![]() |
দেশে বাইসাইকেল রাইড শেয়ারিং সেবা জোবাইকের যাত্রা তার হাত ধরে। আগে চাকরি করতেন ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবায়। সম্প্রতি টেকশহরডটকমের মুখোমুখি হয়েছিলেন তরুণ উদ্যোক্তা মেহেদী রেজা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তুসিন আহমেদ।
টেক শহর : বাইসাইকেল দিয়ে রাইড শেয়ারিংয়ের ধারণা এলো কীভাবে?
মেহেদী রেজা : আমি তখন আলিবাবায় চাকরি করি। বেশির ভাগ সময় থাকি চীনে। অফিসের কাজে একবার দেশে এসে জরুরি কাজে মতিঝিল যাচ্ছিলাম। কিন্তু জ্যামের জন্য অনেকক্ষণ আটকে থাকতে হয়।
সে সময় সাইকেল চলাচলের ভাবনাটা আসে। এতে জ্যামে সময় নষ্ট কম হবে। রক্ষণাবেক্ষণ বা পার্কিং ঝামেলা কিংবা অর্থ সংকটের কারণে অনেকে সাইকেল কিনতে চান না। এ সমস্যা সমাধানে অন্যান্য রাইড শেয়ারিংয়ের মতো সাইকেল সেবার বিষয়টি নিয়ে ভাবতে থাকি।
এরপর স্কুল জীবনের বন্ধু আজহারুল কুদরত খান ও খাঁন হেলালউজ্জামান অয়নকে জোবাইকের আইডিয়ার কথা জানাই। ওরা সাড়া দিতেই শুরু হয়ে গেল জোবাইক নিয়ে পরিকল্পনা ও মাঠে নামার কাজ। এ দুই বন্ধু ছাড়াও সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে রয়েছেন মেক্সিকোর পাবলো আগুয়ারো ও ব্রাজিলের গালহাম প্রকিচ। তারা আলিবাবায় আমার সহকর্মী।
টেক শহর : বিশ্বখ্যাত একটি কোম্পানির চাকরি ফেলে নতুন উদ্যোগের ঝুঁকির ক্ষেত্রে কোন ধরনের চিন্তা কাজ করছিল?
মেহেদী রেজা : আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল নিজের কিছু করার। ১৬ বছরের পেশাগত জীবনে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েও সফলতা আসেনি। দু’বছর আলিবাবায় কাজ করে অনেক কিছু শিখেছি। বিশেষ করে ঝুঁকি না নিলে সফল হওয়া দুষ্কর। বুঝলাম, লক্ষ্যে স্থির থেকে পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই। এ সাহস নিয়েই চাকরি ছেড়ে কাজে নেমে পরি।
টেক শহর : আলিবাবায় কাজের পরিবেশ কেমন?
মেহেদী রেজা : আলিবাবায় কাজের পরিবেশ এক কথায় চমৎকার। দলগতভাবে বেশি কাজ হয় সেখানে। ফলে কেউ ভুল করলে তা সহজে অন্যের চোখে পড়ে এবং সমাধান পাওয়া যায়। সেখানকার সব কর্মী বেশ পরিশ্রমী, যা আমাকে আরও বেশি কাজ করতে উৎসাহ দিত।
টেক শহর : জোবাইক কিভাবে সেবা দেয়, তা জানতে চাই।
মেহেদী রেজা : ধরুণ আপনার বাসা মিরপুরের রূপনগরে। অফিস বারিধারায়। রূপনগর থেকে মিরপুর সাড়ে ১১ বা কাছাকাছি বাসস্ট্যান্ডে যেতে আপনাকে রিকশা নিতে হয়। এরপর বাসে করে যাওয়ার পর বারিধারার মূল গেইটে নেমে ভেতরে যেতে রিকশা নিতে হয়। বাসে ওঠার আগে ও নামার পর উভয় জায়গায় রিকশার বদলে সাইকেল ব্যবহার করে যাওয়ার সুবিধা মিলবে জোবাইক থেকে।
অ্যাপভিত্তিক সাইকেল ভাড়া নেওয়ার এ সেবা শুরুতে কম দূরুত্বে পরিচালনা করা হচ্ছে। পরে বেশি দূরের গন্তব্যেও পাওয়া যাবে সাইকেল।
জোবাইক ব্যবহারে প্রথমে এই ঠিকানা থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করে নিতে হবে। তারপর অ্যাপটি চালু করে জোবাইকে সাইকেলে থাকা কিউআর কোডটি স্ক্যান করলে সাইকেলের লকটি খুলে যাবে। তারপর সাইকেলটি চালিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়া যাবে। গন্তব্যে যাওয়ার পরে সাইকেলে থাকা লকটি ম্যানুয়ালি হাত দিয়ে লক করে দিতে হবে।
টেক শহর : জোবাইক মিলছে কোথায় কোথায়। কিভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন?
