ডিজিটাল বাংলাদেশের এক যুগ

মোস্তাফা জব্বার। ফাইল : ছবি

মোস্তাফা জব্বার, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী : ২০২০ সালে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার একযুগ বা ১২ বছর পার করলাম। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘোষণা প্রদান করেন। সেই ঘোষণাটি এখন বস্তুত আমাদের রাষ্ট্রস্বত্ত্বার অংশ।

২০১৭ সালে এই দিনটি দিনটি তথ্যপ্রযুক্তি দিবস হিসেবে পালন করার সরকারি সিদ্ধান্ত হয় এবং তা পালিত হয়। ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর মন্ত্রীসভা আমাদের প্রস্তাবে এর নাম পরিবর্তন করে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস হিসেবে পরিবর্তন করে। সেই মোতাবেক গত ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস পালিত হয়।

২০১৮ সালে ডাক, টেলি যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে পালিত এই দিনটির প্রতিপাদ্য ছিলো “ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা”।

Techshohor Youtube

জাতীয় নির্বাচনের নির্বাচনী আচরণ বিধি মেনে চলার জন্য দিনটির অনেক আয়োজন অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। ঢাকাসহ দেশব্যাপী র‌্যালী আয়োজিত হতে পারেনি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত দিবসটির উদ্বোধন করেন। তার সাথে আমি এবং স্থপতি ইয়াফেস ওসমানসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলাম। দিনটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো ডিজিটাল বাংলাদেশ এর ১১তম জন্মদিনে ১১টি ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্মাননা প্রদান। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, জনাব এইচটি ইমাম, সজীব ওয়াজেদ জয়, মোস্তাফা জব্বার, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, নূহ উল আলম লেনিন, বিটিআরসি, এটুআই, হাইটেক পার্ক, ডিএমপি ও ওয়ালটনকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। পুরষ্কারপ্রাপ্তদের প্রায় সবাই ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার স্বপ্নের প্রথম সিড়িতে পা রাখা মানুষ। ২০১৯ সালে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের পাশাপাশি ডাক ও টেলি যোগাযোগ বিভাগ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিভাগ উদযাপন করেছে। ২০২০ সালেও করোনার মাঝে ডাক ও টেলি যোগাযোগ বিভাগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ দিনটি সীমিতভাবে পালন করে। ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলার আয়োজন করা হয়।

 

বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তর: বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তর, তার জন্য প্রণীত নীতিমালা, আমাদের অর্জন ইত্যাদি ছাড়াও আমি নিজে বিষয়টি একটু ভিন্ন মাত্রায় দেখতে চাই। বস্তুত আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রযুক্তি ও জীবনধারায় পেছনে থাকার বদলে দুনিয়াকে ডিজিটাল যুগে নেতৃত্ত দেয়া। আমাদের জন্য স্বপ্ন হচ্ছে ২০২০ সালের মুজিব বর্ষ, ২০২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী, ২০৩০ সালে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা ও ২০৪১ সালের সুখী সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশের স্বপ্ন, এমনকি ২১০০ সালের বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।

এখনকার সময়ে অবস্থান করে ২১০০তো দূরের কথা ৪১ সালের অবস্থাটি আমাদের জন্য আন্দাজ করাও দুরুহ। এমনকি ২১ সালে আমরা কেমন পৃথিবীতে বাস করবো সেটিও এখনই অনুমান করা কঠিন। তবুও আমরা কিছু মৌলিক ও কৌশলগত বিষয় চিহ্নিত করে একটি কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা তৈরি করছি। বলার অপেক্ষা রাখেনা এর সবই পরিবর্তনশীল। ২১, ৩০, ৪১ ও ২১০০ এর লক্ষ্যটা স্থির রেখে সময়ে সময়ে এর আনুসঙ্গিক বিষয়াদি আপডেট করতে হচ্ছে। যেসব মৌলিক উপাদান আমাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবে সেগুলোর মাঝে রয়েছে দেশের সকল মানুষের জন্য ডিজিটাল সংযুক্তি, ডিজিটাল যুগের জন্য মানবসম্পদ উন্নয়ন, ডিজিটাল সরকার প্রতিষ্ঠা ও ডিজিটাল শিল্পখাতের বিকাশ কিংবা ডিজিটাল জীবনধারা গড়ে তোলা। আমরা মনে করি এই স্বপ্নগুলো পূরণ হলে আমাদের জনগণ একটি ডিজিটাল জীবনধারায় বসবাস করবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ যে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বা সৃজনশীল অর্থনীতি গড়ে তোলার প্লাটফরম রচনা করবে সেটিও আমরা ভাবছি। আমরা দেশটিকে ডিজিটাল শিল্পবিপ্লব, সৃজনশীল অর্থনীতি, মেধাভিত্তিক শিল্পযুগ বা সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অন্তত তিনটি সময়কালের লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছি।

