![]() |
আল-আমীন দেওয়ান, টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর, কুয়ালালামপুর থেকে : খটকা ছিল শুরু হতেই, শুধু তিন ঘন্টার একটি উম্মোচন অনুষ্ঠান দেখাতে ঢাকা হতে এই কুয়ালালামপুরে নিয়ে আসা হয়েছে আমাদের!
সোমবার রাতে মালয়েশিয়ার রাজধানীতে নেমেছি আমরা এক ডজন বাংলাদেশি সাংবাদিক। আজ মঙ্গলবার বিকালে সিডিউল অনুযায়ী দেশটির সুপরিচিত সানওয়ে কনভেনশন সেন্টারে বসে হুয়াওয়ের পি৩০ সিরিজের জমকালো উম্মোচন দেখছিলাম; কিন্তু খটকা কাটছিল না।
এই সপ্তাহখানেক আগে প্যারিসে ফোনটির উম্মোচনে কত কিছুই না করেছে জনপ্রিয় ব্র্যান্ডটি। ফোনটির নামে পুরো বিমান ‘নামিয়ে’ তা নিয়ে চলে গিয়েছিল ফ্রান্সের রাজধানীতে। সেই হুলুস্থুল আয়োজনের সঙ্গে কুয়ালামপুরের উম্মোচন নিয়শ্চই তুলনা চলে না।
তাহলে?
একটু ফ্লাশব্যাকে যাই, সালটা ছিল ২০১৬। ওই বছরের জুলাইয়ে মালয়েশিয়ায় ঢুকলো হুয়াওয়ের পি ৯ সিরিজের ফ্লাগশিপ। সেপেম্বরের ২১ তারিখে এসে হুয়াওয়ের কর্মকর্তারা ঘোষণা দিলেন দেশটির বাজারে তাদের এ হ্যান্ডসেট এক লাখ ইউনিট বিক্রি হয়ে গেছে। তখন সেখানকার স্মার্টফোন বাজারে দ্বিতীয় স্থান দখল বসে ব্র্যান্ডটি।
নতুন নতুন ইনোভেশন এনে প্রতিযোগিদের ধন্ধে ফেলার কাজটি কয়েক বছরে বেশ নিয়ম করছে হুয়াওয়ে। মালয়েশিয়ার বাজারেই স্মার্টফোন বিক্রির দিক হতে তাদের নোভা থ্রি আই শীর্ষস্থানে ছিল। মেট ২০-এর কথা নাই বা বললাম, এই এক হ্যান্ডসেটের প্রভাবে আইফোনকে ২০১৮ সালের দিকে বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানটি ছেড়ে দিতে হয়েছিল। যেখানে দেশ হিসেবে মালয়েশিয়াও আইফোনের বড় বাজার ছিল।
আসলে হুয়াওয়ে দৌড়াচ্ছে রিলে স্টাইলে। নিদিষ্ট সময় পর পর একেকটি ইনোভেশন নিয়ে এসে একেক প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে দিচ্ছে।
এবারের দৌড়ের ব্যাটন হলো পি৩০ সিরিজ। বাজার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মালয়েশিয়ার স্মার্টফোন বাজার আবারো এলোমেলো হবার পথে। যেখানে অবস্থান ধরে রাখার প্রতিযোগিতর ক্ষেত্রে এই দেশের বাজারকে এমনিতেই ‘আনস্ট্যাবল’ বলা হয়।
মালয়েশিয়ার মাঠে এই দৌড়টাই আমাদের দেখাতে চাইছে হুয়াওয়ে। আজকের হুয়াওয়ে অপরিচিত এক ব্র্যান্ড হিসেবে এ দেশে এসেছিল আট বছর আগে, ২০১১ সালে। অথচ তখনই একচোটিয়া রাজত্ব স্যামসাংয়ের, জমিয়ে বসেছিল আইফোনও।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি হতে ২০১৯ সালেরর মার্চ পর্যন্ত সময়ে মালয়েশিয়ার বাজারে যে গতিতে দৌড়েছে হুয়াওয়ে তাতে ‘আপেক্ষিক’ হিসেবে তুলনা করলে উসাইন বোল্টের গতির চেয়ে কম নয়!
