![]() |
টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর ঃ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, “৫জি প্রযুক্তি চালুর প্রক্রিয়া সরকারের একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। ১২ বা ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যেই টেলিটকের মাধ্যমে ৫জি প্রযুক্তি চালু হবে। পরবর্তীতে তা বিস্তৃত হবে। ২০২২ সালের মধ্যে অন্য অপারেটরদেরও ৫জি নিয়ে আসতে দেখবো।”
শনিবার টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ফাইভ জি প্রযুক্তির সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে ‘ফাইভ জি: ইকোসিস্টেম ইন বাংলাদেশ এন্ড আপকামিং টেকনোলজিস’ শীর্ষক একটি ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে এই কথা বলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ।
তিনি আরও বলেন, “চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তি হবে ৫জি। আমরা এরই মধ্যে হুয়াওয়ে ও রবি’র মাধ্যমে ৫জি টেষ্ট করেছি, যা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। এর মাধ্যমেই আমরা বোঝাতে পেরেছি ৫জি প্রযুক্তি নিয়ে আমরা একচুলও পিছিয়ে থাকবো না।”
জনগনের সম্পৃক্ততা না থাকলে প্রযুক্তির সফলতা পাওয়া যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই প্রযুক্তি সম্পর্কে জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও সম্পৃক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
এছাড়াও, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার ও সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন বিটিআরসি ও ফাইভ জি গাইডলাইন কমিটির প্রধান এ কে এম শহীদুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান, রবির ভারপ্রাপ্ত সিইও এম রিয়াজ রশিদ, এএমটিওবি’র চেয়ারম্যান ও বাংলালিংকের সিইও এরিক আস, টেলিটকের এমডি মো. শাহাব উদ্দিন, হুয়াওয়ে বাংলাদেশের সিটিও কলিন শি এবং এলএম এরিকসন (বাংলাদেশ)-এর কান্ট্রি ম্যানেজার আবদুস সালাম উপস্থিত ছিলেন এবং দেশে ফাইভজি প্রযুক্তি চালুর বিভিন্ন দিক ও চ্যালেঞ্জের উপর তারা মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানের কী-নোট বক্তব্য প্রদান করেন টিআরএনবি’র সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার দে এবং সঞ্চালনা ও সভাপতিত্ব করেন টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহেদী।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, “এ বছরের মধ্যেই ঢাকা শহরে ৫জি চালুর বিষয়টি চুড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এ লক্ষ্যে রাষ্ট্রায়ত্ব মোবাইল অপারেটর টেলিটক প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। ব্রডব্যান্ড নীতিমালা তৈরির কাজ চলমান আছে। এর আগেই আমরা সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসবো এবং তাদের মতামত নেওয়া হবে।”
“ফাইভজি ইস্যুতে বিটিআরসি এরই মধ্যে অপারেটর, টেলিকম খাত সংশ্লিষ্ট এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে। ” বলে জানান বিটিআরসি’র কমিশনার ও ফাইভজি গাইডলাইন কমিটির প্রধান এ কে এম শহিদুজ্জামান ।
এ প্রসঙ্গে রবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অ্যাক্টিং সিইও) এম রিয়াজ রশিদ বলেন, “ফাইভজি হতে চলেছে পরবর্তী টেলিকম সেবার মান নির্ধারক। এক্ষেত্রে শুধু বিটিআরসি কিংবা অপারেটরগুলো এককভাবে সুফল বয়ে আনতে পারবে না। সকলের সমন্বিত চেষ্টার প্রয়োজন আছে। কারণ ফাইভজির সুফল পেতে প্রযুক্তি, স্পেকট্রামের পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
ফাইভজির সুফল পেতে প্রযুক্তি, ডিভাইস, ফাইবার, টাওয়ার অবকাঠামো ও স্পেকট্রাম একে অপরের পরিপূরক। ফাইভজি নিশ্চিতে কতটা সুলভে স্পেকট্রাম বরাদ্দ করা সম্ভব হবে, সে বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে বলে উল্লেখ করেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান । টিআরএনবি’র এ আয়োজন খুবই উৎসাহদায়ক এবং সময়োপযোগী বলেও প্রশংসা করেন তিনি ।
ওয়েবিনারে এমটবের চেয়ারম্যান ও বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী এরিক কর্মকর্তা (সিইও) এরিক অস বলেন, “ফাইভ জি প্রযুক্তিকে প্রয়োগের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা প্রয়োজন। তাই, ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে স্পেকট্রাম নীতি সঠিকভাবে পর্যালোচনা করতে হবে।”
টেলিটকের এমডি মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, “আমরা এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ফাইভ জি চালু করতে চেষ্টা করছি। দেশে ফাইভ জি নিশ্চিতের জন্য আমাদের ডিভাইস ও হ্যান্ডসেটের সক্ষমতা এবং উচ্চমানের ফাইবার প্রয়োজন। এছাড়াও, ফোর জি’র তুলনায় ফাইভ জি’র স্পেকট্রাম সক্ষমতার হার বেশি। যেখানেই ফাইভ জি সংযোগের প্রয়োজন হবে, আমরা সেখানে পৌঁছে যাব এবং স্মুথ নেটওয়ার্ক স্থাপন করব।”
হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সিওও তাও গুয়াংয়াও বলেন, “ফোর জি জীবন বদলে দিয়েছে, ফাইভ জি সমাজ বদলে দিবে। ফোর জি ও এর আগের নেটওয়ার্কগুলো যা করতে পারেনি, ফাইভ জি সেগুলো করার ক্ষমতা রাখে। ”
“ফাইভ জি’র জন্য মূলত ১৮’শ থেকে ২১’শ ফ্রিকোয়েন্সি প্রয়োজন। আমাদের ডাইন্যামিক স্পেকট্রাম শেয়ারিং’র জন্য যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আমরা বিআরটিসি’র লাইসেন্সের জন্য অপেক্ষা করছি এবং ফাইভ জি সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় সকল নেটওয়ার্ক ও প্রযুক্তি বাস্তবায়নে উন্মুখ হয়ে রয়েছেন বলে জানান এলএম এরিকসন (বাংলাদেশ)-এর কান্ট্রি ম্যানেজার আবদুস সালাম ।
অনুষ্ঠানের কী-নোট স্পিকার ও টিআরএনবির সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার দে বলেন, “২০২৫ সালের মধ্যে প্রতিটি অ্যাপ্লিকেশন ফাইভ জি’র (ওয়্যারলেস রোবট, গাড়ি, পরিবহন ও স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং) উপর নির্ভরশীল থাকবে। ২০২৫ সালের মধ্যে আমাদের জীবনযাত্রা ফাইভি জি কেন্দ্রিক হয়ে উঠবে। তাই, ব্যবহারকারীদের সেরা অভিজ্ঞতা দিতে ও সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের আইসিটি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।”
টিআরএনবির প্রেসিডেন্ট রাশেদ মেহেদী বলেন, “বিটিআরসি বাংলাদেশে ফাইভ জি নেটওয়ার্কের জন্য একটি নির্দেশিকা তৈরি করছে। আশা করছি যে, আমরা এই বছরের মধ্যে ফাইভ জি নেটওয়ার্ক চালু করতে পারব।”
অনুষ্ঠানে সরকারের নিকট টেলিকম অপারেটরদের চ্যালেঞ্জগুলোকে বিবেচনায় রেখে বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও ফাইভজি প্রযুক্তি গ্রহণকে ত্বরান্বিত করতে একটি শিল্প-বান্ধব নীতি কাঠামো তৈরির আহ্বান জানানো হয় ।
আরও পড়ুন