অনলাইনে ইসলামবিরোধী ও নারীবিদ্বেষী প্রচারণায় জড়িয়ে পড়ছে ভারতীয় তরুণরা

টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: গত বছরের মে মাসে ঈদের পোশাক পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি পোস্ট করেছিলেন পাকিস্তানের কয়েকজন নারী। তাদের এই ছবিই সীমান্তের ওপারে ভারতের কয়েকজন ব্যাক্তি অনুমতি ছাড়াই ইউটিউবে ছড়িয়ে দেয়। ছবির সঙ্গে নারীবিদ্বেষী , ইসলামফোবিক মন্তব্য জুড়ে দেয়া হয়। শত শত মানুষের কাছে ছবিগুলো পৌঁছে যায়। পরবর্তীতে ইউটিউবের একাধিক ব্যবহারকারী ছবিগুলো নিয়ে ভিডিওস্ট্রিমিং সাইটটিতে আপত্তি জানালে ভিডিওটি মুছে দেয় ইউটিউব। এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগি নারীরা জানিয়েছিলেন, ওই সময়ে তারা ‘নিরাপত্তাহীন বোধ করেছেন’ এবং ‘আতঙ্কিত’ ছিলেন যে কারনে তাদের ঈদের আনন্দ নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।

ভারতে নারীদের নিয়ে ট্রল করার চর্চা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় (বিশেষ করে যারা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সমালোচনা করে) আরো বাড়ছে। অনলাইন ও অফলাইন উভয় ক্ষেত্রেই এ পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। সব রাজনৈতিক দল এবং মতাদর্শের সমর্থনকারীরাই অনলাইনে নারীদের হয়রানি করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডান-পন্থীদের উত্থান এবং প্রযুক্তির বিস্তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী তরুনদের আরো উৎসাহী করছে।

ইউটিউবে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ঘটনাটির মতো অনলাইনে হয়রানির মতো আরো অনেক ঘটনা দেখা যায়। মুসলিম নারীদের ছবি শেয়ারকারী দুটি অ্যাপের ডেভেলপাররা মুসলিম নারীদের উপহাস করার জন্য তাদের ছবি ভুয়া ‘নিলামে’ উঠায়। প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং বিজেপিকে সমালোচনাকারী নারীদের ছবি ও অডিও অ্যাপ ক্লাবহাউসে ভুয়া ‘বিক্রির’ জন্য উঠানো হয়। অবশ্য অ্যাপটির কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ধরনের ঘটনার পর থেকে তারা অ্যাকাউন্টটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। অবশ্য এ তিনটি ক্ষেত্রেই প্রকৃত কোন বিক্রির ঘটনা ঘটে নি।

Techshohor Youtube

চরম সমালোচনার মুখে এ দুটি অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত নয়জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২৬ বছরের মধ্যে। এরা সবাই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় যেখানে নিয়মিতভাবে ইসলাম নিয়ে ভয়ভীতিমূলক বার্তা পোস্ট করা হয়। ক্লাবহাউসের নিলাম এবং ইউটিউবে লাইভ স্ট্রিম ঘটনার সঙ্গে ঝাও যুক্ত ছিলেন। মুম্বাই পুলিশের সাইবার সেল বিভাগের প্রধান বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি এবং তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, এগুলো বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। সাংবাদিক এবং লেখক স্নিগ্ধা পুনম বলেছেন, ‘আমি এগুলোর জন্য হিন্দু মধ্যবিত্তশ্রেণীর মৌলবাদিত্বকে দায়ি করব । এগুলো খাঁটি গোড়ামি যা হিন্দু সমাজের গভীর থেকে উঠে এসেছে।’

বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, মহামারীর কারনে তরুনরা আগের তুলনায় অনেক বেশি সময় অনলাইনে থাকছে, ফলে তাদের মধ্যে এ ধরনের কার্যকলাপ বেড়ে গিয়েছে। এছাড়া পক্ষপাতমূলক রাজনৈতিক বিতর্ক এবং মুসলিমদের শত্রু হিসেবে উল্লেখ করে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য এই তরুনদের ধীরে ধীরে ‘মৌলবাদীর’ বীজ বপন করা হয়েছে। নিজের ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন ঝা। তিনি বলেন, ‘যখন আপনি অনুভব করবেন যে আপনার প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে তখনই আপরি সহিংস হয়ে উঠবেন।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন এভাবেই তরুনরা মৌলবাদী হয়ে উঠছেন। কানাডাভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগ ভারতের ডান-পন্থী চরমপন্থীদের অনলাইনে আচরন পর্যালোচনা করে একটি গবেষণা করেছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ‘মহামারী মৌলবাদীদের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। কারন তারা জানে এ সময়ে লাখ লাখ মানুষ অনলাইনে সময় কাটাচ্ছে।’

বিবিসি/আরএপি

আরও পড়ুন

অনলাইনে বিদ্বেষমূলক মন্তব্যে তারকার আত্মহত্যা : সোচ্চার দক্ষিণ কোরিয়াবাসী

অনলাইনের হয়রানি বাস্তব জীবনে নারীদের অন্তরীণ করছে

অনলাইনে কাপড় বিক্রেতা নারীদের হেনস্থা

ওয়েবসাইট ব্লক কনটেন্ট অপসারণ করে কারা, কীভাবে ?

*

*

আরও পড়ুন