![]() |
বাংলাদেশের বাজারে কী নিয়ে চ্যালেঞ্জে নোকিয়া, এশিয়া প্যাসিফিকের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারের কী পার্থক্য করে তারা, এক সময়ে বিশ্বে রাজত্ব করা ব্র্যান্ডটি নতুন করে কতটুকু অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে? এমন নানা বিষয়ে টেকশহরের মুখোমুখি নোকিয়ার প্রস্তুতকারক এইচএমডি গ্লোবালের প্যান এশিয়া প্রধান রাভি কুনওয়ার। সাক্ষাতকার নিয়েছেন আল-আমীন দেওয়ান।
প্রযুক্তির রূপান্তরের প্রতিযোগিতায় সম্রাজ্য হারিয়ে ২০১৪ সালে মাইক্রোসফটের কাছে বিক্রি হয়ে যায় নোকিয়া। বছর দু’য়েকের মধ্যে ফিনল্যান্ডের কোম্পানি এইচএমডি গ্লোবাল নোকিয়া হতে ব্র্যান্ড লাইসেন্স ও মাইক্রোসফট হতে ব্যবসা কিনে নেয়। ২০১৬ সালের শেষ দিকে নোকিয়া ফিচার ফোন এবং এক বছর পরে স্মার্টফোনও আনতে শুরু করে তারা।
আর সেই হতে মোবাইল ফোন বিশ্বে আবার শক্ত অবস্থান তৈরিতে তাদের চেষ্টা লক্ষণীয়। সেই চেষ্টার প্রায় শুরু হতেই বাংলাদেশের বাজারকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।
টেকশহর : নোকিয়া নিয়ে এইচএমডি গ্লোবালের যাত্রা মাত্র ৪ বছরের মতো । সবশেষ প্রায় তিন বছর সময়ে নোকিয়া ব্র্যান্ডে ৩০ টির মতো অ্যান্ড্রয়েন্ড ফোন বাজারে এনেছে এইচএমডি গ্লোবাল, যা সময়ের তুলনায় অনেক। এক সময়ে বিশ্ব বাজারে রাজত্ব করা ব্র্যান্ডটি নতুন করে মোবাইল বিশ্বে কতটুকু অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে ?
রাভি কুনওয়ার : নীতিগত কারণে আমরা এখানে পরিসংখ্যান উল্লেখ করছি না তবে বলতে পারি নোকিয়া ফিচার ফোন বিশ্বের এক নাম্বার স্থানে রয়েছে। স্মার্টফোনেও ভাল গ্রোথ হচ্ছে নোকিয়ার। এছাড়া সময়ের সাথে এগিয়ে ক্রমাগত সঠিক ব্যবসায়িক মডেলের মধ্যে যাচ্ছি আমরা যা সফলতার পথ দেখাচ্ছে।
টেকশহর : এশিয়া প্যাসিফিকের অন্যান্য দেশগুলোর মোবাইল ফোন বাজারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারের কোনো পার্থক্য রয়েছে ? যেমন, ইউজার এক্সপেরিয়েন্স, ডিভাইস ক্যাটাগরি বা স্টেকহোল্ডারদের নীতিগত বিষয়ের মতো কোনো বিষয়।
রাভি কুনওয়ার : বাংলাদেশের বাজারে ফিচার ফোন ক্যাটাগরিতে গ্রাহক সংখ্যার পরিধি ব্যাপক, অন্যদিকে স্মার্টফোন ক্যাটাগরিতে গ্রাহক সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। এশিয়া প্যাসিফিকের অন্যান্য বাজার হতে এটি অনন্য দিক। আর এসব সম্ভাবনার কারণে এশিয়া প্যাসিফিকে বাংলাদেশের বাজারকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে এইচএমডি। এইচএমডি ধারাবাহিকভাবে এই বাজারে বিভিন্ন দামের ফিচার ফোন ও সাশ্রয়ী স্মার্টফোন আনছে।
টেকশহর : বাংলাদেশের বাজারে ফিচার ক্যাটাগরিতে নোকিয়ার অবস্থান উল্লেখযোগ্য। কিন্তু স্মার্টফোন ক্যাটাগরিতে অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ব্র্যান্ডের তুলনায় নোকিয়া ভাল করতে পারছে না, কেনো ?
