![]() |
টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : বিশ্ব এখন করোনাভাইরাস মহামারিতে আক্রান্ত। প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ, মারা যাচ্ছেন শত শত। এ বিষয়ে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর বিষয়ে সাধারণের মুখোমুখি হয়েছেন বিল গেটস।
গেটস জানান, তাদের ফাউন্ডেশন করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করছে। তারা চাইছেন, ১৮ মাসের মধ্যেই এটি করে ফেলতে।
বিল গেটস গত বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রেডিটের একটি সেশনে যুক্ত হয়ে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি, মাইক্রোসফটের কাজ, ভ্যাকসিন তৈরির অবস্থা, করোনা মোকাবিলার উপায়সহ নানান বিষয়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
এগুলোর মধ্যে ৩১ প্রশ্ন ও উত্তর টেকশহরের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হচ্ছে। তবে প্রশ্নোত্তর বড় হওয়ায় তা দুটি পর্বে দেওয়া হলো। এখানে থাকছে প্রথম পর্ব।
বর্তমান সঙ্কটে আপনি কোন বিষয়ে বেশি উদ্বিগ্ন? আশা দেখছেন কিসে।
বিল গেটস : বর্তমান সংকট উন্নত দেশে এখন পর্যন্ত বেশি। এসব দেশে সঠিক বা কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল ২-৩ মাস আগেই। পরীক্ষা বাড়ানো এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা দরকার ছিল। এ পদক্ষেপকে আমি শাট ডাউন বলছি। তাহলে এত বড় পরিসরে প্রার্দুভাব এড়ানো সম্ভব ছিল।
চলমান সঙ্কটের পাশাপাশি পরবর্তী অর্থনৈতিক অবস্থা বা ক্ষতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। আরও বেশি চিন্তিত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে নিয়ে, যারা উন্নত দেশের মতো এমন করে সামাজিক দূরত্ব রাখতে হিমশিম খাবে। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য হাসাপাতাল ব্যবস্থাও এসব দেশে নিম্নমানের।
এ সঙ্কটের সময় একজন আমেরিকানকে অন্য এক আমেরিকান কিভাবে সহায়তা করতে পারে?
বিল গেটস : এখানে একটি বড় বিষয় হলো আপনার কমিউনিটিকে ‘শাট ডাউন’ করে দেওয়া। তাহলে নাটকীয়ভাবে ইনফেকশন রেট কমানো সম্ভব হবে। এমনকি এর পরের ক্ষতিও কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে। কিছু মানুষ বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর্মীরা হিরোর মতো কাজ করছেন। আমাদের উচিত তাদের সহায়তা ও সমর্থন করা। তবে যে কোনো পরিস্থিতিতে আমাদের শান্ত থাকা উচিত।
করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে ১৮ মাস সময়ের কথা বলা হচ্ছে। সময় কমিয়ে আনা কতখানি সম্ভব?
বিল গেটস : এটা খুব ভালো প্রশ্ন। একটি ভ্যাকসিন তৈরির জন্য ছয় ধরনের শ্রম দিতে হয়। কেউ কেউ আরএসএ পদ্ধতির ব্যবহার করেন, যা অপ্রমাণিত। প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে না জেনেও বিপুল উৎপাদন করতে হবে। বিশ্বকে রক্ষা করতে শতকোটি ভ্যাকসিন প্রয়োজন হবে। সেগুলো নিরাপদ এবং কার্যকর কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে।
প্রথমে ভ্যাকসিনগুলো যাবে স্বাস্থ্য সেবাদাতা এবং ক্রিটিক্যাল ওয়ার্কারদের কাছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ১৮ মাসের আগে এটি ঘটতে পারে। আমরা, ডা. ফাউসি এবং অন্যান্যরা খুব সাবধানতা অবলম্বন করছি। তাই পাকা কথা দিইনি, কারণ আমরাও নিশ্চিত না। তবে কাজটি দ্রুতগতিতে চলছে।
তারপরও কার্যকর চিকিৎসা পাওয়ার টাইমলাইন?
