টিম মহাকাশের নাসা জয়ের গল্প

টিম মহাকাশ

২০১৮ এর পর থেকে নিয়মিত নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের খোঁজখবর রাখছিলেন বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থী বর্ণিতা বসাক তৃষা, কুয়েট শিক্ষার্থী সুমিত চন্দের সাথে পরিচয়ের সূত্রে গড়ে তোলেন একটি দল। এরপর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) আলভী রওনক, সামির ইমতিয়াজ, শিশির কাইরী এবং বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির মমিনুল হককে নিয়ে গড়া দলের নাম রাখা হয় টিম মহাকাশ। শুরু হয় নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ জয়ের মিশন।

রিসার্চ ওয়ার্ক, রিসার্চ ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট, স্ক্রিপ্টিং, অডিও ভিজুয়াল, কোয়ালিটি চেক, ফ্রন্টএন্ড ব্যাকএন্ড ডেভেলপমেন্ট, কনটেন্ট, কম্পিউটার ডিজাইন করতে করতে ডিজাইন করা হয় ‘অ্যাডভান্সড রেগোলিথ স্যাম্পলার সিস্টেম’, যা দিয়ে মহাকাশে মুক্তভাবে উড়তে থাকা ধূলিকণা বাতাসে ভাসতে না দিয়ে একটি চেম্বারে আটকে ফেলা যাবে। নানা ধাপ পেরুনোর পর আসে অর্জনের ঘোষণা। ৮ ডিসেম্বর নাসা থেকে টিম মহাকাশকে জানানো হয় ‘বেস্ট মিশন কনসেপ্ট’ ক্যাটাগরিতে চ্যম্পিয়ন হয়েছে তারা, ১০ ডিসেম্বর রাতে যা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন নাসার সাবেক মহাকাশচারী ক্যাডি কোলম্যান।

টেকশহর এর সাথে কথোপকথনে টিম মহাকাশের দলনেতা কুয়েট শিক্ষার্থী সুমিত চন্দ বলেনঃ “বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে নাসার সাবেক মহাকাশচারী ক্যাডি কোলম্যান বলেন, তোমাদের ডিজাইন আমাদের কাছে এতটাই উদ্ভাবনী মনে হয়েছে যে এই ডিজাইন নাসা ফ্যাসিলিটিতে আমাদের মতো করে তৈরি করতে আগ্রহী।”

Techshohor Youtube

সুমিতদের ডিজাইন করা টুল, ‘অ্যাডভান্সড রেগোলিথ স্যাম্পলার সিস্টেম’ (এআরএসএস) কে বিচারকমণ্ডলী বাস্তবসম্মত এবং কার্যকর বিবেচনা করায় বিশ্বের ১৬২ দেশের প্রায় সাড়ে চার হাজার দলকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২১-এ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ।

গ্রহপৃষ্ঠকে ঢেকে রাখা ধূলিকণার আস্তরণকে বলা হয় ‘রিগোলিথ’ । এই রিগোলিথগুলো চার্জিত হওয়ার কারণে সহজেই স্পেসস্যুটসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতির গায়ে চুম্বকের মতো লেগে যায় যা স্পেসস্যুটকে নষ্ট করে দিতে পারে। এর থেকে বাঁচার উপায় খুঁজতেই কাজ করেছে এই দল।

সম্প্রতি নাসা উদ্ভাবিত রেজর রোবট রিগোলিথ কাটার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এটি দেখে উদ্যমী হয়ে ওঠে টিম মহাকাশ । থ্রিডি ডিজাইন তৈরি হয়ে গেলে ওয়েবসাইটে থ্রিডি মডেল ইন্টিগ্রেট করে তারা।

টুল নিয়ে জানতে চাইলে সুমিত বলেন, “মজার বিষয়, এখন অক্সিজেন তৈরি করা হচ্ছে এই রিগোলিথ থেকেই। এই রিগোলিথ হ্যান্ডলিং বর্তমানে নাসাসহ বিশ্বের অন্যান্য মহাকাশ গবেষণা সংস্থার জন্য মূল প্রজেক্ট হিসেবে কাজ করছে। টিম মহাকাশের আইডিয়া ছিল রোবটের পাশাপাশি রিগোলিথ হ্যান্ডলিং করার জন্য মানুষের হাতে নিয়ে কাজ করার মতো একটা টুল ডেভেলপ করা। এ কারনেই আমরা ‘অ্যাডভান্সড রিলোগিথ স্যাম্পলার সিস্টেম’ ডিজাইন করি। এই টুলের এক প্রান্তে ঘূর্ণায়মান সিলিন্ডার আকৃতির ব্লেড কাটার রয়েছে, যা ব্যাটারি পাওয়ারের মাধ্যমে ঘুরে রিগোলিথ কেটে একটি ড্রামের মধ্যে আটকে ফেলবে। পরে মহাকাশচারী চাইলে বিপরীত দিকে কাটার ঘোরালেই রিগোলিথগুলো যেকোনো জায়গায় ডিসচার্জ করতে পারবে। এই টুল ব্যবহারে মহাকাশচারীদের আর রিগোলিথ প্রক্ষিপ্ত হওয়ার মতো সমস্যায় পড়তে হবে না। পাশাপাশি আগের চেয়ে অনেক দ্রুত নমুনা সংগ্রহের কাজ করতে পারবে।“

বিশ্ব সেরা হবার পরে টিম মহাকাশ স্বপ্ন দেখছে পরোক্ষভাবে হলেও বাংলাদেশকে অন্য গ্রহের মাটিতে পৌঁছে দিতে। তাদের পরিকল্পনা, এই টুল সেট দেশে বসেই তৈরি করে নাসার মতো টুল টেস্টিং ফ্যাসিলিটির ধাঁচে ছোট ল্যাব করে সেখানে টুলটা পরীক্ষা করা এবং গবেষণাপত্র প্রকাশ করা।

*

*

আরও পড়ুন