![]() |
শাহরিয়ার হৃদয়, টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : লেনোভো ইয়োগা সিরিজের নতুন দুটি ট্যাবলেট বাজারে এনেছে। স্কিনের আকারে ভিন্ন হলেও ৮ ইঞ্চি ও ১০ ইঞ্চির ট্যাবলেট দুটির স্পেসিফিকেশন একই। মধ্যম পর্যায়ের ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে এগুলো তৈরি করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্রেতাই সুবিধাজনক আকারের জন্য ইয়োগা ৮ কে বেশি পছন্দ করবেন।
ভিন্ন আউটলুক
দুটি ট্যাবলেটেই অত্যাধুনিক স্লিম ও মসৃণ ডিজাইনের বদলে রয়েছে আশির দশকের ডিভাইসগুলোর ছোঁয়া। চকচকে সিলভার রঙ, খোদাই করা চকচকে লোগো, পুরনো ধাঁচের স্পিকার গ্রিল অন্তত সে কথাই মনে করিয়ে দেবে। ট্যাবের নিচে রোলের মতো একটি আকার রয়েছে, যা একে গতানুগতিক ট্যাবলেটের চেয়ে একেবারে অন্য আউটলুক দিয়েছে। ০.৩০ ইঞ্চি পুরুত্বের এই রোলের ভেতর ব্যাটারিসহ অন্যান্য কম্পোনেন্ট রয়েছে। তবে ট্যাবের মূল আকারটি স্লিমই থাকছে, মাত্র ০.১২ ইঞ্চি। ওজন ০.৮ পাউন্ড।
রোলের ব্যবহার
নিচের রোলটি ইয়োগার ব্যবহার পদ্ধতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। অন্যান্য ট্যাব আমরা স্ক্রিনের দুই পাশে হাত দিয়ে ধরে অভ্যস্ত। কিন্তু ইয়োগা কিছুক্ষণ ব্যবহার করলেই বুঝতে পারবেন, এটি রোল ধরে ব্যবহার করা অনেক বেশি আরামদায়ক। বিশেষ করে বই পড়া বা ব্রাউজিংয়ের সময় দীর্ঘক্ষণ এভাবে ধরে রাখলেও হাতের উপর চাপ পড়বে না। রোলের একপাশে বড় আকারের পাওয়ার বাটন ও অন্যপাশে হেডফোন জ্যাক রয়েছে। এতবড় পাওয়ার বাটন সচরাচর ট্যাবলেটে দেখা যায় না।
কিকস্ট্যান্ড
রোলের সঙ্গে আছে ইয়োগার ডিজাইনের আরেক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন- কিকস্ট্যান্ড। শুরুতে এর ব্যবহার বুঝতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। কিন্তু একটু অভ্যস্ত হয়ে গেলে টেবিলসহ যেকোন সারফেসে দাঁড় করানো অনেক সহজ হবে। যাদের চলার পথে ট্যাবলেট ব্যবহার করতে হয়, তাদের জন্য এ সুবিধাটি বিশেষভাবে কাজে আসবে।
দুর্বল স্ক্রিন
ট্যাব দু’টির সবচেয়ে দুর্বল দিক এদের স্ক্রিন। ১২৮০*১০৮০ পিক্সেলের আইপিএস ডিসপ্লে বাজারের অন্যান্য ট্যাব, বিশেষ করে কাছাকাছি দামের নেক্সাস ৭ এর চেয়ে খুবই দুর্বল। বিভিন্ন আইকন এবং ছবি ঘোলা দেখাতে পারে। এমনকি রংগুলোকেও ছাড়া ছাড়া মনে হবে। তবে টেক্সট পড়তে তেমন অসুবিধা হবে না।
কম্বিনেশন
ট্যাবের ভেতর রয়েছে কোয়াড কোর ১.২ গিগাহার্জ মিডিয়াটেক প্রসেসর, এক গিগাবাইট র্যাম ও ১৬ গিগাবাইট ইন্টারনাল মেমোরি। প্রধান ক্যামেরাটি ৫ মেগাপিক্সেল, যা দিয়ে সাধারণ কাজকর্ম চালানো যাবে। ভিডিও চ্যাটের জন্য ১.৬ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা রয়েছে। এর আরেক আকর্ষণ ডলবি ডিজিটাল সাউন্ড, যা জোরালো ও স্পষ্ট সাউন্ডের অভিজ্ঞতা দেবে। অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে রয়েছে অ্যান্ড্রয়েড জেলি বিন ৪.২।