২১ সালে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করছি বলেই রূপকল্প ২০২১ নির্ধারণ করা হয়েছে। সাম্প্রতিককালে আমরা স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরকে ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শত বার্ষিকীর সাথে যুক্ত করেছি বলে আমাদের সার্বিক স্বপ্নটি ২০২০-২১ সালকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। সেই সময়কে কেন্দ্র করে আমাদের যাত্রাপথও আমরা চিহ্নিত করেছি। সেই পথচলা আমাদের অব্যাহত রয়েছে। তবে এখন সময় হয়েছে একুশ সালের পরের ভাবনাও ভাববার। বিশেষ করে সাম্প্রতিককালে বিশ্বসভ্যতার আগামীর আকাক্সক্ষা, প্রযুক্তির অসাধারণ অগ্রগতি ও বিকাশ এবং সামগ্রিকভাবে মানব সভ্যতার ডিজিটাল রূপান্তর আমাদেরকে সামগ্রিক প্রেক্ষিতটাই নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।

ক) এক যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশের অর্জনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ :

১) ২০২১ সালে গড়ে তোলার ডিজিটাল বাংলাদেশ তার আগেই সুষ্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। বিশেষত করোনাকালে সারা দেশের সকল স্তুরের মানুষ ডিজিটাইজসনের সুবিধাসমূহ কাজে লাগিয়ে জীবন সচল রেখেছে। আমরা এখন হয়তো ভাবতেই পারছিনা যে ডিজিটাল প্রযুক্তি না থাকলে আমাদের সকল স্তরের জীবন ধারণ কেমন হতো।

২) ৩-জি মোবাইল প্রযুক্তির পর দেশে ৪-জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার বিস্তৃত হয়েছে। মোবাইল প্রযুক্তিকে আরও সুরক্ষিত করতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধিত হয়েছে। সহসাই এনইআইআর চালু করে সিম ও মোবাইল সেট ব্যবস্থাপনা পূর্ণাঙ্গভাবে ডিজিটাল করা হচ্ছে।

৩) ৫ হাজার ৭৩৭টি ডিজিটাল সেন্টার এবং ৮২০০ ডিজিটাল ডাকঘরের মাধ্যমে জনগণকে ৬০০ এরও বেশি ধরনের ডিজিটাল সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

৪) ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অপটিকেল ফাইবার সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

৫) প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল, হাওর, বিল চর, পাহাড়ি, উপকূলীয় ও দ্বীপ এলাকায় মোবাইল ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত হচ্ছে।

৬) দেশে মোবাইল সিম গ্রাহক ১৭ কোটির ওপরে । ইন্টারনেট গ্রাহক ১১ কোটিতে পৌছেছে।

৭) ২৫ হাজার ওয়েবসাইট নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েব পোর্টাল ‘তথ্য বাতায়ন’ চালু করা হয়েছে যা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়েছে।

৮) সারাদেশে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের পাশাপাশি স্মার্টকার্ড প্রদান করা হয়েছে।

৯) মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট চালু করা হয়েছে। এরপর ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে।

১০) ডিজিটাল অপরাধ দমনে ও ডিজিটাল নিরাপত্তা বিধানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে। এটির প্রয়োগও করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি স্থাপিত হয়েছে ।

১১) মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে মহাকাশ বিজ্ঞানের যুগে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর প্রকৃতি নির্ধারণের পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে।

১২) লার্নিং আর্নিং, শি পাওয়ার, হাইটেক পার্ক, বিসিসি, বিআইটিএম, এলআইসিটি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় প্রশিক্ষণ দিয়ে লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতীকে ডিজিটাল যুগের উপযোগী মানব সম্পদে পরিণত করা হয়েছে ও কর্মসংস্থান করা হয়েছে। এটি অব্যাহত চলমান প্রক্রিয়া

১৩) তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মাত্র ২৬ লক্ষ ডলারের রপ্তানী এখন ১ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। ডিজিটাল শিল্পখাতকে কর সহায়তা ও নগদ সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

১৪) দেশে ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন ও রপ্তানী শুরু হয়েছে। মোবাইল ফোনের বাজারের শতকরা ৫২ ভাগ দেশে উৎপাদিত হয়। মোবাইল ও ল্যাপটপ রপ্তানী হয় ।

১৫) ডিজিটাল-কমার্স নীতিমালা ১৮, জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা ২০১৮ ও জাতীয় টেলিকম নীতিমালা ২০১৮ প্রণীত হয়েছে। মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি গাইডলাইন, সিগনিফিকেন্ট মার্কেট প্লেয়ার গাইডলাইন, ইনফ্রাস্ট্রাকচার গাইডলাইন, কোয়ালিটি অব সার্ভিস গাইডলাইন, আইএসপিএবি গাইডলাইন প্রণীত হয়েছে। টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এর অনুসারে টাওয়ার তৈরি শুরু হয়েছে।