বিল গেটস : ভ্যাকসিন দেবার আগে থেরাপিউটিক সহজে পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে যাদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা আছে, তেমন মানুষের সংখ্যা কমে যাবে। ফাউন্ডেশন একটি থেরাপিউটিক্স এক্সিলারেটর আয়োজন করেছে। আমার প্রত্যাশা এর থেকে কিছু একটা আসবে। এটা হতে পারে আন্টি ভাইরাল, আন্টিবডিস কিংবা অন্য কিছু।
একটি ধারণা, যা এখন খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে রিকভার করা ব্যক্তিদের রক্ত (প্লাজমা) ব্যবহার করে। এটির মধ্যে আন্টিবডি থাকতে পারে যা মানুষকে রক্ষা করবে। এটি যদি কাজ করে তবে খুব দ্রুত স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যান্যদের রক্ষার জন্য তা প্রয়োগ করা হতে পারে।
একজন শিক্ষিকা জানতে চান- আমার শিক্ষার্থীদের জন্য কী করতে পারি। বিশেষত নিম্ন-আয়ের শিক্ষার্থীদের, যাদের প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ নেই। তাদের আশ্বস্ত করে ইমেইল দিয়েছে। তবে শিক্ষাগত প্রভাব ছাড়াও শিক্ষার্থীদের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন।
বিল গেটস : বেশ কয়েক মাস স্কুল বন্ধ থাকবে-এটি একটি বড় সমস্যা। অনেক শিক্ষক দূর থেকে শিক্ষা দেবার কাজটি করছেন। এতে আমি খুবই আপ্লুত। কিন্তু এটি সবার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য অনেক অনলাইন রিসোর্স প্রয়োজন, যেমন খান একাডেমি, কমনলিট, ইলুসট্রেটিভ ম্যাথমেটিক্স, জিয়ার্ন ও স্কলাস্টিক।
কমক্যাস্ট এবং অন্যান্য ইন্টারনেট প্রোভাইডাররাও স্পেশাল প্রোগ্রাম করছে তাদের সহায়তার জন্য। মাইক্রোসফটসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ডিভাইস দিয়ে সহায়তা করছে। দুঃখজনক হলেও সত্য নিম্ন আয়ের শিক্ষার্থীরা এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এ অবস্থায় চীনের পদক্ষেপ কেমন দেখছেন। তাদেরকে ১০-এর রেটিংয়ে কত দেবেন?
বিল গেটস : তারা ২৩ জানুয়ারির পর যখন বুঝতে পারলো এটি কতটা ভয়ংকর তখন বড় ধরনের এবং ভিন্ন ধরনের এক সামাজিক আইসোলেশনে চলে গেছে। অবশ্যই বিভিন্ন ধরনের লোককে আইসোলেশনে নিতে খুব বেগ পেতে হয়েছে এবং কাজটি খুব কঠিন ছিল। সেজন্য তারা আজ সংক্রমণ বন্ধ করতে পেরেছে।
অন্যান্য দেশগুলো হয়তো এটি ভিন্নভাবে করবে। তবে পরীক্ষা করা এবং আইসোলেশনের বিকল্প নেই। যতদিন পর্যন্ত ভ্যাকসিন না পাওয়া যায় এটাই করতে হবে।
বিশ্বকে পরবর্তী মহামারি সম্পর্কে প্রস্তুতি নিতে কোন পদক্ষেপটি সবার আগে নেওয়া উচিত?
