![]() |
তুসিন আহমেদ, টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : মাঝারি বাজেটের স্মার্টফোনের বাজারে শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে বাজেট ফোন হিসেবে ওয়াই নাইন ২০১৯-এর ব্যবহার অভিজ্ঞতা নিয়ে এ রিভিউ।
ফ্লাগশিপ ফোন নিয়ে বরাবরই অন্য জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আছে চীনা ব্র্যান্ডটি। এর বাইরে মিডরেঞ্জ থেকে একেবারে সস্তা স্মার্টফোনের বাজারের দখলেও পিছিয়ে নেই তারা। অবস্থান ধরে রাখতে নিয়মিত নতুন ফোন আনছে শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডটি।
হুয়াওয়ে সেই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বাজারে এনেছে ওয়াই সিরিজের নতুন ফোন ‘ওয়াই নাইন ২০১৯’। বাজেট ফোন হিসেবে এটি কতটা উৎরাতে পেরেছে, কী রয়েছে এতে- ব্যবহারের পর সেই অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যাক বিস্তারিত।
এক নজরে হুয়াওয়ে ওয়াই নাইন ২০১৯
ডিজাইন
প্রথম দেখাতেই ভালো লাগার মতো ফোন ওয়াই নাইন ২০১৯। এটির পেছনের অংশ গ্লসি, কম বেজেলের নচ ডিসপ্লে ডিজাইনে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে।
পেছনের অংশটি প্লাস্টিকের, তাই দাগ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে এটি কিছুটা অস্বস্তি তৈরি করে। পেছনের অংশে মেটাল ব্যবহার করে ফোনটিকে প্রিমিয়াম লুক দিতে পারতো হুয়াওয়ে।
পেছনের অংশটি প্লাস্টিকের হলেও তা অনেকটা কার্ভ, যা পাশের মেটালের সঙ্গে সুন্দরভাবে মিশে গেছে। ফলে বড় আকৃতির ডিভাইস হলেও এক হাতে ব্যবহার করতে খুব বেশি অসুবিধা হবে না।
ফোনটির ডিসপ্লের উপরে থাকা নচে রয়েছে ফ্রন্ট ক্যামেরা ও নোটফিকেশন লাইট। নিচের দিকে রয়েছে স্পিকার, মাইক্রো ইউএসবি চার্জিং পোর্ট এবং ৩.৫ এমএম হেডফোন জ্যাক।
এখনকার স্মার্টফোনে টাইপ সি পোর্টের আধিপত্য চলছে। বলা যায় এটি নতুন ট্রেন্ড। সেখানে হুয়াওয়ে এ ফোনে মাইক্রো ইউসিবিই রেখেছে। এমন বাজেটের বেশিরভাগ ফোনে টাইপ সি রয়েছে।
ফোনের পেছনে রয়েছে ডুয়েল ক্যামেরা সেটআপ ও ফ্ল্যাশ এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর। ডান পাশে রয়েছে ভলিউম আপ ডাউন ও পাওয়ার বাটন।
ডিসপ্লে
ডিভাইসটিতে থাকা ৬.৫ ইঞ্চি আইপিএস এলসিডি নচ ডিসপ্লের রেজুলেশন ১০৮০*২৩৪০ পিক্সেল। এর স্ক্রিন টু বডি রেশিও ৮২.৮ শতাংশ ও পিপিআই ৩৯৬ পিক্সেল। রয়েছে মাল্টি টাচ সুবিধা।
ডিসপ্লের সাইজ যথেষ্ট বড় হওয়ায় ভিডিও দেখা বা গেইমিংয়ে ভালো অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে। নচ থাকায় ইউটিউবে ভিডিও দেখতে কোন অনুসিধা হবে না। ভিডিও দেখা যাবে নচের আগ পর্যন্ত।
যারা নচ পছন্দ করেন না, তাদের এটি লুকিয়ে রাখার সুবিধা রয়েছে। আইপিএস ডিসপ্লের কালো রঙটি খুব বেশি গাঢ় না হওয়ায় তা চোখে পড়বে। সব মিলিয়ে ডিসপ্লেটি দৈনন্দিন ব্যবহার উপযোগী।
পারফরমেন্স
ফোনটিতে রয়েছে ১২ ন্যানোমিটারের হাইসিলিকন অক্টাকোর কিরিন ৭১০ প্রসেসর। এর মধ্যে ২.২ গিগাহার্টজের ৪টি কোর ও ১.৭ গিগাহার্টজের ৪টি কোর রয়েছে। গেইমিং সুবিধা দিতে রয়েছে মালি জি৫১ এম৪ জিপিইউ।
