![]() |
রিয়াদ আরিফিন, টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : চীনা ব্র্যান্ড শাওমি গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান প্লাটফর্মে স্মার্টফোন বাজারে ছাড়ে ‘এ’ সিরিজের নামে।
এই সিরিজের সর্বশেষ মডেল এ৩ বাজারে এনেছে ব্র্যান্ডটি। স্মার্টফোনটি অনেকটাই শাওমির সিসি৯ই মডেলের মতো।
অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান ডিভাইস হওয়ায় এই মডেলে মিলবে স্টক অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম।
এ রিভিউতে ফোনটির ভালো মন্দ তুলে ধরার চেষ্টা থাকছে।
এক নজরে স্মার্টফোনটির ফিচার ও কনফিগারেশন
প্রিমিয়াম ডিজাইন
এ৩ ফোনটির সামনে ও পিছন উভয় দিক কাঁচের তৈরি, যার সুরক্ষায় ব্যবহার করা হয়েছে কর্নিং গরিলা গ্লাস ৫। ডিসপ্লের উপরে রয়েছে ডিউড্রপ নচ।
ফোনটির ডিসপ্লের দুই পাশে বেজেলের পরিমাণ বেশ কম হলেও উপরে ও নীচে থাকছে তুলনামূলক চওড়া বেজেল।
চতুর্দিকে পাতলা প্লাস্টিকের ফ্রেমের ফোনটি তিনটি রঙে পাওয়া যাবে। ফোনের উপরে রয়েছে একটি ৩.৫ মিমি অডিও জ্যাক, একটি সেকেন্ডারি মাইক্রোফোন আর একটি আইআর ব্লাস্টার।
নিচের দিকে থাকছে একটি ইউসি টাইপ-সি পোর্ট, স্পিকার। ডান দিকে ভলিউম রকার, পাওয়ার বাটন এবং বাঁদিকে সিম কার্ড ট্রে।
একেবারে পিছনে থাকছে তিনটি ক্যামেরার সেটআপ ও এলইডি ফ্ল্যাশ। ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর মিলবে ডিসপ্লেতেই।
ক্যামেরায় চমক
ফোনটির অন্যতম ভালো লাগার দিক হলো এর ক্যামেরা। ফোনের পিছনে রয়েছে ট্রিপল ক্যামেরা সেটআপ। এর মধ্যে ৪৮ মেগাপিক্সলের সনি আইএমএক্স মূল লেন্স। পাশাপাশি থাকছে ৮ মেগাপিক্সেলের একটি আল্ট্রা ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স ও ২ মেগাপিক্সেলের একটি ডেপথ সেন্সর।
এর ক্যামেরায় রেডমি সিরিজের অন্যান্য ফোনগুলোর মতোই ফিচারগুলো পাওয়া যাবে।
দিনের আলোতে খুব ভালো ছবি তোলে ব্যাক ক্যামেরা। এইডিআর মোডে পারফরমেন্স কিছুটা খারাপ হলেও ব্যাক ক্যামেরা বেশ ভালো ছবি তুলতে সক্ষম।
এ ছাড়া ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরায় ওয়াইড অ্যাঙ্গেল ছবি তোলা সম্ভব। তবে সেই ছবিতে প্রাইমারি সেন্সরের মতো ডিটেইল পাওয়া যাবে না।
নাইড মোড ব্যবহার করে স্বল্প আলোতেও সন্তোষজনক মানের ছবি তোলা যায় এর ক্যামেরাতে।
অন্যদিকে ৩২ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা দিয়ে দারুণ সব সেলফি তোলা যাবে। থাকছে বিউটি মোড সুবিধাও।
পেছনের ক্যামেরা দিয়ে ৪কে এবং সেলফি ক্যামেরা দিয়ে ১০৮০ পিক্সেল রেজুলেশনের ভিডিও রেকর্ড করা যাবে।
ডিসপ্লেতে হতাশা
মি এ৩ মডেলে শাওমি ৭২০ পিক্সেল রেজুলেশনের ৬.০১ ইঞ্চি সাইজের সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে ব্যবহার করেছে যার পিক্সেল ঘনত্ব মাত্র ২৬৫।
দাম অনুযায়ী ডিসপ্লের রেজুলেশন নিয়ে অনেকেই হতাশ হতে পারেন। অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান সিরিজের আগের ফোনগুলোতে শাওমি ১০৮০ পিক্সেল রেজুলেশনের ডিসপ্লে দিলেও নতুন সংস্করণে অপেক্ষাকৃত কম রেজুলেশনের ডিসপ্লে দিয়ে ব্যবহারকারীদের মধ্যে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে শাওমি।
