![]() |
আল-আমীন দেওয়ান, টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : দেশে ফাইভজি চালুর পরিকল্পনায় চীন-আমেরিকা-ইউরোপের লড়াইয়ে কৌশলী ও নিরাপদ পথ খুঁজছে সরকার।
যেখানে প্রযুক্তি বিশ্বের ব্যবসায়িক রাজনৈতিক বিধিনিষেধে বাংলাদেশের ডিজিটাল ভিশন যেন কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয় ।
ফাইভজি পরীক্ষাকারী বিশ্বের প্রথম কয়েক দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। ২০১৮ সালের দিকে বাংলাদেশ যখন ওই পরীক্ষা চালায় তখন প্রযুক্তি বিশ্বে শক্তিশালী হাতেগোনা কিছু দেশ মাত্র ফাইভিজি পরীক্ষানিরীক্ষা করছিল।
ইতোমধ্যে সরকার পরিকল্পনা নিয়েছে প্রথম দফায় ২০২১ সালের শুরুতে ঢাকায় ফাইভজি চালু করে ওই বছরেই সব বিভাগীয় শহরগুলোতে সেবা সম্প্রসারণ করার।
এরপর ২০২৩ সালের মধ্যে সব জেলা শহর এবং ২০২৬ সালের মধ্যে সব উপজেলা, গ্রোথ সেন্টার বা বড় হাটবাজার, বিশ্বরোড ও রেলে ফাইভজি সেবা দেয়া হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার টেকশহরডটকমকে বলছেন, ফাইভজি নিয়ে সারা দুনিয়াতে একটা লড়াই রয়েছে। এ লড়াই একটা বড় ধরনের লড়াই। চায়না ভার্সেস আমেরিকা এবং ইউরোপ। এই লড়াইয়ের মধ্যে বাংলাদেশের একটি নিরাপদ রাস্তা খুঁজে বের করতে হবে। বাংলাদেশ এমন কোনো রাস্তায় যেতে চায় না যেখানে গিয়ে কানাগলিতে ঢুকে পড়ে।
‘ ফাইভজির যে কমিটি রোডম্যাপ তৈরি করছে তারা সামগ্রিকভাবে বিষয়গুলো বিবেচনা করছে। রোডম্যাপের রিপোর্ট চূড়ান্ত হলে পলিসি মেকিংয়ের কাজ করা হবে। ফাইভজি গ্লোবাল ওয়্যারে কী করবো তা অনেকগুলো ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করবে। অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক কী, বিষয়টি ওই পর্যায় পর্যন্ত বিশ্লেষণ হবে’ বলছিলেন মন্ত্রী।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ফাইভজি স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন যখন শেইপের মধ্যে আসবে তখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সাধারণত টেকনোলজিক্যালি সুপিরিয়র ও দামে সাশ্রয়ী যারা তাদের ইগনোর করা যাবে না। আমাদের এমন একটা অবস্থার মধ্যে যেতে হবে যেন আমরা শ্যামও রাখতে পারি আবার কূলও রাখতে পারি।
২০২০ সালের মধ্যে ফাইভজি নিয়ে এই যুদ্ধ একটা শেইপের মধ্যে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
তবে যাই হোক ফাইভজি নিয়ে বাংলাদেশ কার সঙ্গে যাবে তার জন্য কূটনৈতিক বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স ও বিশ্লেষণ লাগবে যে আমরা কার সঙ্গে যাবো, বলছিলেন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী।
ফাইভজি নিয়ে সরকারের খসড়া রোডম্যাপে ইতোমধ্যে দেশে ফাইভজি চালুর টাইমলাইনসহ বেশ কয়েকটি লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
২০১৯ সালে অক্টোবরে এই রোডম্যাপের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। তার আগে আগস্টে ফাইভজি নিয়ে কমিটি করে দেয়া হয়েছিল।
খসড়া রোডম্যাপে বলা হয়েছে, ২০২০ বছরের প্রথম প্রান্তিকে ফাইভজি নীতিমালা চূড়ান্ত হবে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে সরকারের অনুমোদন এবং তৃতীয় প্রান্তিকে অপারেটরগুলোকে স্পেকট্রাম দেওয়া হবে । চতুর্থ প্রান্তিকের মধ্যে দেওয়া হবে লাইসেন্স।