৪ ও ৬ গিগাবাইট র্যাম সংস্করণে যথাক্রমে ৬৪ ও ১২৮ গিগাবাইট ইন্টারনাল মেমোরির সংস্করণে বাজারে পাওয়া যাবে। ২৫৬ গিগাবাইট পর্যন্ত মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যবহার করা যাবে।
গিগবেঞ্চ অনুযায়ী, ডিভাইসটি সিঙ্গেলকোরে ১৬১০ পয়েন্ট এবং মাল্টিকোরে ৫৫৯৫ পয়েন্ট পেয়েছে।
আমাদের হাতে থাকা রিভিউ ইউনিটটি ৪ গিগাবাইট র্যামের সংস্করণের। কোন অ্যাপ চালু না থাকা অবস্থায় এটি ৪ গিগাবাইটের মধ্যে ২ গিগাবাইট খালি পাওয়া গেছে। মিডরেঞ্জ বাজেট হিসেবে একে মন্দ বলা যায় না।
একাধিক অ্যাপ একত্রে চালু ও কম গ্রাফিক্সের গেইম খেলে কোনো ল্যাগ পাওয়া যায়নি। তবে পাবজি খেলাযর সময় প্লেয়ারের মুভমেন্ট নিয়ন্ত্রণে মাঝে মাঝে ল্যাগ ছিল। তবে অ্যাসফল্ট ৯ খেলার সময় কোন ল্যাগ পাওয়া যায়নি। দীর্ঘক্ষণ গেইম খেললে ফোনটি কিছুটা গরম হয়, তবে তা স্বাভাবিক। সব ফোনেই বেশ কিছু সময় গেইম খেললে গরম হয়।
অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে এতে রয়েছে অ্যান্ড্রয়েড ৮.১ ওরিও’র উপর কাস্টমাইজ ইএমইউআই ৮.২। ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ফেইস লকের সুবিধা রয়েছে এতে। সব মিলিয়ে মাঝারি বাজেটের ফোন হিসেবে পারফরমেন্স বেশ ভালো।
ক্যামেরা
ডিভাইসটির পেছনে রয়েছে ১৬ ও ২ মেগাপিক্সেলের ডুয়েল ক্যামেরা সেটআপ ও ফ্ল্যাশ। ক্যামেরা দুটির অ্যাপার্চার যথাক্রমে এফ/২.০ ও এফ/২.৪।
ক্যামেরায় রয়েছে এআই প্রযুক্তি। দিনের আলোয় ছবির মান খুবই ভালো, বিশেষ করে আলো-ছায়ায় ভরা দৃশ্যের ছবিও এটি সহজেই এইচডিআর ব্যবহার করে মানসম্মতভাবে তুলতে পারে। কালার ও ডাইনামিক রেঞ্জও ভালো।
তবে লাইট কম পেলে ছবির ডিটেইল কমে যায় কিছুটা। ইনডোর ছবিও খারাপ আসে না ডিভাইসটি দিয়ে। চাইলে ছবি তোলার পর বুকে বাড়ানো বা কমানোর সুবিধা রয়েছে ক্যামেরা অ্যাপে।
ডিভাইসটি দিয়ে এইচডি ভিডিও রেকর্ড করা যাবে। নেই ফোরকে সুবিধা। নেই ইআইএস। ভিডিও কোয়ালিটি মোটামুটি।
সামনে রয়েছে এফ/১.৮ অ্যাপাচারের ১৬ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা এবং ২ মেগাপিক্সেল ডেপথ সেন্সর ক্যামেরা। যা দিয়ে ভালো সেলফি তোলা সম্ভব।
ব্যাটারি
ফোনটিতে রয়েছে ৪ হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি। স্বাভাবিক ব্যবহারে অনায়াসে এক দিন ব্যাকআপ দেবে।খুব বেশি ব্যবহারে অর্থাৎ টানা ইন্টারনেট বা ব্লুটুথ চালু থাকলে ৭-৮ ঘণ্টা ব্যাকআপ পাওয়া যাবে।
তবে ফাস্ট চার্জিং সুবিধা না থাকায় চার্জ হতে একটু বেশি সময় লাগবে। পুরো চার্জ হতে আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় নেয়।
মূল্য
এক বছর ওয়ারেন্টিসহ ফোনটির দাম ২২ হাজার ৯৯০ টাকা।
এক নজরে খারাপ
ফোরকে ভিডিও সুবিধা নেই
পেছনের অংশ প্লাস্টিকের
মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট
ফাস্ট চার্জিং সুবিধা নেই
এক নজরে ভালো
ব্যাটারি ব্যাকআপ
বাজেট অনুযায়ী ক্যামেরার মান
সুন্দর ডিজাইন
টিএ/ইএইচ/আরআর/জানু. ০৩/১২.৩৪/২০১৮