জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রনে পর্যাপ্ত ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ গুগল, অ্যামাজন, অ্যাপল

টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: গুগল, অ্যামাজন, অ্যাপলের মতো বিশ্বের অনেক বড় কোম্পানিই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নিজেদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ। এমনকি তারা তাদের অগ্রগতি নিয়েও নিয়মিতভাবে অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২৫টি কোম্পানির ওপর গবেষণার মাধ্যমে এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ‘ক্লাইমেট ইনস্টিটিউট’।

ক্লাইমেট রেসপনসিবিলিটি মনিটর (সিসিআরএম) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই কোম্পানিগুলো বৈশ্বিক গ্রীণহাউস নিঃসরনের জন্য পাঁচ শতাংশ দায়ী। কার্বন নিঃসরনে অনেক ভূমিকা রাখলেও জলবায়ু পরিবর্তন সীমিত করার প্রচেষ্টায় নের্তৃত্ব দেয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে এসব কোম্পানির।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে ২৫টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র তিনটি তাদের উৎপাদন ও সরবরাহ শৃঙ্খল থেকে ৯০ শতাংশ কার্বন নিঃসরন কমাতে স্পষ্টভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই কোম্পানিগুলো হচ্ছে মারস্ক, ভোডাফোন এবং ডয়েচে টেলিকম।

Techshohor Youtube

গবেষণা প্রতিবেদনটির লেখক থমাস ডে বিবিসি নিউজকে জানিয়েছেন তার দল মূলত করপোরেট বিশ্বের ভালো কাজগুলো খুঁজে বের করতে চেয়েছে। কিন্তু তারা ‘এসব কোম্পানির সার্বিক সততায় সত্যিকার অর্থেই বিস্মিত ও হতাশ। কোম্পানিগুলো যেভাবে জলবায়ু নিয়ন্ত্রনের প্রতিশ্রুতি দেয় তা একটি বড় সমস্যা। কোম্পানিগুলোর দেয়া প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতার মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে।’ তিনি এর ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘কোম্পানিগুলো অনেক উচ্চাভিলাষী কথা বললেও তা থেকে বাস্তবতা অনেক দূরে।’

তিনি আরো বলেন, আপস্ট্রিম অথবা ডাউনস্ট্রিম ইমিশনগুলো সবচেয়ে বিতর্কিত স্থান। যা একটি কোম্পানির পরোক্ষ কার্যক্রমের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। যেমন, অ্যাপলের সৃষ্ট ৭০ শতাংশ দূষনই আমস্ট্রিম ইমিশনের মাধ্যমে। অ্যাপলের তৈরি ফোন, ল্যাপটপ ও অন্যান্য পণ্যে ব্যবহৃত বিদ্যুতের মাধ্যমে এই দূষণ হয়।

রিটেইল জায়ান্ট অ্যামাজনের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা এই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রাগুলো নির্ধারন করেছি কারণ আমরা জানি যে জলবায়ু পরিবর্তন একটি বড় সমস্যা এবং অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় পদক্ষেপ গ্রহন জরুরী। ২০৪০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরন শূণ্যে নিয়ে আসার লক্ষ্য পূরণের অংশ হিসেবে ২০২৫ সালের মধ্যে অ্যামাজনের সব কার্যক্রম নবায়নযোগ্য জ্বালানীর মাধ্যমে সম্পন্ন করার পথে রয়েছে।’

উল্লেখ্য, সিসিআরএম প্রতিবেদনটিতে গ্রিন হাউস গ্যাস নি:সরন নেট শূণ্যের ( নেট জিরো) কোটায় নামিয়ে নিয়ে আসতে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে কোম্পানিগুলোর অগ্রগতি যাচাই করে দেখা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন বৈশ্বিক উষ্ণতার হার সীমিত করতে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরনের মাত্রা নেট জিরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে। আর এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে যতোটা সম্ভব কার্বন নিঃসরন কমাতে হবে পাশাপাশি ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সে অনুযায়ি কোম্পানিগুলো নিজ নিজ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছে। যেমন, গুগল ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরন শূণ্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

পণ্য পরিবহন থেকে শুরু করে কারখানা অথবা দোকানপাটে ব্যবহৃত জ্বালানি থেকে বায়ু দূষণ হয়ে থাকে। এছাড়া নির্বিচারে গাছ কাটার কারনেও কার্বন নিঃসরন বাড়ছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ‘ইন্টেগ্রিটি (সততা)’ নিয়ে রেটিং দেয়া হয়েছে। এখানে দেখা গিয়েছে কার্বন নিঃসরন কমিয়ে আনতে কিছু কোম্পানি তুলনামূলক ভালো করেছে, তবে সার্বিকভাবে কোম্পানিগুলোকে আরো ভালো করতে হবে। কোন কোম্পানিই ‘হাই ইন্টেগ্রিটি’ রেটিং পায় নি। বার্ষিক কি পরিমান কার্বন নির্গমন হচ্ছে, কার্বন নিঃসরনের উৎসের নাম প্রকাশ এবং বোধগম্য উপায়ে তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে কিনা এসব বিষয়গুলোই যাচাই করে রেটিং দেয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনটির উপসংহারে বলা হয়েছে, কোম্পানিগুলো যেসব কৌশল গ্রহন করবে তা বাস্তবায়ন করা হলে কার্বন নিঃসরন সর্বোপরি ৪০ শতাংশ কমবে শতভাগ নয়।

বিবিসি/আরএপি

আরও পড়ুন

মহামারির চেয়ে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানো কঠিন

প্রযুক্তি সচেতনতা: একটি ইমেইল কম পাঠিয়েও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ভূমিকা রাখা যায়

জলবায়ু রক্ষায় অভিনব উদ্যোগ

কার্বন নিঃসরণ কমালে ১০ কোটি ডলার দেবেন মাস্ক

*

*

আরও পড়ুন