তবে ডিসপ্লেটি সুপার অ্যামোলেড হওয়ায় সমস্যাটি ততটা প্রকট হবে না। ডিসপ্লের কালার বেশ ভালো, তবে হাই গ্রাফিক্স গেইমিং অভিজ্ঞতা ভালো নয়।
এতে ব্যবহৃত অ্যান্ড্রিনো ৬১০ জিপিউ ভালো গ্রাফিক্স প্রসেসিংয়ে সহায়ক হবে।
সফটওয়্যার ও পারফরমেন্সে দারুন
ফোনটিতে কোয়ালকম স্নাপড্রাগন ৬৬৫ চিপসেট দেয়া হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির প্রসেসরটির গতি সর্বোচ্চ ২.০ গিগাহার্জ এবং এটি ১১ ন্যানোমিটার প্রযুক্তিতে তৈরি। ফোনে থাকা ৪ গিগাবাইট র্যাম ভালো মানের পারফরমেন্স নিশ্চিত করবে।
অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান সিরিজের স্মার্টফোন হওয়ার অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে গুগলের স্টক অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করা হয়েছে। আগামী ২ বছর ফোনটি গুগলের হালনাগাদ অপারেটিং সিস্টেম পাবে এবং প্রতি মাসে একটি করে নিরাপত্তা আপডেট দেয়া হবে। আপাতত এটি অ্যান্ড্রয়েড ৯ (পাই) এ চললেও দ্রুত এর জন্য অ্যান্ড্রয়েড ১০ আপডেট পাওয়া যাবে।
র্যাম, প্রসেসর ও অপারেটিং সিস্টেম মিলিয়ে দ্রুতগতির পারফরমেন্স দিবে মি এ৩। দৈনন্দিন কাজ কিংবা মাল্টিটাস্কিংয়ের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। তবে যারা আরও অধিক মাল্টিটাস্কিং কিংবা উচ্চ গ্রাফিক্সের গেইম খেলেন তাদের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হতে পারে।
চলুন দেখে নেয়া যাক স্মার্টফোনের পারফমেন্স যাচাইয়ের বেঞ্চমার্ক অ্যাপে এর স্কোর কেমন
নিয়ারপত্তা ফিচার
এই ফোনে আলাদা করে কোনো ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর না দিয়ে তা ডিসপ্লের মধ্যেই দেয়া হয়েছে, যা এই বাজেটের ফোনে ভালো একটি ফিচার।
ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ঠিকঠাক কাজ করলেও পারফরমেন্স কিছুটা ধীরগতির। এর পাশাপাশি এতে ফেইস আনলকিং সুবিধা রয়েছে যা সন্তোষজনক।
ব্যাটারিতে দারুন
৪০৩০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি রয়েছে এতে। ডিসপ্লের রেজুলেশন কম হওয়ার কারণে ব্যাটারি থেকে দীর্ঘ ব্যাকআপ পাওয়া যাবে। সাধারণ মানের ব্যবহারে এটি একবার ফুল চার্জে টানা ২ দিন ব্যবহার করা যাবে।
ফোনটি ১৮ ওয়াটের ফাস্ট চার্জিং সমর্থন করলেও ফোনের সঙ্গে দেয়া চার্জারের সক্ষমতা ১০ ওয়াট। ফোনের সঙ্গে থাকা চার্জার দিয়ে এটি ফুল চার্জ হতে ২ ঘণ্টার কিছু বেশি সময় লাগে, তবে ১৮ ওয়াট সক্ষমতার চার্জার ব্যবহার করে এই সময় দেড় ঘণ্টায় কমিয়ে আনা যাবে।
স্টোরেজ ও কানেক্টিভিটি
ফোনটি ৬৪ গিগাবাইট ও ১২৮ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজের দুইটি আলাদা সংস্করণে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এর পাশাপাশি থাকবে মেমরি কার্ড ব্যবহারের সুবিধা।
এছাড়াও এটিতে মিলবে ৩.৫ মিলিমিটার অডিও জ্যাক ও আইআর ব্লাস্টার সেন্সর সুবিধা। থাকবে সর্বশেষ প্রযুক্তির ব্লুটুথ ৫.০।
দাম
ফোনটি সাদা, নীল ও গ্রে তিনটি আলাদা রঙে পাওয়া যাবে। ৪ গিগাবাইট র্যামের ফোনটির ৬৪ জিবি ও ১২৮ জিবি সংস্করণ দুটি কেনা যাবে ২২ হাজার ৯৯৯ টাকা ও ২৪ হাজার ৯৯৯ টাকায়। সঙ্গে এক বছরের ওয়ারেন্টি সেবা পাবেন গ্রাহকরা।
ফোনটির সঙ্গে একটি সিলিকন ব্যাক কাভার, চার্জার ও ক্যাবল পাওয়া যাবে।
এক নজরে ভালো
এক নজরে খারাপ
আরএ/ ইএইচ/ সেপ্টে ২১/ ২০১৯/ ১৪৩০