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রিমিয়াম স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের বাজারে কোম্পানিটির শেয়ার ছিল ২২ শতাংশ। এক বছর পর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এটি ৩২ শতাংশ স্পর্শ করে । মাত্র এক মাস পর এই ক্যাটাগরিতে হুয়াওয়ে দখল করে নিয়েছে ৪৬ শতাংশ।
এবার কোম্পানিটির লক্ষ্য একচ্ছত্রভাবে এক নম্বর অবস্থানটি দখল করে নেয়া, যার পরিকল্পনাই এই পি৩০ কে ঘিরে।
কুয়ালামপুরের উম্মোচন অনুষ্ঠানে এটিই পরিষ্কার করে বলে দিলেন ম্যাথিউ এনজি, যিনি দেশটিতে হুয়াওয়ের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর।
বাংলাদেশের বাজারেও হুয়াওয়ের বাজার দখল সূচক উঠতি। উঠতি গতিকে এই পি৩০ যে বাড়িয়ে দেবে তা অনুমান করাই যায়।
মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারেও আজ থেকে পি৩০ ছাড়ার ঘোষণা দেয়া রয়েছে। যেখানে প্রি-বুকিংকে পি৩০ প্রোর সঙ্গে স্মার্টওয়াচ জিটি উপহার পাওয়া যাবে। উপহারটির মূল্য ১৯ হাজার ৯৯৯ টাকা। এ ছাড়া থাকছে গ্রামীণফোনের ১০ জিবি ডেটা অফার।
পি৩০-এর সঙ্গে থাকছে ফ্রি বাডস উপহার, যার দাম ১২ হাজার ৯৯০ টাকা, পি৩০ লাইটের সঙ্গে থাকছে ১ হাজার ৮৯০ টাকা দামের ব্যান্ড থ্রিই।
এ প্রি-বুকিং চলবে ১০ দিন সময় পর্যন্ত। ক্রেতারা কিস্তিতে তা কিনতে পারবেন। যেখানে কোনো ইন্টারেস্ট থাকছে না। যেখানে পি ৩০ প্রো ও পি ৩০ ১২ মাস এবং পি ৩০ লাইট কিনতে ৬ মাসের কিস্তি দেয়া যাবে।
পি ৩০ প্রো ও পি ৩০ প্রি-বুকিংয়ের জন্য ১০ হাজার টাকা করে এবং ও পি ৩০ লাইটের জন্য ৩ হাজার টাকা দিতে হবে। এ ছাড়া শর্তসাপেক্ষে গ্রাহক চাইলে ওয়ারেন্টি বাড়িয়ে দুই বছর করে নিতে পারবেন।
হুয়াওয়ে কনজ্যুমার বিজনেস গ্রুপের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর কেলভিন ইয়াং বলেন, বিশ্ববাজারে হুয়াওয়ের যেসব উদ্ভাবন উন্মোচন করা হয়, বাংলাদেশের বাজারেও সেসব অনন্য উদ্ভাবন গ্রাহকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। হুয়াওয়ের নতুন উদ্ভাবন পি৩০ সিরিজ ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
স্মার্টফোন ক্যামেরায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সুবিধা ও নান্দনিক ডিজাইনের হুয়াওয়ে পি ৩০ সিরিজে থাকছে দারুণ কিছু উদ্ভাবনী ফিচার। যার মধ্যে রয়েছে- হুয়াওয়ের সুপারস্পেকট্রাম সেন্সর, অপটিক্যাল সুপারজ্যুম লেন্স, হুয়াওয়ের টাইম অব ফ্লাইট (টিওএফ) ক্যামেরা, কৃত্ত্বিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন প্রযুক্তি।
এসব বৈপ্লবিক প্রযুক্তির কারণে হুয়াওয়ের পি ৩০ সিরিজের ফোনগুলো দিয়ে প্রত্যেকটি দৃশ্যের অতুলনীয় ছবি ও ভিডিও পাওয়া যাবে। পি ফর ফটোগ্রাফি এমন স্লোগানকে সামনে রেখে স্মার্টফোন ফটোগ্রাফি নিয়ে গ্রাহকদের চমকে দিয়েছে হুয়াওয়ের পি ৩০ সিরিজ।
মোবাইল ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে র্যাংকিং প্রকাশ করা ডিএক্সওমার্ক-এর র্যাংকিংয়ে ইতোমধ্যে পি ৩০ প্রো সবার শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে।
পি ৩০ প্রোর প্রধান ফিচারের মধ্যে রয়েছে, নতুন লেইকা কোয়াড ক্যামেরা সিস্টেম। হুয়াওয়ের সুপার-স্পেকট্রাম সেন্সরসহ ৪০ মেগাপিক্সেলের প্রধান ক্যামেরা, একটি ২০ মেগাপিক্সেলের আল্ট্রা-ওয়াইড অ্যাঙ্গেল ক্যামেরা, একটি ৮ মেগাপিক্সেলের টেলিফটো ক্যামেরা, হুয়াওয়ের টাইম অব ফ্লাইট ক্যামেরা, সেলফির জন্যে ৩২ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা।
এ ছাড়া ছবি ও ভিডিওগ্রাফির জন্য থাকছে অবিশ্বাস্য জুমিংসুবিধা। নতুন পেরিস্কোপ ডিজাইন এবং সুপারজুম লেন্স এর সাহায্যে ৫ গুণ অপটিক্যাল জুম, ১০ গুণ হাইব্রিড জুম, ৫০ গুণ ডিজিটাল জুম পওয়া যাবে এতে।
পি৩০ সিরিজের ফোনগুলোর বিস্তারিত কনফিগারেশন ও বিশ্লেষণ দেখতে ঢুঁ মারতে পারেন টেকশহরের এই প্রতিবেদনগুলোতে। প্রতিবেদন-এক, দুই।
বাংলাদেশের বাজারে পি৩০ প্রোর দাম পড়বে ৮৯ হাজার ৯৯৯ টাকা, পি৩০ পড়বে ৬৪ হাজার ৯৯৯ টাকা এবং পি ৩০ লাইট পড়বে ২৯ হাজার ৯৯৯ টাকা।
এডি/এপ্রিল০১/২০১৯/১৫০০