মেহেদী রেজা : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বিবদ্যালয়, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাওয়া যাবে জোবাইক। সব মিলে দুই শতাধিক সাইকেল রয়েছে তাদের। রাজশাহী এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিগগির চালু হবে। পাশাপাশি ঢাকাতেও শুরুর কাজ চলছে।
চালুর ছয় মাসে এখন পর্যন্ত চুরির ঘটনা ঘটেনি। যদিও কিছু বেল খোয়া গেছে। দেশের অন্য সাইকেলের চেয়ে জোবাইকের আকার ও ডিজাইন ভিন্ন, দেখতে অনেকটা ডিজিটাল বাইসাইকেলের মতো। এতে রয়েছে অত্যাধুনিক লক, যেটা আনলক হবে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপের মাধ্যমে। আর জিপিএস সিস্টেম থাকায় চুরি হলেও জানা যাবে এর অবস্থান।
টেক শহর : চুরির পর জিপিএস সিস্টেমটি খুলে ফেলা হলে কিভাবে অবস্থান জানবেন?
মেহেদী রেজা : জোবাইকে রয়েছে দুটি জিপিএস সিস্টেম। একটি খুললেও ব্যাকআপ হিসেবে আরেকটি কাজ করবে। ব্যাকআপ জিপিএসের অবস্থান সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই চোরেরা খুব সুবিধা করতে পারবে না।
টেক শহর : জোবাইক ব্যবহারের খরচ কেমন? অর্থ পরিশোধ করা যাবে কিভাবে?
মেহেদী রেজা : বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জোবাইক ব্যবহারে প্রতি পাঁচ মিনিটে গুণতে হবে তিন টাকা। অ্যাপের মাধ্যমে সাইকেলের লক খোলার পর থেকেই শুরু হবে সময় গণনা। গন্তব্যে পৌঁছে ব্যবহারকারী স্ট্যান্ড করে লক করলে শেষ হবে তার রাইড।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য এলাকায় জোবাইক ব্যবহারে প্রতি মিনিটে লাগবে এক টাকা।
জোবাইকের সাইকেল ব্যবহারের আগে ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টে অর্থ রিচার্জ করে নিতে হবে। বর্তমানে যে এলাকায় জোবাইকের সেবা চালু হয়েছে সেখানে নিজেদের রিচার্জ সেন্টার রয়েছে। সেখান থেকেই ব্যবহারকারী অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা রিচার্জ করতে পারবেন। এখনো অনলাইন বা কোন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে রিচার্জের সুবিধা নেই। তবে শিগগির বিকাশের মাধ্যমে রিচার্জের সুবিধা যুক্ত করা হবে।
টেক শহর : শুরুর দিকে কেমন সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে?
মেহেদী রেজা : আইডিয়া বা পণ্য খুব ভালো হলেও উদ্যোগটি বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত তহবিল না থাকলে সেটি আলোর মুখ দেখবে না। জোবাইকের শুরুতেও অর্থায়ন নিয়ে বেশ সংকট ছিল। সহপ্রতিষ্ঠাতাদের দেওয়া অর্থ অ্যাপ ও সিস্টেম তৈরি করতেই শেষ হয়ে যায়। পরে অবশ্য অর্থের সংস্থান হলেও তা খুব পর্যাপ্ত নয়।
টেক শহর : এখন গ্রাহকের সংখ্যা কেমন এবং কতগুলো সাইকেল রয়েছে আপনাদের।
মেহেদী রেজা : ২০০ সাইকেলের মাধ্যমে বর্তমানে সেবা দেওয়া হচ্ছে। নিবন্ধনের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, এখন যা প্রায় ১৯ হাজার। আর প্রায় অর্ধশত কর্মী কাজ করছেন। শিগগির তা বাড়বে। কেননা পর্যায়ক্রমে পরিসর বাড়ানোর কাজ চলছে।
টেক শহর : ভবিষৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই।
মেহেদী রেজা : জোবাইক নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা গ্লোবাল। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে নেপাল, ভুটানসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এ সেবা পৌঁছে দিতে চাই। সে লক্ষ্যেই কর্মপরিকল্পনা সাজাচ্ছি আমরা। আগামী বছরের মধ্যে দেশে প্রায় শতাধিক এলাকায় মিলবে জোবাইক।
বাইসাইকেলের পাশাপাশি জোবাইল আনবে ই-বাইক (ইলেকট্রিক বাইক)। সেটি নিয়ে এখন নানা গবেষণা চলছে।
টেক শহর : টেক শহরকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
মেহেদী রেজা : টেকশহর ও পাঠকদেরও ধন্যবাদ জানাই।
টিএ/ইএইচ/আরআর/ডিসে১৮/২০১৮/১৩৫৫