভান্ডার হিসেবে রয়েছে উন্মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া। ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু হওয়া বাংলা উইকিপিডিয়া উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন পরিচালিত উন্মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার বাংলা সংস্করণ। বর্তমানে এতে এক লাখের বেশি নিবন্ধ রয়েছে এবং এতে বিল্ট-ইন কীবোর্ডও রয়েছে। যার ফলে যে কেউ কোন ধরনের আলাদা কীবোর্ড ছাড়াও বাংলা উইকিপিডিয়ায় লিখতে পারেন। ২০১০ সাল থেকে মোবাইল ফোনের জন্য বাংলা উইকিপিডিয়ার মোবাইল সংস্করণ চালু হয়। এর পাশাপাশি বাংলাদেশেও রয়েছে এশিয়াটিক সোসাইটি রচিত জাতীয় বিশ্বকোষ বাংলাপিডিয়া। এসব বিশ্বকোষ থেকে যে কেউ তথ্য, ছবি পেতে পারেন। এ দুটি মাধ্যমেই তথ্য ও ছবি উন্মুক্ত লাইসেন্স ক্রিয়েটিভ কমন্সে রয়েছে যা নির্দিষ্ট শর্তে বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়।  

বাংলা ভাষার ডোমেইন অপারেটিং সিস্টেম

২০১৬ সালে ডট বাংলা (.বাংলা) নামের ডোমেইন চূড়ান্ত বরাদ্দ পায় বাংলাদেশ। পরবর্তীতে শুরু ডট বাংলা আইডিএনের যাত্রা। ২০১৭ সাল থেকে ডোমেইন নিবন্ধন শুরু করে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানী লিমিটেড (বিটিসিএল)। ডট বাংলা ছাড়াও বাংলাদেশের জন্য আইসিএএনএনের স্বীকৃত আরেকটি ডোমেইন হল ডট বিডি (.bd)। এসব ডোমেইন কেনা যাবে বিটিসিএল ওয়েবসাইট থেকে। মাইক্রোসফটের জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) বাংলা ভাষায় ইনস্টল থেকে শুরু করে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া ওপেন সোর্স ওএস লিনাক্সের উবুন্টু , মিন্ট থেকে শুরু করে নানা ডিস্ট্রোতেও বাংলা ভাষা বিল্ট-ইন আছে। অ্যাপলের আইওএস চালিত ডিভাইসেও বাংলা ব্যবহার করা যায় খুব সহজেই। এছাড়া মোবাইল ফোনের ওএস অ্যান্ড্রয়েডসহ অন্যান্য ওএসেও ইনস্টল থেকেই বাংলা ভাষা নির্বাচন করে দেয়া যায়।

বাংলা ব্লগ তথ্যমাধ্যম

প্রযুক্তি দুনিয়ায় বাংলার প্রচলন ছড়িয়ে পড়ে গত কয়েকবছরে এবং এখন সেটি দ্রুত গতিতে এগুচ্ছে। ২০০৫ সাল থেকে ইন্টারনেটে বাংলা ভাষায় ব্লগ লেখার মাধ্যমে এর ব্যপ্তি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। ইন্টারনেটে বাংলা পড়তে বা লিখতে চাইলে ইউনিকোড পদ্ধতির প্রয়োজন হয় এবং সেটির মাধ্যমে সকলে সহজে বাংলায় লিখতে বা পড়তে পারেন। বাংলা ভাষায় জনপ্রিয় ব্লগ হিসেবে যাত্রা শুরু করে সামহোয়ার ইন ব্লগ । এর ধারাবাহিকতায় আরো অনেকগুলো বাংলা ব্লগ শুরু হয়। একই ভাবে ইন্টারনেটে গণমাধ্যমগুলোর ওয়েবসাইটে সহজে বাংলা সংবাদ পড়ার বিষয়টি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। বর্তমানে গ্লোবাল ভয়েসসহ ()ব্লগিং প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি নানা বিষয়ে অনেকেই বিষয় ভিত্তিক ব্লগ নিয়ে কাজ করছেন যেখানে বাংলা ভাষায় নানা ধরনের তথ্য, সংবাদ, ফিচার পাওয়া যাচ্ছে। প্রশ্নোত্তরের জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম কোরা বাংলা যাত্রা শুরু করে ২০১৯ সালে। যেখানেও বাংলা ভাষাভাষী সারাবিশ্বের মানুষজন বাংলায় পড়ছেন এবং লিখছেন নিয়মিত।

*

*

আরও পড়ুন