![]() |
সাম্প্রতিক সময়ে ফেইসবুকের নিউজফিড স্ক্রল করে নামতে থাকলেই চোখে পড়ছে বন্ধুদের ‘ওয়ার্ডল’-র স্কোর শেয়ার। কী এই ‘ওয়ার্ডল’, কেনইবা এত দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, খেলার নিয়মাই বা কী,
জানাচ্ছেন নুরুন্নবী চৌধুরী
সঙ্গীর জন্য অনেকটা মজা করেই শব্দ ভিত্তিক এক গেম তৈরি করেছিলেন নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনের বাসিন্দা, সফটওয়্যার প্রকৌশলী জশ ওয়ার্ডল। সঙ্গী পলক শাহের জন্য তৈরি এ গেমটির যাত্রা শুরু হয় গত বছরের অক্টোবরে। আর চলতি বছরের প্রথম মাসেই এখন নিয়মিত গেমটি খেলছেন ৩ লাখ মানুষ! গেমটি শুরুর পর জশ ও পলক নিজেরাই খেলেছেন কয়েক মাস। পরে নিজেদের আত্নীয়দের খেলার জন্য দিয়েছেন এবং পরবর্তীতে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সকলের জন্য উন্মুক্ত করেছেন। গত বছরের অক্টোবরে যাত্রা শুরুর পর নভেম্বর মাসে এর ব্যবহারকারী ছিল মাত্র ৯০ জন! সেটিই বেড়ে চলতি বছরের প্রথম মাসেই ৩ লাখ ছাড়িয়েছে। আর এখন নিয়মিতই বাড়ছে এর ব্যবহারকারী। গেমটি খেলার পর এর প্রাপ্ত স্কোর ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার এবং ইন্সটাগ্রামে শেয়ার করছেন। গত কয়েকদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে সবুজ, হলুদ বা ছাইরঙা বাক্সের! আর সেটিই হচ্ছে জশের তৈরি গেম ‘ওয়ার্ডল’। নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে গেমটির নামকরণ করেছেন নির্মাতা।
এ গেমটি নিয়মিত খেলছেন এবং ফেসবুকে সেটি শেয়ার করছেন ইউনিভার্সিটি অব টরোন্টোর কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইশতিয়াক আহমেদ। তিনি জানালেন, ‘আমি গত দুই সপ্তাহ ধরে গেমটি খেলছি, এবং আমার বেশ ভালই লাগে এটি খেলতে। খেলার সময় আমাদের ছোটবেলায় বন্ধুদের সাথে খেলা কিছু গেমসের কথা (যেমন: হ্যাংম্যান) মনে করিয়ে দেয়।’ তিনি বলেন, ‘গেমটি এত জনপ্রিয় হবার পেছনে সম্ভবত মূল বিষয় হচ্ছে কীভাবে খেলা হচ্ছে সেটি। বিশ্বের সবাই একই দিনে একই ওয়ার্ড খুঁজে পাবার চেষ্টা করছে – এই ব্যাপারটা অনেককেই আকৃষ্ট করছে। তাই খেলা শেষে একে অন্যের সাথে ফলাফল শেয়ার করার পরে যেই আলাপটা হচ্ছে তা অনেকেই উপভোগ করছেন। সেখানে কিছুটা প্রতিযোগিতার আমেজও তৈরি হচ্ছে বৈ কি। বর্তমান পৃথিবীতে যখন বিতর্কে বিতর্কে চারদিকে দেয়াল তৈরি হচ্ছে শুধু, সেখানে একটি গেম দিয়ে সবাইকে এই সুতোয় বেধে ফেলার এই ব্যাপারটা আমার ভাল লেগেছে।’
ওয়ার্ডল খেলার পদ্ধতি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাদের চোখে পড়েছে তিন রঙের অনেকটা লুডোর ছক্কার মতো তারা হয়তো শুরুতে বুঝতে পারছেন না বিষয়টি। এটি মূলত শব্দ ভিত্তিক গেম ‘ওয়ার্ডল’। করোনা পরিস্থিতিতে ঘরবন্দি থাকাকালীন সময়ে সময় কাটাতেই এ গেমের যাত্রা শুরু করেছিলেন জশ ওয়ার্ডল। মূলত নিজের সঙ্গীর জন্য গেমটি তৈরি করলেও এর জনপ্রিয়তা দেখে এটি তিনি উন্মুক্ত করে দেন সকলের জন্য। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে, কোন ধরনের নিবন্ধন পদ্ধতি ছাড়াই যে কেউ গেমটি খেলতে পারেন। গেমটিতে পাঁচ অক্ষরের একটি ইংরেজি শব্দ খুঁজে পেতে হবে খেলোয়াড়কে। এ শব্দটি ‘ওয়ার্ডল’ থেকে প্রতিদিন ঠিক করা থাকবে। যদি খেলোয়াড়ের অনুমান করা শব্দের কোনও অক্ষর আর ওয়ার্ডলে’র দেওয়া শব্দের অক্ষর একই জায়গায় থাকে তাহলে পাঁচটি ঘরের সেই ঘরটি সবুজ হয়ে যাবে। এর মানে ওয়ার্ডলের শব্দ আর খেলোয়াড়ের শব্দ মিলে গেছে। তবে অক্ষর মিললেও ঘর না মিললে অক্ষরটি হলুদ হবে। আর অক্ষরটিও না মিললে গাঢ় ছাইরঙা হয়ে যাবে ঘরটি। এই ভাবে পাঁচটি ঘরেই সবুজ বাতি জ্বালানোর লক্ষ্যে চলতে থাকবে খেলা। তবে খেলোয়াড়রা এ সুযোগ পাবেন মাত্র ছ’বার। গেমটি খেলা যাবে powerlanguage.co.uk/wordle ঠিকানা থেকে। এ গেমটির কোন অফিসিয়াল অ্যাপ নেই। তবে গুগল প্লে কিংবা অ্যাপল স্টোর বেশ কিছু ক্লোন অ্যাপ রয়েছে। যদিও গুগল ও অ্যাপল কর্তৃপক্ষ এসব ক্লোন অ্যাপ মুছে ফেলা শুরু করেছে।
শব্দ চেনার খেলা
যে শব্দটি ওয়ার্ডল প্রতিদিন দিচ্ছে সেটি কে কত বারে চিনতে পারছেন সে তথ্যই নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছেন ব্যবহারকারীরা। এতেই অন্যরা যেমন সেখানে কমেন্ট করছেন তেমনি খেলাটিও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যদিও শুরুর দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করার অপশনটি ছিলনা বলে জানিয়েছেন নির্মাতা জশ ওয়ার্ডল। মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে ইতিমধ্যে ট্রেন্ডিংয়ে আছে #Wordle। সেখানে নিয়মিত ভাবেই প্রতিদিনের ছবিসহ তথ্য শেয়ার করছেন অনেক ব্যবহারকারী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার বিষয়ে জশ জানান, ‘গেমটি সকলের জন্য উন্মুক্ত করার পর দেখি অনেকেই টুইটারে সেটি অন্যদের জানাচ্ছে। সেটি দেখেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করার ব্যবস্থা করি।’ পুরো গেমের বিষয়ে জশ বলেন, ‘কাউকে কোন ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য না দিয়ে বা খুব বেশি সময় না দিয়েই সহজে যে কেউ গেমটি খেলতে পারেন। প্রতি রাত ১২টায় নতুন তারিখ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নতুন শব্দ যোগ হয় খোঁজার জন্য। দিনে একটিই শব্দ। আর সারাদিনে একটি শব্দের জন্যই সকলে অপেক্ষা করে থাকেন এবং এর চাহিদাও বেড়েছে’ । গেমের বিষয়ে জশ এবং পলক দুজনেই বেশ সময়ও দিয়েছেন গবেষনায়। তাঁরা জানান, ‘ইংরেজিতে পাঁচ অক্ষরের শব্দ রয়েছে প্রায় ১২ হাজার। সেখান থেকে বেছে আড়াই হাজার শব্দের একটি তালিকা করা হয়েছে। আর সেখান থেকেই প্রতিদিন একটি করে শব্দ দেয়া হচ্ছে’। দিনে একটি করে দেয়ার ফলে খেলার আরও কয়েক বছরের রসদ জমা রয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন পলক শাহ। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে ব্যাপারটা খুব মিষ্টি। জশ যে আমাকে কত ভালবাসে, তা এমন খেলা বানিয়েই ও দেখিয়েছে।’