রেডমি ৭এ : কম দামে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বাদে মিলবে সবই

রিয়াদ আরিফিন, টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : বর্তমান সময়ে স্মার্টফোনের হরেক রকম ব্যবহারকারী আছেন।

কেউবা স্মার্টফোন দিয়ে পেশাগত কাজ সেরে ফেলেন, কেউবা খেলেন হাই গ্রাফিক্স গেইম। আবার এমন অনেক ব্যবহারকারীও আছেন যারা স্মার্টফোনকে কেবলমাত্র টুকটাক ইন্টারনেট ব্রাউজিং ও কল আদান প্রদানের মধ্যেই সীমাবন্ধ রাখেন। 

শেষোক্ত ব্যবহারকারীদের কথা মাথায় রেখে শাওমি রেডমি ৭এ হ্যান্ডসেটের ভালো মন্দ নিয়ে আজকের এই রিভিউ। 

Techshohor Youtube

২ গিগাবাইট র‍্যামের স্মার্টফোনটি দেশের বাজারের শাওমি বিক্রি করছে ১১ হাজার ৪৯৯ টাকায়।

বিস্তারিত শুরু করার আগে চলুন দেখে নেয়া যাক এর ফিচার ও কনফিগারেশন।

এক নজরে শাওমি রেডমি ৭এ

  • ৫.৪৫ ইঞ্চি ১৮:৯ অনুপাতের ডিসপ্লে
  • স্নাপড্রাগন ৪৩৯ প্রসেসর
  • ২ গিগাবাইট র‍্যান ও ৩২ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ
  • ৫ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ও ১২ মেগাপিক্সেল মেইন ক্যামেরা
  • ৪ হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি
  • ২৫৬ গিগাবাইট পর্যন্ত মেমরি কার্ড ব্যবহারের সুবিধা
  • ফোরজি সুবিধাসম্বলিত ডুয়াল সিম 

প্লাস্টিক ডিজাইন 

ফোনটির ডিজাইন এই সিরিজের পূর্ববর্তী মডেল রেডমি ৬এ এর আদলেই করা হয়েছে। আগের মতই সলিড পলিকার্বনেট প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি করা হয়েছে রেডমি ৭এ। প্লাস্টিক হলেও এটি গড়নে বেশ পোক্ত ও দেখতে আকর্ষনীয়। ১৬৫ গ্রাম ওজনের ফোনটির পুরুত্ব ১০ মিলিমিটার। বড় আকারের ব্যাটারির কারণে ফোনটির পুরুত্ব কিছুটা বাড়তি। 

ফোনটির ডান দিকে দেয়া হয়েছে পাওয়ার বাটন ও ভলিউম রকার। ডান দিকে দেয়া হয়েছে ডুয়াল সিম কার্ড ট্রে ও মেমরি কার্ড স্লট। 

স্পিকার ও চার্জিং পোর্ট নিচের দিকে দেয়া হলেও ৩.৫ মিমি অডিও জ্যাক দেয়া হয়েছে একেবারে উপদের দিকে। ফোনটির পিছনের দিকে বাম কোনায় রয়েছে ব্যাক ক্যামেরা ও এলইডি ফ্ল্যাশ। তবে এতে নেই কোনো ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর। 

ম্যাট ব্লাক ও ম্যাট ব্লু- দুইটি ভিন্ন রঙে পাওয়া যাবে স্মার্টফোনটি। 

চলনসই ডিসপ্লে 

এতে দেয়া হয়েছে ১৮ঃ৯ অনুপাতের ৫.৪৫ ইঞ্চি ডিসপ্লে, যার রেজুলেশন ১৪০০*৭২০, পিক্সেল ঘনত্ব ২৯৫ পিপিআই। 

ডিসপ্লের মান বাজেট অনুযায়ী চলনসই বলা যেতে পারে। ডিসপ্লেতে সানলাইট মোড, রিডিং মোড ও নাইট মোড নামে আলাদা ফিচার যুক্ত করা হয়েছে শাওমির পক্ষ থেকে, যা ব্যবহকারীদের আলাদা এক অভিজ্ঞতা দেবে। ডিসপ্লের কালার রিপ্রডাকশন মাঝারি মানের। টাচ সেন্সিটিভিটি বেশ ভালো। 

সাদামাটা ক্যামেরা 

বাজেট ফোন হিসেবে এই ফোনের ক্যামেরা পারফরমেন্স সাদামাটা মানের বলা যেতে পারে। অর্থাৎ পারফরমেন্সকে এক কথায় খুব ভালো বলা চলে না আবার মন্দও বলা যায় না। 

এই ফোনে মূল ক্যামেরা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে সনি আইএমএক্স সেন্সর যুক্ত ১২ মেগাপিক্সেলের ব্যাক ক্যামেরা, যার অ্যাপারচার এফ২.২। আর সেলফি তোলার জন্য দেয়া হয়েছে ৫ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা। 