রাভি কুনওয়ার : বাংলাদেশের বাজারে যেভাবে পণ্যের মূল্য ও মূল্য কাঠামো গড়ছে তা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। মনে রাখতে হবে, আমরা অনেকগুলো ক্ষেত্রে বিশেষ মনযোগ দিয়েছি ও বিনিয়োগ করেছি যা আমাদের এগিয়ে নিচ্ছে। কোয়ালকম এবং গুগলের সঙ্গে অংশিদারিত্বে ২০২০ সালে শিগগিরই প্রিমিয়াম ক্যাটাগরির অভিজ্ঞতা দিতে আসছে নোকিয়া। ইমেজিং, ডিজাইন, ইনোভেশন ও সিকিউরিটির মতো তিনটি কৌশলগত বিষয়ে আমরা গভীর মনযোগ দিয়েছি এবং এতে বিনিয়োগ করেছি।
টেকশহর : দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানিতে সরকারের উচ্চ করারোপ রয়েছে। এটি নোকিয়া হ্যান্ডসেটের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে নিয়শ্চই। আবার অন্যদিকে গ্রে মার্কেট বা অবৈধ উপায়ে আসা হ্যান্ডসেটের দামও তুলনামূলক অনেক কম যার বাজারও কম নয়। এই দুটি বিষয়ের চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবেলা করছে এইচএমডি ?
রাভি কুনওয়ার : আমরা বাংলাদেশের বাজারের জন্য ধারাবাহিকভাবে সঠিক ব্যবসায়িক মডেল নিয়ে কাজ করছি এবং এখানে ভাল কিছু করতে সরকারের সঙ্গে রয়েছি। আসলে এই মূল্যায়নটা হয় সবসময় সঠিক ব্যবসায়িক মডেলের উপর নির্ভর করে।
আর হ্যা, গ্রে প্রোডাক্ট বা অবৈধ উপায়ে আসা পণ্যের কারণে আমরা ব্যাপক চাপে রয়েছি। একদিকে প্রত্যেক সময়ে বিভিন্ন শুল্ক ও করের হার পরিবর্তন হচ্ছে অন্যদিকে অবৈধ উপায়ে পণ্য আমদানি হচ্ছে, এটা অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলছে। এটা এই খাতের বড় সমস্যা এবং এটি হতে কীভাবে উত্তরণ হওয়া যায় তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে কাজ করছি।
টেকশহর : সর্বশেষ বাজারে আনা বা ভবিষ্যতে আনতে যাওয়া হ্যান্ডসেটগুলোতে কোন বিষয়ে উপর জোর দিচ্ছে নোকিয়া ? বিশেষ কী কারণে মানুষ নোকিয়ার প্রতি আবার আগ্রহী হবে ?
রাভি কুনওয়ার : ফিচার ফোনে প্রতিনিয়ত ইনোভেটিভ ডিজাইন, আকার-আকৃতি, স্টাইল-লেআউট ইত্যাদিতে কার্যকর উদ্ভাবন নিয়ে বিশ্বব্যাপী এগিয়ে রয়েছে নোকিয়া।
আর স্মার্টফোনে আমরা একমাত্র উৎপাদক যারা পুরো পোর্টফোলিওতে সর্বশেষ আপডেটের অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে আসতে শতভাগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর আমরা ধারাবাহিকভাবে সেই প্রতিশ্রুতি রেখে চলেছি।
আগেই উল্লেখ করেছি ইমেজিং, ডিজাইন, ইনোভেশন ও সিকিউরিটির মতো তিনটি কৌশলগত বিষয়ে আমরা গভীর মনযোগ দিয়েছি এবং বিনিয়োগ করেছি যা আমাদের উপর গ্রাহকদের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনবে।
টেকশহর : বাংলাদেশে গ্রাহক সেবায় কী কী করছে নোকিয়া ? বিশেষ করে আফটার সেলস ও ওয়ারেন্টি সার্ভিসে।
রাভি কুনওয়ার : ওয়ারেন্টি পলিসি অনুযায়ী নোকিয়াই একমাত্র যে, গ্রাহকদের ৩৬৫ দিনের রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি দিচ্ছে। যদিও এটি এখন ফিচার ফোনে পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে স্মার্টফোনে ৭ দিনের রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি এবং ১ বছরের সার্ভিস ওয়ারেন্টি রয়েছে। গ্রাহকদের সেবা দিতে সারা দেশব্যাপী নোকিয়ার নেটওয়ার্ক রয়েছে। সম্প্রতি বেশকিছু কালেকশন পয়েন্ট করা হয়েছে যেন দ্রুত সেবা দেয়া যায়।
টেকশহর : নোকিয়া হ্যান্ডসেটে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে কাজ করছে এইচএমডি, এখানে গ্রাহক এখন পর্যন্ত কোনো সুবিধা কী পেয়েছে ?
রাভি কুনওয়ার : হ্যা, নোকিয়ার ২.৩ মডেলের স্মার্টফোনে রয়েছে এআই ক্যামেরা। ব্যাটারির পাওয়ার সেভিংয়ের সুবিধা দেয়া হয়েছে এতে। হ্যান্ডসেটটিতে ডেডিকেটেড গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট বাটন ছাড়াও বায়োমেট্রিক ফেইস রিকগনিশন সুবিধা দেয়া হয়েছে। এছাড়া যুক্ত করা হয়েছে রিকমেন্ডেড শট অপশন যা সেরা ছবি বেছে দেবে।