কেন স্মার্টফোন ব্যবহার ছাড়ছেন অনেকে?

ndian-smartphone-techshohor
ছবি : ইন্টারনেট

স্মার্টফোনের ব্যবহার আমাদের জীবনকে সহজ করেছে অনেক। তারপরও অনেকে কেন স্মার্টফোন রেখে সেকেলে ফোনে ফিরে যাচ্ছেন – তা নিয়ে সম্প্রতি বিবিসি একটি প্রতিবেদন করেছে। আর তা অনুবাদ করেছেন টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর পিংকী রাবেয়া

কেস স্টাডি-

৩৬ বছর বয়সী দুলসি কলিং নিজের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো করতে মাসখানেক আগে স্মার্টফোন ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি পরিবার ও বন্ধুদের জানিয়ে দেন স্মার্টফোনের পরিবর্তে পুরনো নোকিয়া ফোন ব্যবহার করবেন; যা দিয়ে শুধুমাত্র ফোন রিসিভ এবং বার্তা আদান-প্রদান করা যাবে। এ সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনের ঘটনা বর্ননা করে তিনি জানান, একদিন তিনি ছয় ও তিন বছর বয়সী দুই ছেলেকে নিয়ে পার্কে গিয়েছিলেন। সেখানে তার মতো সব অভিভাবকের হাতেই মোবাইল ছিলো। সবাই নিজ নিজ ফোনের দিকে তাকিয়ে শুধুমাত্র স্ক্রলিং করে যাচ্ছিলো। দুলসি আরো বলেন, ‘আমি ভাবছিলাম কি ঘটছে? সবাই সত্যিকারের জীবন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। চারপাশের পরিবেশ দেখার পরিবর্তে টুইটার অথবা অনলাইনে নিবন্ধ পড়ে সময় কাটাচ্ছে।  

Techshohor Youtube

কেস স্টাডি-

লন্ডনভিত্তিক বিজ্ঞাপনী সংস্থা হেল ইয়ের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর কাউলিং করোনাকালীন লকডাউনের সময়ই স্মার্টফোন পরিত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর হাতে যে সময় পাওয়া যাবে তা দিয়ে আরো বই পড়া ও ঘুমানোর পেছনে ব্যয় করবেন বলে জানান। তিনি আরো বলেন,‘আমি ভেবে দেখলাম জীবনের কতোটা সময় আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিলাম এবং এ সময়ের মধ্যে অনেককিছু করতে পারতাম।

কেস স্টাডি-

দুই বছর আগে স্মার্টফোন ব্যবহার ছেড়ে দিয়েছেন গবেষক ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্স দুনেদিন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সাংস্কৃতিকভাবে আমরা এই যন্ত্রগুলোয় আসক্ত হয়ে পড়ছি।’ স্মার্টফান ব্যবহার বন্ধের পর তিনি অনেক সুখি জীবন-যাপন করছেন বলে জানান। তিনি বর্তমানে বাসায় থাকা কম্পিউটারে ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগের কাজ সেরে নিচ্ছেন। অ্যালেক্স বলেন, ‘এটি আমার জীবনকে উন্নত করেছে। আমার সমস্ত চিন্তাধারা একটি যন্ত্রের মধ্যে সংযুক্ত হয়ে পড়েছিলো যেখানে আমার শক্তি ও অর্থ ব্যয় করতে হতো। আমি মনে করি প্রযুুক্তির বিপদজনক দিক হচ্ছে এগুলো আমাদের জীবনকে শূণ্য করে দিচ্ছে।’

বিশেষজ্ঞের মত

উপরের এই তিন জনের মতো স্মার্টফোন ছেড়ে দেয়া ব্যাক্তির সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। সাইকোথেরাপিস্ট ও দ্য ফোন অ্যাডিকশন ওয়ার্কবুকের লেখক হিলদা বুর্ক বলেন, প্রচুর পরিমানে ডিভাইস ব্যবহার এবং সম্পর্কের সমস্যা, ঘুমের পরিমান, আরাম এবং মনযোগ ধরে রাখার সক্ষমতার সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘তারা নিজেদের সীমা নির্ধারন করতে পারে না। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এবং সকালে ঘুম থেকে উঠেই ইমেইল ও ম্যাসেজ চেক করাকে তারা বাধ্যতামূলক মনে করে।

আপনি একদিকে স্মার্টফোন ব্যবহার বন্ধ করা খুব বেশি মনে করছেন অন্যদিকে এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার নিয়েও উদ্বিগ্ন । এমন পরিস্থিতিতে আপনি অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহন করে এর ব্যবহার কমাতে পারেন। বর্তমানে আরো কিছু অ্যাপ তৈরি হচ্ছে যা আপনাকে অহেতুক মোবাইল স্ক্রলিং কমাতে সাহায্য করবে।

অন্যপক্ষে প্রযুক্তি ব্যবসায়ীরা…

যুক্তরাজ্যভিত্তিক মোবাইল নেটওয়ার্ক ভোডাফোনের মুখপাত্র জানান, ‘আগের তুলনায় স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, সামাজিক সেবা এবং অনেকসময় আমাদের বন্ধু ও পরিবারও ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে। স্মার্টফোন এখন মানুষের জন্য অপরিহার্য লাইফলাইন হয়ে উঠেছে।’ তিনি আরো বলেন,‘আমরা মানুষকে প্রযুক্তি থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে সাহায্য করি। পাশাপাশি তারা যখন অনলাইনে থাকে তাদের নিরাপদে রাখারও চেষ্টা করি আমরা।’

বিবিসি/আরএপি

*

*

আরও পড়ুন