![]() |
টেক শহর ডেস্ক : বর্তমানের স্মার্টফোনগুলো ভালো মানের ছবি তোলা গেলেও পেশাদার ছবি তুলতে ক্যামেরার বিকল্প নেই। আর ক্যামেরার ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে রয়েছে স্যামসাং। বাজারে বেশ কয়েকটি নতুন স্মার্ট ক্যামেরা এনেছে ইলেকট্রনিক পণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি। গ্যালাক্সি সিরিজের স্মার্ট ক্যামেরাগুলো প্রথম অ্যান্ড্রয়েডভিত্তিক পয়েন্ট অ্যান্ড স্যুট ক্যামেরা। সম্প্রতি বাংলাদেশের বাজারেও পাওয়া যাচ্ছে এ সিরিজের সর্বশেষ সংস্করণ ‘গ্যালাক্সি এস৪ জুম’।
বাজার বিশ্লেষকরা নতুন কোনা প্রযুক্তিপণ্য কেনার আগে এ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যারা এ ক্যামেরা কেনার কথা ভাবতে শুরু করেছেন তাদের জন্য টেক শহর গ্যালাক্সি এস৪ জুম ক্যামেরার খুঁটিনাটি তুলে ধরছে। চলুন জেনে নিই কি আছে এ স্মার্ট ক্যামেরায়। সবার আগে জানিয়ে দেই, দেশের বাজারে ক্যামেরাটির দাম রাখা হয়েছে ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা।
থ্রিজি এবং ওয়াই-ফাই সুবিধা সম্বলিত গ্যালাক্সি এস৪ জুম ইতিমধ্যে বিশ্ববাজারে বেশ সাড়া ফেলেছে। পাশাপাশি আধুনিক হার্ডওয়্যারের সংযোজন ক্যামেরাটিকে ব্যবহারকারীদের কাছে আকর্ষনীয় করে তুলেছে। এতে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের প্রায় সব সুবিধা যুক্ত হয়েছে। ফলে এটি স্মার্টফোন নাকি ক্যামেরা সেটি সম্পর্কে অনেকের কাছেই দ্বিধা লাগছে। প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবাসইট ঘেটে এ প্রশ্নের উত্তর খোজার চেষ্টা করা হয়েছে এ রিভিউতে।
ক্যামেরাটি সামনের দিক থেকে ধরলে মনে হয় এটি গ্যালাক্সি এস৪ মিনি অথবা অন্য কোনো গ্যালাক্সি সিরিজের স্মার্টফোন। বাড়তি হিসেবে এখানে যুক্ত হয়েছে পিছনের ১০এক্স জুমের একটি লেন্স। তাই পিছন দিকটা দেখতে ক্যামেরার মতোই মনে হবে। ডিভাইসটির পুরুত্ব ১৫৪ মিলিমিটার এবং ওজন ২০৮ গ্রাম। এ কারণে এটিকে স্মার্টফোন হিসেবে ব্যবহার অনেকটা বিরক্তিকর ও দেখতে খারাপ লাগবে। তাই এটি কিনতে চাইলে একে ক্যামেরা ফোন মনে না করে টেলিফোন ও ডাটা সেবা সম্বলিত পয়েন্ট অ্যান্ড স্যুট ক্যামেরা হিসেবে ভাবা উচিত হবে।
১৬ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরাটির পিক্সেল রেজ্যুলেশন ৯৬০x৫৪০ পিক্সেল ও ফোকাস লেন্স ২৪ মিলিমিটার। ব্যবহার করা হয়েছে ১.৫ গিগাহার্জ ডুয়েল-কোর প্রসেসর।
এস ফোর জুমের সামনের প্যানেলটি ক্রোম ফ্রেমের মাধ্যমে পুরো বডিতে জড়ানো এবং নিচের দিকে অনেকটা বাঁকানো (গ্রিপ স্টাইল)। আর এর নিচের দিকেই রয়েছে ক্যামেরার বড় একটি সাটার বাটন। স্মার্টফোনের মতোই ক্যামেরাটিতে রয়েছে ৪.৩ ইঞ্চির ডিসপ্লে। এতে ফিজিক্যাল হোম বাটনের পাশাপাশি মেনু ও ব্যাক কন্ট্রোলের জন্য টাচনির্ভর বাটন রয়েছে।
উইজেট ও অ্যাপস শর্টকাট কিংবা ফোল্ডারে সাজানো ৭টি হোম স্কিন প্রদর্শন করে ক্যামেরাটিতে। পিন করার মাধ্যমে বাড়তি উইজেট বা অ্যাপস হোমস্ক্রিন থেকে সরানো কিংবা যুক্ত করা যায়। বর্ণনানুক্রমে বা ইচ্ছেমতো সাজানোর সুবিধাও রয়েছে হোম স্ত্রিন। এস ভয়েস সুবিধার মাধ্যমে ভয়েস কমান্ড দেওয়া যাবে। আর বেশি সময় ধরে মেনু বাটনটি চাপলে সার্চ ফিচারটি চালু হবে।
