![]() |
টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : সেবা গ্রহীতা হতে বকেয়া বিল আদায়ে এবার কঠোর হয়েছে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল)।
বর্তমানে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ও ৩২টি বেসরকারি টেলিভিশন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে সম্প্রচারে রয়েছে। ডিটিএইচ সেবাও চলছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ দিয়ে।
নোটিশ দিয়ে পাওনা না পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে এসএটিভি ও চ্যানেল নাইনের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় বিএসসিএল। পরে এসএটিভি বিল পরিশোধ করে সম্প্রচারে ফিরলেও চ্যানেল নাইন শুক্রবার দিবাগত রাত পর্যন্ত সম্প্রচারে ফেরেনি।
উৎক্ষেপণের পর ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর হতে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের সব টেলিভিশন চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে সম্প্রচার কার্যক্রম শুরু করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওই দিন সবগুলো টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) চুক্তিপত্র হস্তান্তর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
এখন পর্যন্ত যে পরিমান ক্যাপাসিটি বিক্রি হয়েছে তাতে মাসে ১০ কোটি টাকার বেশি আয় হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ হতে।
এর ফলে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) এখন বছরে ১২৫ কোটি টাকার বেশি আয় নিশ্চিত করেছে।
বিসিএসসিএল ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বুঝে পাওয়ার পর এ পর্যন্ত অত্যাধুনিক এই স্যাটেলাইটটির ২৬ শতাংশ ক্যাপসিটি বিক্রি করেছে।
আরও ১০ শতাংশ বিক্রির প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। তাছাড়া এর বাইরে আরও ৬৪ শতাংশ ক্যাপাসিটি তারা পরবর্তীতে বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে।
সরকারি এই কোম্পানিটি জানিয়েছে, বাকি তিন চতুর্থাংশ থেকে যদি তারা মাসে মাত্র ১৫ কোটি টাকাও আয় করতে পারেন তাহলেও মাত্র নয় বছরের মধ্যে এই প্রকল্পের জন্যে ব্যয় হওয়া সরকারের পুরো খরচের টাকা উঠে আসতে মাত্র নয় বছর সময় লাগবে।
একটি স্যাটেলাইটের মেয়াদ সাধারণত ১৫ বছরের হয়।
এর আগে যখন পরীকল্পনা করা হয় তখন আট বছরের মধ্যে খরচের টাকা উঠে আসবে বলে হিসেব ধরা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বজুড়েই স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইথের দাম কমেছে। তাতে করে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তাদের খুব বেশী আয় করার সম্ভাবনা নেই।
তারপরেও নেপালের একটি ডিটিএইচ কোম্পানি এবং ফিলিপিনের অপর একটি কোম্পানি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ থেকে ৯টি ট্রান্সপন্ডার কেনার আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর হাতে সি ব্যান্ড এবং কেইউ ব্যান্ড মিলিয়ে সাকুল্যে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে।
কোম্পানিটি বলছে, দেশের মধ্যেই অনেক বেশী চাহিদা রয়েছে। আর সে কারণে দেশের বাজারকে প্রাধান্য দিয়েই তারা পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর প্রথম ক্রেতা ছিল বাংলাদেশ টেলিভিশন। তারা সি ব্যান্ড এবং কেইউ ব্যান্ড মিলিয়ে ১ দশমিক ৫০ ট্রান্সপন্ডার ভাড়া দিয়েছে বিসিএসসিএল-এর কাছ থেকে। এখান থেকে বছরে বিসিএসসিএলের আয় ১৭ কোটি টাকা।
তাছাড়া ৩২টি বেসরকারি টেলিভিশনগুলো সি ব্যান্ড থেকে ৫ ট্রান্সপন্ডার এবং কেইউ ব্যান্ড থেকে নিচ্ছে আরও ৪ ট্রান্সপন্ডার ক্যাপাসিটি। আর এখান থেকে কোম্পানিটির আয় হবে বছরে ৬০ কোটি টাকার বেশি।
তবে টাকার অংকে এককভাবে সবচেয়ে বড় ক্রেতা বেক্সিমকো কমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের ডিটিএইচ আকাশ। তাদের কাছ থেকে বিসিএসসিএল কতো টাকা আয় করবে সেই অংশ প্রকাশ না করলেও সেটি প্রায় আরও ৪৫ কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
এর বাইরে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে বছরে তিন কোটি টাকা আয় হবে স্যাটেলাইট কোম্পানির। সেবা নেয়ার মধ্যে রয়েছে মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ও ।
২০১৮ সালের ১২ মে বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে সফলভাবে উক্ষেপণ করা হয় দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট।
উৎক্ষেপণের ৬ মাস পর ৯ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ফরাসি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থ্যালেস অ্যালেনিয়ার কাছ থেকে এর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্ব বুঝে পায় বাংলাদেশ।
এখন গাজীপুরের তেলিপাড়া ও রাঙামাটির বেতবুনিয়া থেকে দেশের প্রকৌশলীরা নিয়ন্ত্রণ করছে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট।
দেশের উপকূলীয় দ্বীপ ও দুর্গম অঞ্চলগুলোতে টেলিযোগাযোগ সেবা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা ও সাইবার নিরাপত্তায় নিজস্ব স্যাটেলাইট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
প্রথম স্যাটেলাইটকে আরও ব্যবসা সফল করার পাশাপাশি সরকার দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণেও ইতিমধ্যে পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে।