‘অবৈধ মোবাইলের’ বাজার বেড়েছে

আল-আমীন দেওয়ান : দেশের বাজারে অবৈধ পথে আসা হ্যান্ডসেটের দখল বেড়েছে।

সর্বশেষ তিন মাসে এটি বাড়তে বাড়তে ৪০ শতাংশেরও বেশি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন দেশে কারখানা স্থাপনকারী মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদকরা।

তারা বলছেন, এরআগে অবৈধ হ্যান্ডসেট দেশের মোবাইল নেটওয়ার্কে চলবে না, বিটিআরসির এমন উদ্যোগের প্রেক্ষিতে অবৈধ হ্যান্ডসেটের বিকিকিনি অনেক কমে এসেছিলো। পাশাপাশি অবৈধ মোবাইল ধরতে তখন আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর ঘনঘন অভিযান চলছিলো। ফলে ২০২১ সালের অক্টোবরের আগে অবৈধ মোবাইলের বাজার কমে ১৫ শতাংশের মতো এসে দাঁড়িয়েছিলো।

Techshohor Youtube

এরপর অক্টোবরে দেশের মোবাইল নেটওয়ার্কে কোনো হ্যান্ডসেট চালু হলে তা বন্ধ করে দেয়া হবে না-এমন সিদ্ধান্তের পর অবৈধ হ্যান্ডসেটের বাজার আবার বাড়তে থাকে।

টেকনো ও আইটেল ব্র্যান্ডের হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারক কোম্পানি ট্রানশান বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও রেজওয়ানুল হক টেকশহরডটকমকে জানান, অবৈধ হ্যান্ডসেটের বাড়বাড়ন্তের কারণে দেশীয় উৎপাদকরা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। এই অবৈধ হ্যান্ডসেটের বাজার এখন ৪০ শতাংশের বেশি চলে এসেছে।

‘দেশে অবৈধ হ্যান্ডসেট বন্ধের ঘোষণায় গত বছর এটি কমে আসছিলো। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান, মানুষকে সতর্ক করে বিটিআরসির প্রচারণায় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ অবৈধ হ্যান্ডসেটের বাজার ১৫ শতাংশেরও নীচে চলে গিয়েছিলো’ উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বা বিএমপিএমএ এর অন্যতম এই প্রতিষ্ঠাতা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বাজারে অবৈধ হ্যান্ডসেটের এই আধিপত্য তাদের বড় ভাবনার কারণ। এসব হ্যান্ডসেট ব্যবহারে কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় এটি এখন বেড়েই চলেছে।

অবৈধ হ্যান্ডসেট বন্ধে জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলছেন, দেশে এখন বেশিরভাগ সুপরিচিত মোবাইল হ্যান্ডসেটের কারখানা হয়েছে। যেখানে অনেক বিনিয়োগ হয়েছে। এখন অবৈধ বাজার নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে তারা ক্ষতির মুখে পড়বেন।

সিম্ফনি মোবাইলের প্রস্তুতকারক সিম্ফনি মোবাইল এবং এডিসন গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাকারিয়া শাহীদ। আশুলিয়ার আউকপাড়া ডেইরি ফার্মে সিম্ফনি মোবাইল এর কারখানায় আলাপকালে তিনি বলছিলেন, অবৈধ হ্যান্ডসেটের বাজার ৪৫ শতাংশের মতো হয়ে গেছে। এটা আটকানো না গেলে দেশে এ খাতে কারখানা স্থাপনকারীরা ক্ষতির মুখে পড়বেন।  

চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি বিটিআরসির সঙ্গে বৈঠকে এই অবৈধ হ্যান্ডসেটের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন দেশে মোবাইল ফোন কারখানা স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা ।

বৈঠকে দেশের ১৪টি মোবাইল কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

ওই বৈঠকে ডাক ও টেলিযোযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ‘আমরা যদি পণ্যের গুণগতমান অটুট রাখতে পারি সেক্ষেত্রে বিদেশি হ্যান্ডসেট কেউ কিনতে যাবে না। দাম ও গুণগতমান ঠিক থাকলে চোরাই পথে মোবাইল আমদানির অবৈধ ব্যবসাও বন্ধ হবে।’

অবৈধ হ্যান্ডসেট বন্ধে বিটিআরসি ২০২১ সালের ১ জুলাই পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছিলো ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর)।

যেখানে বৈধ কিংবা অবৈধ- গ্রাহকের হাতে মোবাইল নেটওয়ার্কে সচল থাকা সকল হ্যান্ডসেট ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিটিআরসির ‘নক অটোমেশন অ্যান্ড আইএমইআই ডেটাবেইজ (এনএআইডি)’ সিস্টেমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিন করা হয়। আর ওই সময়ে নিবন্ধিত হওয়া ওসব হ্যান্ডসেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে না বলে তখন জানানো হয়।

এরপর বছরটির ১ অক্টোবর হতে নেটওয়ার্কে নতুনভাবে সংযুক্ত সকল অবৈধ হ্যান্ডসেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছিলো।

পরে ২১ অক্টোবর কোনো হ্যান্ডসেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করার নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বর্তমানে দেশে মোবাইল ফোন গ্রাহক প্রায় ১৭ কোটি ৪১ লাখ। প্রতিবছর প্রায় দেড় কোটি মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানি এবং প্রায় দুই কোটি মোবাইল ফোন দেশেই সংযোজিত হচ্ছে।

বর্তমানে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ৮টি হ্যান্ডসেট বিদেশ হতে আসার সময় সঙ্গে আনা যায়। এরমধ্যে ২টি হ্যান্ডসেট বিনাশুল্কে এবং ৬টি হ্যান্ডসেট শুল্ক দিয়ে আনা যাবে।

আর বিটিআরসির অনাপত্তিপত্র ছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যবহারে এয়ার মেইল বা শিপিংয়ে সর্বোচ্চ দুটি হ্যান্ডসেট আনা যায়।

*

*

আরও পড়ুন