মোবাইল অপারেটরদের এসএমএস-নোটিফিকেশন এখন বাংলায়, কেন ?

টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : নানা প্রচেষ্টার পর অবশেষে মোবাইল ফোন অপারেটরদের বাংলায় এসএমএস ও নোটিফিকেশন পাঠানোর কাজটি বাস্তবায়ন হলো।

রোববার রাজধানীর রমনায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সম্মেলন কক্ষে এর উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো. খলিলুর রহমানসহ মোবাইল অপারেটরগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিটিআরসির ভাইস-চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র।

Techshohor Youtube

মোস্তাফা জব্বার বলেন, গ্রাহকের সঙ্গে তার ভাষায় যোগাযোগ না করা হলে অপারেটরদের সেবা পৌঁছানো কঠিন । বাংলা ভাষা প্রযুক্তিগত ব্যবহারে পৃথিবীর কোনো ভাষা হতে পিছিয়ে নেই। পৃথিবীতে এমন কোনো যন্ত্র নেই যে, যেখানে বাংলা লেখা যায় না।

অনুষ্ঠানে বিটিআরসির মহাপরিচালক (সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাসিম পারভেজ বাংলায় এসএমএস সেবা চালু সংক্রান্ত কার্যক্রমের বিস্তারিত তুলে ধরেন।

তিনি জানান, গ্রাহকের কাছে বাংলা এসএমএস প্রেরণের ক্ষেত্রে বাংলালিংক ৯৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছে। গ্রামীণফোন করেছে ৯০ ভাগ, টেলিটক ৮৫ ভাগ এবং রবি ৭৮ ভাগ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে।

মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার প্রযুক্তিতে বাংলার ব্যবহার নিয়ে সবসময় সচেষ্ট ছিল। জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা বাংলা করতে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।

ইতোমধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে ইংরেজিতে ছাপানো অধিকাংশ আইন বাংলায় রুপান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে শ্যাম সুন্দর সিকদার জানান, ১৮ ধরণের মোবাইল এসএমএস বা নোটিফিকেশন বাংলায় পাঠানো হয়। বিটিআরসি অপারেটরদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই সবসময় কাজ করছে।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশনস বিভাগের কমিশনার প্রকৈাশলী মোঃ মহিউদ্দিন আহমেদ, লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হুসেইন, মহাপরিচালক (স্পেকক্ট্রাম) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল, মহাপরিচালক (অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব) প্রকৌশলী মোঃ মেসবাহুজ্জামানসহ বিটিআরসি ও মোবাইল অপারেটরগুলোর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানে অপারেটরগুলো জানিয়েছে, তারা বিভিন্ন ক্যাটাগরির এসএমএস ও নোটিফিকেশন বাংলার পাঠানোর কাজটি অধিকাংশই বাস্তবায়িত করে ফেলেছেন। সামান্য যা বাকি রয়েছে তা ৩০ জুনের মধ্যে সম্পন্ন করবেন।

অপারেটরগুলোর এই বাংলায় এসএমএস ও নোটিফিকেশন পাঠানোর কার্যক্রম বাস্তবায়নে বেশ কয়েক বছর ধরেই কাজ করছিলো বিটিআরসি।

২০১৮ সালের ২৯ আগস্ট মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোকে ইংরেজি অক্ষরে বাংলা ভাষার কোনো এসএমএস না পাঠানোর নির্দেশনা দেয় বিটিআরসি ।

২০১৯ সালের ১২ মার্চ অপারেটরগুলোকে ওই বছরের ২৬ মার্চের মধ্যে সকল এসএমএস বাংলায় পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু অপারেটরগুলো তখন তা বাস্তবায়ন করেনি।

এরপর ২০১৯ সালের ০৯ মে অপারেটরগুলো সকল কর্মাশিয়াল এসএমএস বাংলায় চালু করে।

পরের ধাপে বিটিআরসি বাংলা এসএমএসের খরচ কমানোর উদ্যোগ নেয়। ২০২১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ইংরেজির তুলনায় অর্ধেক খরচে বাংলা এসএমএস চালু করে অপারেটরগুলো।

ওই বছরই ৮ সেপ্টেম্বর বিটিআরসি অপারেটরগুলোকে নির্দেশনা দেয় যে, ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মোবাইল অপারেটরদের পাঠানো এসএমএস, নোটিফিকেশন সব বাংলায় পাঠাতে হবে।

২০১১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মোবাইল হ্যান্ডসেটে বাংলা ইউনিকোড এবং বিএসটিআরই স্ট্যান্ডার্ড চালু করে বিটিআরসি। এর ফলে হ্যান্ডসেটে বাংলা টাইপ করা সম্ভব হয়।

কেন বাংলায় এসএমএস-নোটিফিকেশন ?

মায়ের ভাষার অধিকার আদায়ে রক্ত দেয়া জাতি বাঙালি। বাংলায় এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। পৃথিবীর সব জাতিগোষ্ঠীকে তাদের ভাষার মর্যাদার বিষয়টি বুঝিয়ে দেয়ার দেশেই বিপুল জনগোষ্ঠী শুধু ভাষার কারণে বিভিন্ন সেবা হতে বঞ্চিত হতো।

বিটিআরসি বলছে, প্রান্তিক পর্যায়ে ও কম শিক্ষিত জনগণের অনেকেই ইংরেজি না বুঝতে পারার কারণে মোবাইল অপারেটরদের সেবা হতে বঞ্চিত হতেন।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশে মাতৃভাষায় এসএমএস চালুর প্রচলন থাকলেও বাংলাদেশে তা ছিল না।

নেটওয়ার্ক কাভারেজ ও হ্যান্ডসেট থাকার পরও ইংরেজি নির্দেশনার কারণে সাধারণ মানুষকে টাকা খরচ করে রিটেইলারদের কাছ হতে সেবা গ্রাহণ করতে হতো।

আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার দেশ হওয়ার পরও নিজ দেশে মোবাইল সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা অবহেলিত ছিল।

*

*

আরও পড়ুন