![]() |
টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: অনেকে মনে করেন উপন্যাস লেখা শেখা সম্ভব। খ্যাতিমান আমেরিকান লেখক মার্ক টোয়েন এ ধরনের চিন্তাধারার লোকেদের বর্জন করে চলতেন। তিনি মনে করেন জন্মগতভাবে গল্প শেখার প্রতিভা নিয়ে জন্ম না নিলে উপন্যাস লেখা রীতিমতো কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
জাতিসংঘের শিক্ষা,বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থার (ইউনেস্কো) হিসাব অনুযায়ি, প্রতি বছর সারাবিশ্বে ২ কোটি ২০ লাখ বই প্রকাশিত হয়। এ তালিকায় ফিকশন ও নন-ফিকশন উভয় ধরনের বই-ই আছে। এসব লেখকরা সেই আদি প্রক্রিয়াই অনুসরন করছেন। যেখানে কোন একটি গল্পের প্লট সাজানো হয় এবং ধীরে ধীরে তা নানা ধাপে সাজিয়ে-গুছিয়ে লিখে ফেলা হয়।
বর্তমান এই যুগে প্রযুক্তি একজন লেখকের জীবন অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে। তথ্য বিজ্ঞানী থেকে ঔপনাস্যিক হয়ে উঠা যুক্তরাষ্ট্রের মাইকেল গ্রিন যখন তার প্রথম লেখার মাঝামাঝি পর্যায়ে ছিলেন তখন লেখার প্রক্রিয়াকে সহজ করার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। নিজের লেখার সমস্যাগুলো সমাধানের পথ বের করতে তিনি তৈরি করেন ডিজিটাল প্লাটফর্ম লিনিট। লেখার প্রক্রিয়া স্মরণ করে তিনি বলেন, ৫০০ পৃষ্ঠার একটি জটিল গল্প লেখা রীতিমতো একটি কঠিন বিষয়। তিনি জানান, ‘সম্পাদনার মাঝামাঝি পর্যায়ে আমি একটি বিষয় বোঝতে পারলাম আমার অনেক প্লট ও চরিত্র রয়েছে। আমি এগুলো মনে রাখা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। ফলে একটি জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য আমি বিজ্ঞান-মনস্কভাবে এগুতে থাকি।
গ্রিনের এ ধরনের চিন্তাভাবনার ফসল লিনিট। এটি একটি ডিজিটাল প্লাটফর্ম যা একজন লেখককে গল্পের চরিত্র, প্লট সাজানো এবং গল্প সৃষ্টিকারী মূল ঘটনাগুলোর মতো উপন্যাসের মূল উপাদানগুলো একসঙ্গে করা, কল্পনা করা এবং সাজাতে সাহায্য করে।
অ্যাপটি এখন বেটা পর্যায়ে রয়েছে। এরইমধ্যে অনেক লেখকই অ্যাপটি পরীক্ষা করে দেখেছেন। বর্তমানে অ্যাপটি বিনামূল্যে ব্যবহার করা যাচ্ছে। এরমাধ্যমে ব্যবহারকারীরা জটিল কোন টেমপ্লেট অথবা গল্পের মানচিত্র আঁকতে অথবা হালনাগাদ করতে পারেন।
গ্রিন বলেছেন , অনেক উপন্যাসিকই কোন একটি সাধারন ধারণা অথবা নির্দিষ্ট চরিত্রের চেয়ে বেশি কিছু নিয়ে তাদের কাজ শুরু করেন। লিনিট এই প্রক্রিয়াকে আরো সহজ করে দেয়। লেখক যদি তার গল্পে নতুন আইডিয়া যুক্ত করতে চান তাহলে তারা এটিকে একটি প্রাকৃতিক কাঠামোর মধ্যে রাখতে সক্ষম হন। তারা একটি ভিজ্যুয়ালাইজেশন তৈরি করতে পারেন। এভাবে তারা গল্পের পর গল্প সাজান।
আর একসময় বই প্রকাশ হওয়ার পর প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাঠকদের সঙ্গেও যুক্ত হতে পারেন লেখক। ফলে বলা যায় প্রযুক্তি যে লেখকদের সহায়তা করতে পারে তা বোঝার মতো খুব কম সময় পেয়েছিলেন টোয়েন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেও লেখকরা পাঠকের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করতে পারে।
ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ক্রেজি ম্যাপল স্টুডিও লেখদেরকে তাদের বইগুলো আরো জীবন্ত করে তুলতে সহায়তা করে। পাঠকদেরকে পৃষ্ঠায় শুধুমাত্র শব্দ দেয়ার পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানটির চারটি অ্যাপ চ্যাপ্টারস, স্ক্রিম, স্পটলাইট এবং কিস এর মাধ্যমে অ্যানিমেশন, মিউজিক, সাউন্ড এফেক্ট এবং গেম প্লে যোগ করে বইগুলোকে ডিজিটাল রূপ দেয়া যায়।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা জয়ি জিয়া বলেছেন, ‘ডিজিটাল বিপ্লব এবং ই-পাঠকদের আবির্ভাব প্রকাশনা শিল্পে বড় পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এটি ‘গেটকিপারের’ প্রভাবকে কমিয়েছে।
তিনি আরো বলেছেন, লেখকদেরকে এখন এমন একটি বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে যেখানে সম্ভাব্য পাঠকদের সময় কাটানোর জন্য অনেক বিকল্প রয়েছে। ফলে তারা ক্রমে প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছেন।
তবে এ প্রযুক্তিগুলো লেখকদের সত্যিকার অর্থেই কতটুকো সহায়তা করবে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের এখনো সন্দেহ রয়েছে। লেখক প্রশিক্ষক মেলিসা হেভম্যান বলেছেন, ‘প্রযুক্তিও বিভ্রান্তিকর হতে পারে। কোন কোন সময় অতিপ্রয়োজনীয় পাঁচ মিনিটের জন্য লেখার সময় হারিয়ে যেতে পারে।’
বিবিসি/আরএপি
আরও পড়ুন
মিথ্যা বললেই ধরে ফেলবে প্রযুক্তি