১৬) ফোর টায়ার ডাটা সেন্টার চালু হয়েছে।

১৭) সি-মি-উই-৬ এর সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। প্রকল্পটিও অনুমোদিত হয়েছে। ২৪ সালে সেটি চালু হবে।

১৮) ডিজিটাল শিল্পযুগের ৫টি প্রযুক্তির কৌশলপত্র প্রণীত হয়েছে।

খ) ২৪-এর লক্ষ্যমাত্রা :

১) ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০২০ সালের মুজিব বর্ষ, ২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও ২০৩০ সালের এসডিজি, ৪১ সালের জ্ঞানভিত্তিক সমাজের লক্ষ্য পূরণ এবং ২১০০ সালের বদ্বীপ পরিকল্পনার পথে এগিয়ে যাওয়া।

২) ২০২১-২৩ সালের মাঝে ফাইভ-জী চালু করা। দেশের প্রতিটি মানুষকে ৪জির আওতায় আনা। ৫জির সূচনা ও সম্প্রসারণ। ফাইভ জির সাথে সংশ্লিষ্ট সকল প্রযুক্তির বিকাশ ঘটানো। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রেবোটিক্স, বিগ ডাটা, ব্লক চেইন, আইওটিসহ ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির বিকাশ ঘটানো। ৩) ই পাসপোর্ট এবং ই-ভিসা চালু করা ।

৪) সরকারের সম্পূর্ণ ডিজিটাল রূপান্তর করা ও সরকারের সকল সেবা জনগণের হাতের নাগালে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পৌছানো।

৫) শিক্ষার সম্পূর্ণ ডিজিটাল রূপান্তর। শিক্ষার সকল কনটেন্ট ডিজিটাল করা, ডিজিটাল ক্লাশরুম, ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা ছাড়াও প্রাথমিক স্তরসহ সকল স্তরের শিক্ষক প্রশিক্ষণ দেয়া। প্রাথমিক স্তরসহ সকল স্তরে প্রোগ্রামিং ও তথ্যপ্রযুক্তি অবশ্যপাঠ্য করা।

৬) অর্থনীতি সম্পূর্ণ ডিজিটাল করা। সৃজনশীল-জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশ ঘটানো।

৭) শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল যুগের উপযোগী মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া ও দেশ বিদেশে কর্মসংস্থান করা।

৮) প্রতিটি বাড়ি ও প্রতিটি মানুষকে সংযুক্তির আওতায় আনা। দ্বীপ, ছিটমহল, হাওর, পাহাড় ও পার্বত্য অঞ্চলসহ সর্বত্র সকল মানুষের জন্য ডিজিটাল সংযোগ প্রদান করা।

৯) টেলিকম আইন, আইএলটিডিএস নীতিমালাসহ সকল নীতিমালা আপডেট ও প্রয়োজনীয় আইন, নীতিমালা গাইডলাইন প্রণয়ন।

১০) তথ্যপ্রযুক্তির সফটওয়্যার, সেবা ও ডিজিটাল যন্ত্রের রপ্তানী ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা।

১১) দেশে ডিজিটাল পণ্যসহ সকল উচ্চপ্রযুক্তির পণ্য উপাদনের জন্য সকল সহায়ক ব্যবস্থা নেয়া।

১২) বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ২ উৎক্ষেপণ এবং সাবমেরিন ক্যাবল ৩ স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া।

১৩) একটি পরিচিতি নাম্বারের আওতায় প্রতিটি নাগরিকের পরিচিতি নিশ্চিত করাসহ সরকারের সকল সেবা সমন্বিত করা।

১৪) সামরিক বাহিনী, আইন শৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনীসহ সকলকে ডিজিটাল সক্ষমতা প্রদান করা এবং জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা ও ডিজিটাল যুদ্ধ মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জন করা হবে।

১৫) সকল নাগরিকের ডিজিটাল নিরাপত্তা বিধান করা। নগর ও গ্রামগুলোকে ডিজিটাল নগর ও ডিজিটাল গ্রামে পরিণত করা । এমনকি দ্বীপ ও হাওরকেও ডিজিটাল করা।

১৬) কৃষি-শিল্প, বাণিজ্য, জ্বালানী ও বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসহ জীবনের সকল খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রয়োগ করা। এজন্য সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করা।

১৭) ডিজিটাল-কমার্স নীতিমালা, জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা ১৮ এবং টেলিকম নীতিমালা ১৮ বাস্তবায়ন।