শাওমির অন্যান্য ফোনের মত এতেও ক্যামেরাতে ছবি তুলতে বেশ কিছু ফিচার দেয়া হচ্ছে। যেমন-এআই বিউটি, ফেসিয়াল রিকগনিশন, এইডিআর প্রভৃতি।

এই ফোনের ব্যাক ক্যামেরায় পারফরমেন্সে এগিয়ে থাকলেও ফ্রন্ট ক্যামেরা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে বিশেষ করে কম আলোতে।  

চলুন  দেখে নেয়া যাক এই ফোনের ক্যামেরায় তোলা কিছু ছবি

পারফরমেন্স ও ইউজার ইন্টারফেস 

ফোনটি চলবে শাওমি নিজস্ব কাস্টমাইজড অপারেটিং সিস্টেম এমআই ইউআইতে। এতে দেয়া হয়েছে কোয়ালকম স্নাপড্রাগন ৪৩৯ মডেলের প্রসেসর যার সর্বোচ্চ গতি ২ গিগাহার্জ পর্যন্ত। আর গ্রাফিক্স এর জন্য রয়েছে অ্যাড্রিনো ৫০৫ জিপিউ। র‍্যাম দেয়া হয়েছে ২ গিগাবাইট। 

সবমিলিয়ে এই ফোন  দিয়ে বেসিক কাজগুলো অনায়েসেই সেরে নেয়া যাবে। যেমন-কল আদান-প্রদান, টুকটাক ইন্টারনেট ব্রাউজিং, হালকা মানের গেইম ইত্যাদি। তবে এই ফোন দিয়ে ভারী কোনো কাজ, মাল্টিটাস্কিং (যেমন : এক সাথে কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়া ও চ্যাটিং অ্যাপ ও অন্যান্য প্রফেশনাল অ্যাপ চালানো) এর আশা না রাখাই ভালো।  

বাজেট অনুয়ায়ী এই ফোনের পারফরমেন্স খারাপ বলা যাবে না। চলুন দেখে নেয়া যাক স্মার্টফোনের পারফরমেন্স যাচাইয়ের মানদণ্ড হিসেবে এই ফোনের বেঞ্চমার্ক স্কোর :

স্টোরেজ ও কানেক্টিভিটি 

দেশের বাজারে এই ফোনের যে সংস্করণটি শাওমি বিক্রি করছে তাতে রয়েছে ৩২ গিগাবাইটের ইন্টারনাল স্টোরেজ সুবিধা, যা এই বাজেটের ফোনে বাড়তি একটি প্রাপ্তি। এছাড়া এই ফোনে ২টি সিমের পাশাপাশি ২৫৬ গিগাবাইট সক্ষমতা পর্যন্ত একটি মেমোরি কার্ড ব্যবহার করা যাবে। 

সর্বশেষ প্রযুক্তির ব্লুটুথ ও ওয়াওফাই সুবিধার পাশাপাশি দুটি সিমেই ফোরজি ব্যবহার করা যাবে। 

চমৎকার ব্যাটারি লাইফ 

এই ফোনের সবচাইতে ভালো দিক হলো এর ব্যাটারি ব্যাকআপ। দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি ব্যাকআপ নিশ্চিতে এতে দেয়া হয়েছে ৪ হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ার সক্ষমতার ব্যাটারি। একবার ফুল চার্জে এটি অনায়েসে দেড় থেকে দুই দিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে।

এই ফোনের সঙ্গে ১০ ওয়াট সক্ষমতার চার্জার দেয়া হয়েছে যা দিয়ে এটি ফুল চার্জ হতে সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। 

অন্যান্য ফিচার 

এই ফোনে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ফেইস আনলকিং সুবিধা দেয়া হয়েছে, তবে নেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট আনলকিং প্রযুক্তি । 

এছাড়া শাওমির দাবি অনুযায়ী এই ফোনটিকে স্প্ল্যাশ প্রুফ। অর্থাৎ হালকা মানের পানির ঝাপটায় এই ফোনের কোন ক্ষতি হবে না। 

প্যাকিজেং, দাম ও ওয়ারেন্টি 

ফোনের প্যাকেটে স্মার্টফোনটির পাশাপাশি একটি চার্জার, একটি ক্যাবল, ওয়ারেন্টি কার্ড ও সিম খোলার একটি পিন পাওয়া যাবে। 

১১ হাজার ৪৯৯ টাকা দামের ফোনটিতে এক বছরের বিক্রয় পরবর্তী সেবা দেবে শাওমি। 

এক নজরে ভালো

  • ভালো মানের ব্যাটারি ব্যাকআপ
  • শক্তিশালী গড়ন
  • সহজেই এক হাতে ব্যবহারযোগ্য

এক নজরে খারাপ

  • ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর না থাকা
  • মাঝারি মানের ক্যামেরা

আরএ/ ইএইচ/অক্টোবর ১১/ ২০১৯/ ১৬০০

২ টি মতামত

*

*

আরও পড়ুন