![]() |
টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: অভিনব নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রযুক্তিতে উৎপাদন করা বিদ্যুত দ্রুত ব্যবহার উপযোগী করতে গুগলের সুবিশাল কম্পিউটিং শক্তি ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্রের টিএই টেকনোলজিস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ফিউশনের টাইমলাইনের গতি বাড়াতে টিএইকে সাহায্যের জন্য নিজেদের ‘মেশিন লার্নিং’ প্রযুক্তিও দিয়েছে তারা। এর ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই ফিউশন এনার্জির বাণিজ্যিক ব্যবহার সম্ভব হবে বেল আশা করা যায়।
নিউক্লিয়ার ফিউশন থেকে খুব স্বল্প মাত্রার কার্বনযুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। হাল আমলের পারমানবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ফিউশন নয় ফিশন প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। ফিশনের মাধ্যমে পারমানু একত্র করার পরিবর্তে ইউরেনিয়াম পরমানু ভেঙ্গে শক্তি উৎপাদন করা হয়। তবে এ প্রক্রিয়ায় তেজস্ক্রিয় বর্জ্য তৈরি হয় ; যা পরিবেশের মধ্যে কয়েকহাজার বছর থেকে যেতে পারে। অন্যদিকে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ায় দুই বা তার বেশি পরমানু একত্র হয়ে একটি বড় পরমানু তৈরি করে। এই বিক্রিয়ায় বিপুল পরিমান তাপ শক্তি পাওয়া যায়।
ফিউশনকে অর্থনৈতিকভাবে কার্যকরী করে তুলতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি শক্তি উৎপন্ন করতে হবে। ‘পৃথিবীতে একটি নক্ষত্র তৈরির জন্য’ আট দশকের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কেউ-ই আজ পর্যন্ত ফিউশন শক্তি উৎপাদনের এই পর্যায়ে পৌঁছুতে সক্ষম হয় নি। এ কাজে বিপুল চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অবশ্য কিছু কিছু ফিউশন কমিউনিটি আশা করছে নতুন চিন্তাধারা এবং প্রযুক্তি এ দৃষ্টিভঙ্গিকে ভেঙ্গে দিতে সাহায্য করবে।
এ প্রসঙ্গে টিএইর প্রধান নির্বাহি ড. মিশেল বিন্ডারবাউয়ার বিবিসি নিউজকে জানিয়েছেন, ‘আমি সবার আগে ফিউশন সরবরাহ করতে চাই। তবে এ কাজ যে সর্বপ্রথম করতে পারবে সেই-ই নায়ক।’
লস এঞ্জেলসের দক্ষিণ-পূর্বে ফুটহিল রাঞ্চে অবস্থিত টিএই ফিউশন শক্তি উৎপাদনের জন্য নিজেরাই ৮৮০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে। এছাড়াও মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস, রকফেলার ফ্যামেলি, মাইক্রোসফটের সহযোগি প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত পল অ্যালানের মতো শীর্ষপর্যায় থেকেও সহায়তা পেয়েছে কোম্পানিটি। টিএইর পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের মধ্যে সাবেক মার্কিন জ্বালানী মন্ত্রী আর্নেস্ট মনিজও রয়েছেন।
টিইএর ৩০মিটার (১০০ফুট) লম্বা ফিউশন সিলিন্ডারটি বিশ্বের বৃহত্তম ফিউশন পরীক্ষা মাল্টি বিলিয়ন ডলারের আইটিইআর প্রকল্পের জন্য ব্যবহৃত হবে। সিলিন্ডারটির নাম টিএইর প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা ও পদার্থবিদ নরম্যান রোস্টোকারের নামানুসারে সিটুডব্লিউ ‘নরম্যান’ রাখা হয়েছে। এই সিলিন্ডারটি গরম বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত প্লাজমা নামের গ্যাস তৈরি করে এবং অতিদ্রুত গতিশীল কণাগুলোকে ফিউজ করতে সক্ষম; যা শক্তি নির্গত করে। কিন্তু লাখ লাখ ডিগ্রিতে প্লাজমা নিয়ন্ত্রনের জন্য একটি সূক্ষ্মভাবে নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা প্রয়োজন। এ অবস্থায় টিএআইয়ের ফিউশন ডিভাইসকে ‘অপ্টিমাইজ’ করার জন্য মেশিন লার্নিয়ে গুগলের দক্ষতা ( যেখানে অভিজ্ঞতার সঙ্গে কম্পিউটার অলগারিদমকে আরো চৌকস করা হয়েছে) ব্যবহার করা হচ্ছে। মেশিন লার্নিং ব্যবহারের ফলে দুই মাসের কাজ মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
টিএআইয়ের সিইও এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘অবিশ্বাস্যভাবে শেখার হার ত্বরান্বিত হয়েছে।’ এছাড়া ফিউশন এক্সপেরিমেন্টের সময় পুর্নগঠন কাজেও মেশিন লার্নিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। তিনি আরো বলেছেন, গুগলের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ফলে লম্বা সময়সূচি থেকে এক বছর সাশ্রয় হবে। যার মাধ্যমে আশা করা হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে বানিজ্যিকভাবে ফিউশন টেস্ট ডিভাইস আসবে।
বিবিসি/আরএপি