অগোছালো ইন্টারফেস
ইউজার ইন্টারফেসটি লেনোভো নতুন করে সাজিয়েছে। যদিও স্যামসাং বা সনির ডিভাইসগুলোতে তাদের নিজস্ব ইউজার ইন্টারফেস ব্যবহার করা হয়। অনেকেই তা পছন্দও করেন। একই কারণে লেনোভোর ইন্টারফেসকে অপছন্দ না করে উপায় নেই। তবে অ্যান্ড্রয়েডের মজাই অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে বিচ্ছিন্ন ও অগোছালো এ ইন্টারফেস। অ্যাপ ড্রয়ার না থাকায় সব অ্যাপ সরাসরি হোমস্ক্রিনে অ্যাড হবে, তাই তা দ্রুত অগোছালো হয়ে যাবে। ল্যান্ডস্কেপে ধরলে আইকনগুলোকে আরও বিচ্ছিন্ন মনে হবে। উইজেট ব্যবহারও সুবিধাজনক নয়। তবে একটি ব্যতিক্রমধর্মী সেটিংস রয়েতে, যেখানে আপনি ঠিক করে দিতে পারবেন ট্যাবটি ঠিক কখন অন হবে বা অফ হবে। স্মার্টবার নামে একটি মিডিয়া শর্টকাটের মাধ্যমে মিডিয়া সম্পর্কিত অ্যাপগুলোয় সরাসরি যেতে পারবেন।
গেইম খেলতে গতি কম
সাধারণ ইউজাররা ইয়োগার পারফর্ম্যান্স নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারেন। কিন্তু একটু অ্যাডভান্সড ইউজাররা পদে পদে বিরক্ত হবেন। গেইম তো বটেই, কিছুটা ভারী অ্যাপ্লিকেশনও কাজ করার গতি একেবারে ধীর করে ফেলবে। অনেক হাই গ্রাফিক্সের অ্যাপ ঘোলাটে দেখাবে।
ভালো ব্যাটারি ব্যাকআপ
ট্যাবলেটের অন্য সব সব দুর্বলতা অনেকটাই পুষিয়ে দেবে ৬ হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ার-আওয়ারের ব্যাটারি, যাকে ল্যাপটপের ব্যাটারির সঙ্গে তুলনা করা যায়। সাধারণভাবে চালালে এটি পুরো একদিন এবং ইন্টারনেটসহ নানা অ্যাপ ব্যবহার করে চালালে ১১ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাটারি ব্যাকআপ দিতে পারে।
যাত্রাপথে ব্যবহারে সুবিধা
লেনোভোর সর্বশেষ এই ট্যাব দু’টির কিছু লক্ষ্যণীয় দুর্বলতা আছে বটে; কিন্তু অল্পদামের মধ্যে যে বিশেষ ফিচারগুলো রয়েছে, তা অন্যান্য ট্যাবে পাওয়া যাবে না। অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে যারা প্রতিনিয়ত এক্সপেরিমেন্ট করেন তারা নয়, বরং যাদের বেশ দৌড়াদৌড়ির মধ্যে থাকতে হয় এবং যাত্রাপথে স্মার্ট ডিভাইসে জরুরি কাজকর্ম করতে হয তাদের জন্য পছন্দসই হতে পারে এটি।
ইয়োগা ৮ বর্তমানে ২৫০ ডলারে পাওয়া যাচ্ছে।
এক নজরে ভালো
– ব্যতিক্রমী ডিজাইন ও ইরগোনমিক্স
– চমৎকার ব্যাটারি, উন্নত স্পিকার
এক নজরে খারাপ
– নিম্নমানের স্ক্রিন
– পারফর্ম্যান্স সন্তোষজনক নয়।
– সিনেট, এক্সপার্ট রিভিউ ও পিসিম্যাগ অনুসরণে