উপরের দিকে ড্রপডাউন নোটিফিকেশন ট্রেতে সেটিং শর্টকাট ও নোটিফিকেশন দেখার বা সরিয়ে ফেলার সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া ট্রেতে ১০টি সেটিং রয়েছে যেগুলো স্ক্রলের মাধ্যমে আড়াআড়িভাবে অথবা গ্রিড স্টাইলে বাড়ানো যায়।
ক্যামেরাটিতে বেশ কিছু প্রিলোডেড অ্যাপস যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম এস প্লানার, ভয়েস রেকর্ডার, চ্যাটঅন মেসেজিং অ্যাপ, পেপার আর্টিস্ট, স্যামসাং অ্যাপ স্টোর, স্যামসাং হাব কনটেন্ট স্টোর, এস ট্রান্সলেটর, এস মেমো, স্টোরি অ্যালবাম ভিডিও এডিটর, গ্রুপ প্লে এবং রিমোট কর্টোল সুবিধার ওয়াশঅন।
এস ট্রান্সলেটর সুবিধার মাধ্যমে স্পিচ টু টেক্সট এবং টেক্সট টু টেক্সট ট্রান্সলেশন করা যাবে। যেটি ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, জার্মান, চাইনিজ, স্প্যানিশ, পর্তুগীজ, ইটালিয়ান, জাপানিজ ও কোরিয়ান ভাষা সমর্থন করে।
গুগল প্লে ফিচারটি গ্রুপ তৈরি করা এবং ডকুমেন্ট, মিউজিক ফাইল, ফটোসহ বিভিন্ন কনটেন্ট শেয়ার করা, তাৎক্ষনিকভাবে দেখার সুযোগ দেয়। এ ক্ষেত্রে সব ফোনগুলোকে মোবাইল ওয়াইফাই হটস্পটে যুক্ত হতে হবে যেটি গ্রুপ তৈরি করার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়। এটি এনএফসি (নেয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) প্রযুক্তিতেও কাজ করে।
ক্যামেরাটির জুম ব্যারেলের পাশে থাকা রিংয়ের মাধ্যমে জুম, বিভিন্ন ফাংশন নিয়ন্ত্রণ এবং মেন্যু পরিবর্তন করার সুবিধা রয়েছে। এছাড়া কথাবলার সময় এই রিং ঘোরানোর মাধ্যমে ছবি তোলা এবং তাৎক্ষণিক ভাবে এমএমএস এর মাধ্যমে আলাপকারীর কাছে পাঠানো যাবে।
ব্যাকসাইড অ্যালুমিনেটেড সিমস সেন্সর ব্যবহার করার কারণে এটি অধিক আলো ধারণ করে এবং ভালোমানের ছবি তুলতে সক্ষম হয়। স্যামসাং এইচডিআর, প্যানোরামা, নাইটমোডসহ ২৫টি সিন মোডে ছবি তোলা যায়।
অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে অ্যান্ড্রয়েড ৪.২.২ জেলিবিন ব্যবহার করা হলেও ক্যামেরার জন্য স্মার্টফোনের ওএস থেকে কিছু পার্থক্য রয়েছে এতে। এর ৮ গিগাবাইট স্টোরেজের মধ্যে ৫ গিগাবাইট ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া মাইক্রোএসডি কার্ড ব্যবহারের জন্য স্লট রয়েছে, যেখানে ৬৪ গিগাবাইট পর্যন্ত মেমরি ব্যবহার করা যায়।
ক্যামেরাটির উপরের দিকে বাম পাশে ইনফ্রারেড পোর্ট, মাঝখানে ক্ষুদ্র মাইক্রোফোন পোর্ট এবং ডানপাশে ৩.৫মিমি হেডফোন পোর্ট রয়েছে। চার্জিং এবং কম্পিউটারের সাথে যুক্ত করার জন্য নিচের দিকে মাঝখানে রয়েছে মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট। অপর প্রান্ত থেকে কথা শোনার সুবিধার্তে নিচের দিকেও আরেকটি মাইক্রোফোন পোর্ট রয়েছে। উপরের পরিবর্তে ক্যামেরাটির ডানপাশে উপরের দিকে পাওয়ার ও স্লিপ বাটন এবং মাঝামাঝি ভলিউম নিয়ন্ত্রনের বাটন রয়েছে। অপসারণযোগ্য ২৩৩০ এমএএইচমানের ব্যাটারির নিচেই রয়েছে মাইক্রো সিম কার্ড স্লট।
– প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট অবলম্বনে তুহিন মাহমুদ