বিল গেটস : ২০১৫ সালে আমি এ সম্পর্কে কথা বলেছিলাম। খুব দ্রুত ডায়াগনসিস, ওষুধ ও ভ্যাকসিন তৈরির দক্ষতা থাকা দরকার। সঠিকভাবে বিনিয়োগ হলে এসব করার প্রযুক্তি এখনি রয়েছে। দেশগুলোকে এ জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
আমরা সিইপিআই বা কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ারনেস ইনোভেশন করেছি, যেখানে ভ্যাকসিন নিয়ে কিছু কাজ করা হয়েছে। কিন্তু এখানে স্থায়ীভাবে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর দক্ষতা অর্জনে আরও অর্থায়ন দরকার।
আপনি কি মনে করেন সতর্ক করার পরও বিভিন্ন দেশের সরকার এটি নিয়ে প্রস্তুতি রাখেনি?
বিল গেটস : নতুন ভাইরাস উত্থানের আশঙ্কা বাস্তবে পরিণত হওয়ার বিষয়টি কেউ অনুমানই করেনি। যদিও আমরা জানতাম যে কোনো সময় ফ্লু বা রেসপিরেটরি ভাইরাস আসতে পারে। তবে এ জন্য কোনো ধরনের ফান্ডিং ছিল না। আমাদের ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে সিইপিআই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যেখানে স্বাগত জানিয়েছি নরওয়ে, জাপান, জার্মানি ও যুক্তরাজকে। তবে যে পরিমাণ অর্থায়ন হওয়া উচিত ছিল তার চেয়ে অনেক কম বা একেবারে ক্ষুদ্র অর্থায়ন ছিল।
আমরা মূলত অগ্নিকাণ্ড ও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি এমন বিষয়েও প্রস্তুতি রাখতে হবে। সুসংবাদ হলো, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট মহামারীগুলোর জন্য একটা শক্তিশালী বায়োলজিকাল সরঞ্জাম যেমন ডায়গনসিস, চিকিৎসা, ভ্যাকসিন তৈরির ব্যবস্থা হচ্ছে।
আমিও আপনার মতো সিয়াটলে থাকি। এখানে কিন্তু পরীক্ষা খুব একটা বাড়েনি। অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে নিশ্চিত আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম। আপনি কী মনে করেন? সামাজিক দূরত্ব নাকি পরীক্ষার অভাবে এটা হয়েছে?
বিল গেটস : যুক্তরাষ্ট্রে পরীক্ষাটি এখনো সংগঠিত নয়। আমার আশা পরবর্তী সপ্তাহগুলো থেকে সরকার এটি ঠিক করে ফেলবে। ওয়েবসাইটে একটা পর্যায় পর্যন্ত রোগ শনাক্তের বিষয়টি যাচাই করতে পারবেন। এখনও বিষয়টি দ্বিধাদন্দ্বের পর্যায়ে রয়েছে। সিয়াটলেও প্রতিদিন হাজার হাজার টেস্ট হচ্ছে। কিন্তু সেটি ন্যাশনাল ট্রাকিং সিস্টেমের সঙ্গে সংযৃক্ত নয়।
যাই হোক এটারও একটা ভালো দিক আছে। এর ফলে বুঝতে পারছি আমাদের সক্ষমতা সম্পর্কে। এমনকি সামাজিক দূরত্ব তৈরির প্রয়োজনীয়তাও বুঝতে পারছি। দক্ষিণ কোরিয়া কিন্তু ইতোমধ্যে খুব ভালো কাজ করেছে। তারা একটি ডিজিটাল কন্টাক ট্রাাকিং করেছে।
কোভিড-১৯ সম্পর্কে ইম্পেরিয়াল কলেজের রেসপন্স টিমের প্রতিবেদনে ৪০ লাখ আমেরিকান মারা যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে। আপনি কি এর সঙ্গে একমত।অবিলম্বে পুরো দেশে আলাদা শেল্টার করা দরকার নয় কী।
বিল গেটস : ভাগ্যক্রমে বলা যায়, সেখানে ব্যবহার করা প্যরামিটারগুলো খুব নেতিবাচক ছিল। চীনের খুবই ক্রিটিক্যাল অভিজ্ঞতার ডেটা আমাদের কাছে আছে। তারা সবকিছু শাটডাউন করতে পেরেছে এবং এর মাধ্যমে সংক্রমণ কমানো গেছে। তারা বড় পরিসরে পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে। ফলে খুব দ্রুত তারা ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে পেরেছে।
ফলে ইম্পেরিয়াল মডেলটি এ অভিজ্ঞতার সঙ্গে মেলে না। তারা একটা ধারণা থেকে যা করেছে তা মূল বিষয় থেকে দূরে সরে গেছে। একটি গ্রুপ ইনস্টিটিউট ফর ডিজিজ মডেলিং যেখানে আমি অর্থায়ন করি, তারা এখন নিবিড়ভাবে কাজ করছে এটি নিয়ে।
পরীক্ষার বেলায় দেখা যাচ্ছে, ধনী ও বিখ্যাত ব্যক্তিরা আগে সুযােগ পাচ্ছেন। এটা কি এমন কি কিছু যা ‘বড় লোকদের জন্য সংরক্ষিত’? এটা হাইপোথিটিক্যাল নয় যে, এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে স্বাস্যসেবা সাধারণের দূরে চলে যাচ্ছে। এটা কী ভণ্ডামি নয়?