১৮) তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল চালু করা।

ডিজিটাল বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ : আমি মনে করি ২০২১ সালের পরবর্তী জ্ঞানভিত্তিক সমাজ, ডিজিটাল শিল্প বিপ্লবের দেশ বা উন্নত বাংলাদেশ কিংবা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন হবে দেশটির সম্পূর্ণ ডিজিটাল রূপান্তর। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে এখন থেকে সমাজ-সভ্যতার অগ্রগতির সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো ডিজিটাল প্রযুক্তি। আমরা এই প্রযুক্তির সমষ্টিকে ডিজিটাল শিল্প বিপ্লব, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, সোসাইটী ৫.০, ৫জি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, ব্লক চেইন, বিগডাটা বা অন্য যে কোন নাম বা প্রযুক্তি হিসেবেই চিনিনা কেন সকল অগ্রগতির প্রাথমিক নিয়ামক হচ্ছে ডিজিটাল রূপান্তর। বাংলাদেশের এই ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য আপাতত আমাদেরকে কয়েকটি বড় কৌশল নিয়ে কাজ করতে হবে। বর্তমানের ভাবনায় এসব কৌশল আমাদেরকে ২০২০-২১ সাল পার করে দিতে পারে। তবে নতুন প্রেক্ষিত ও নতুন প্রযুক্তির সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য এই চ্যালেঞ্জগুলোকে পরিবর্তনশীল করতে হবেই।

আমাদের আপাত চ্যালেঞ্জগুলোগুলো হলো ১) শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর ও ডিজিটাল দক্ষতাসম্পন্ন মানবসম্পদ উন্নয়ন, ২) সরকারের ডিজিটাল রূপান্তর ও জনগণের সকল সেবা ডিজিটালকরণ ও তাদের হাতের নাগালে পৌছানো ৩) শিল্প-বাণিজ্য তথা অর্থনীতির ডিজিটাল রূপান্তর ৪) ডিজিটাল সংযুক্তি ৫) ডিজিটাল জীবনধারা এবং বাংলাদেশকে জন্মের প্রতিজ্ঞায় স্থাপন করা।

প্রথম, সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে ডিজিটাল শিল্পবিপ্লব বা জ্ঞানভিত্তিক সমাজের উপযোগী মানব সম্পদ সৃষ্টি নিয়ে। আমরা এজন্য শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। অতি সাধারণভাবেও যদি আমরা এই বিষয়টি পর্যালোচনা করি তবে দেখতে পাবো যে শিক্ষার বিষয়টি এখনও ঔপনিবেশিক স্তরেই রয়ে গেছে। এর পাঠদান পদ্ধতি, পাঠক্রম, শিক্ষক প্রশিক্ষণ সকল ক্ষেত্রেই যুগান্তকারী রূপান্তর দরকার। ডিজিটাল বাংলাদেশ এই ভাবনাটিই এই খাতে প্রতিফলিত হয়নি। যদিও ২০২৩ সাল থেকে শিক্ষার পরিবর্তনের কথা আমরা বলছি তবুও বিশেষে করে যে খাতটির বিশেষজ্ঞরাই ডিজিটাল রূপান্তরের বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেন না তারা কতোটা সামনে দেখতে পাবেন সেই শঙ্কাতো রয়েই গেছে।

পরের চ্যালেঞ্জটি হলো সরকারের ডিজিটাল রূপান্তর বা একটি ডিজিটাল সরকার প্রতিষ্ঠা বিষয়ক। এর আওতায় সরকার পরিচালনা পদ্ধতি ডিজিটাল করা ছাড়াও জনগণের কাছে সকল সংস্থার সকল সেবাকে ডিজিটাল উপায়ে উপস্থাপন করার বিষয়টিও রয়েছে।

তৃতীয় চ্যালেঞ্জটি মূলত শিল্প-বাণিজ্য ও অর্থনীতির ডিজিটাল রূপান্তর। শিল্প-কল-কারখানা-ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনীতির সকল ধারার ডিজিটাল রূপান্তর এর প্রধান উদ্দেশ্য। সামগ্রিকভাবে এর উদ্দেশ্য একটি ডিজিটাল, সৃজনশীল বা জ্ঞানভিত্তিক অর্র্থনীতিও গড়ে তোলা।

চতুর্থ চ্যালেঞ্জটি হলো জনগণকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংযুক্ত করা।

পঞ্চম চ্যালেঞ্জটি হলো চারটি চ্যালেঞ্জের সম্মিলিত রূপ যা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার আদর্শিক স্বপ্নপূরণ বা একটি পরিপূর্ণ ডিজিটাল-জ্ঞানভিত্তিক সাম্য সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্ন পূরণ। একই সাথে একটি ধর্মভিত্তিক জাতীয়তা ও সাম্প্রদায়িক চেতনার বিপরীতে একটি আধুনিক ভাষাভিত্তিক জাতি রাষ্ট্র পূর্ণাঙ্গভাবে গড়ে তোলার স্বপ্ন এটি।

লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার-এর জনক। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী।

*

*

আরও পড়ুন