করোনা পরিস্থিতিতে সেই রোডম্যাপ চূড়ান্তকরণে কিছুটা দেরী হলেও এটি দ্রুতই হয়ে যাবে বলে আশা করছেন রোডম্যাপ প্রস্তুতকরণে সংশ্লিষ্টরা।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার টেকশহরডটকমকে বলছেন, ফাইজিতে যে স্পেকট্রামগুলো লাগবে তার কোনো কোনোটি ফ্রি দেয়া ছিল সেগুলো খালি করে ফেলা হয়েছে। এখন যদি ফাইভজি স্পেকট্রাম অকশন করতে চাওয়া হয় তাহলে সেই জায়গাটা মোটামুটিভাবে এগিয়েই আছে।
রোডম্যাপ তৈরিতে বিটিআরসি’র স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার হাসান মোহাম্মদ আমিনুলকে আহবায়ক করে গঠন করা কমিটি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রথম বৈঠক করে। এরপর তারা আরও চারটি বৈঠক করেছে।
নীতিমালা প্রণয়ন করতে বিভিন্ন সময়ে মূল কমিটি খসড়া তৈরি করতে আরও আটটি উপ-কমিটি গঠন করে।
ইতিমধ্যে অবশ্য ফাইভজি বিষয়ে বড় দুটি প্রযুক্তি সরবরাহকারী কোম্পানি হুয়াওয়ে ও এরিকসনের কাছ থেকে তাদের প্রেজেন্টেশন নিয়েছে কমিটি।
জানা গেছে, বর্তমানে ২.৬ গিগাহার্জ, ৩.৫ গিগাহার্জ ইত্যাদি ব্যান্ডগুলো ফাইভজি সার্ভিসের জন্য জনপ্রিয় ব্যান্ড হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সে জন্য বিটিআরসি’র কমিটি এই দুটি ব্যান্ডে ফাইভ জি চালুর বিষয়ে আলোচনা করছেন।
তবে আইটিইউ হতে ২৫০০-২৬৯০ মেগাহার্জ, ৩৩০০-৪২০০ মেগাহার্জ, ২৬-২৮ গিগাহার্জ, ৩২ গিগাহার্জ, ৩৮ গিগাহার্জ, ৪০ গিগাহার্জ এবং ৪৩ গিগাহার্জ ব্যান্ডসমূহে ফাইভজি প্রযুক্তির জন্য তরঙ্গ বরাদ্দ প্রদানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানায় নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি।
এদিকে ফাইভজি নিয়ে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের লড়াই বাড়ছে। যুক্তরাজ্যে ফাইভজি স্থাপনের ইকুইপমেন্ট (সরঞ্জাম) সরবরাহের কাজ হারিয়েছে হুয়াওয়ে।
২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর যুক্তরাজ্যের কোনো মোবাইল অপারেটর চীনা কোম্পানিটির কাছ থেকে ফাইভজি ইকুইপমেন্ট কিনতে পারবে না। ইতোমধ্যে স্থাপিত হুয়াওয়ের সব ফাইভজি ইকুইপমেন্টও ২০২৭ সালের মধ্যে সরানোর নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।
যুক্তরাজ্যের নেটওয়ার্কে স্থাপিত ইকুইপমেন্টের মাধ্যমে হুয়াওয়ে তথ্য চুরি করতে পারে এ আশংকায় ফাইভজি স্থাপনের কাজে তাদেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
হুয়াওয়ে বলছে, রাজনৈতিক প্রভাবে হুয়াওয়েকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য এটি খারাপ সংবাদ।
যুক্তরাজ্যের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে মার্কিন সচিব মাইক পমপেও। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে গত বছর হুয়াওয়েকে নিষিদ্ধ করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাজ্যে ফাইভজি নেটওয়ার্ক বিস্তার ঠেকাতে হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে লবিং করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। শুধু যুক্তরাজ্য নয় ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, এমন ভারতেও চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ের ফাইভজি কার্যক্রম ঠেকাতে নানাভাবে লবিং করে আসছে ট্রাম্প প্রশাসন।
এডি/২০২০/জুলাই২২/১৭৪০
আরও পড়ুন –
যুক্তরাজ্যে ফাইভজি স্থাপনের কাজ ফসকে গেলো হুয়াওয়ের