বিল গেটস : অবশ্যই আমাদের পরীক্ষা করার জন্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করা উচিত। এজন্য সিডিসি ওয়েবসাইটে মানুষ তাদের অবস্থার কথা জানাতে পারছেন এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাদের প্রায়োরিটি তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষার সুবিধা পাচ্ছেন। তবে সবার আগে স্বাস্থ্যকর্মীরা অগ্রাধিকার পাবেন। বয়স্করা প্রোয়োরিটি পাবেন। আমরা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষার এ চাহিদা মিটিয়ে দিতে পারবো। কারণ আমরা এখনো বুঝতে পারছি না কোন জিনিসটির ঘাটতি রয়েছে।
নেদারল্যান্ডস এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে যে পদ্ধতি নিয়েছে সে সম্পর্কে আপনার কী ধারণা? কারণ তারা সম্পূর্ণ লকডাউনে যাচ্ছে না।
বিল গেটস : আমি মনে করি সবচেয়ে কঠিন এবং কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বা শাট ডাউন। এটি নিশ্চিত করতে না পারলে ভাইরাস ছড়াবেই। উপচে পড়া রোগী আসবে, হাসপাতাল জায়গাও দিতে পারবে না। তাই শাট ডাউন হতে পারে একমাত্র কার্যকর পদ্ধতি।
কোনো দেশ এটি করতে না পারলে সেখানে কেউ যেতে বা আসতে পারবে না। ফলে অন্য দেশে আবারও ছাড়াবে এ ভাইরাস। তাই নেদারল্যান্ডস বা অন্য দেশ যা করছে তা বিপদের কারণ হতে পারে।
ক্লোরোকুইন বা হাইড্রোক্সাইক্লোরোকুইনের বিষয়ে বলুন।
বিল গেটস : প্রচুর পরিমাণে থেরাপিউটিক ওষুধ পরীক্ষা করা হচ্ছে। এটি অনেকের মধ্যে একটি হলেও প্রমাণিত নয়। এটি যদি কাজ করে তবে নিশ্চিত করতে হবে এর সরবরাহ যথেষ্ট হচ্ছে। কারণ এটি প্রয়োজন হবে। এ ফিগার আউট করতে আমাদের একটি গবেষণা অব্যাহত আছে।
থেরাপিউটিকের ধারণাগুলো জানতে আমাদেরও স্ক্রিনিং প্রচেষ্টা রয়েছে। এ বিষয়ে সবার আরও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া উচিত। চীন কিছু জিনিস পরীক্ষা করেছিল। তবে এখন তাদের হাতে এমন রোগী কম রয়েছে। এখন তাদের পরীক্ষার জন্য অন্য কোনো জায়গায় চলে যাওয়া দরকার।
ইন্টারনেট অবলম্বনে ইএইচ/মার্চ২১/২০২০/ ০৮৫০