![]() |
তুহিন মাহমুদ, টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : গুগল রাইজ অ্যাওয়ার্ড, আইএসআইএফ অ্যাওয়ার্ড, দ্য ববস ইউজার অ্যাওয়ার্ড ও ইন্টারনেট সোসাইটি কমিউনিটি গ্র্যান্ট সবই বাংলায় অনলাইন ভিত্তিক প্লাটফর্ম শিক্ষক ডটকম এর ঝুলিতে। অন্যদিকে অন্ধ শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলা ব্রেইল বুক তৈরির প্রকল্প বাংলা ব্রেইলও পেয়েছে দ্য ববস জুরি অ্যাওয়ার্ড। আর এসব উদ্যোক্তা হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা অ্যাট ব্রামিংহামের (ইউএবি) সহকারি অধ্যাপক ড. রাগিব হাসান।
সম্প্রতি দেশে এসেছেন রাগিব হাসান। এসেই নানা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠানে তার অভিজ্ঞতা, নানা উদ্যোগের কথা শোনাচ্ছেন ও শুনছেন। এমনই এক আড্ডা অনুষ্ঠিত হলো বুধবার। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বাংলাদেশে অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) অডিটোরিয়ামে ‘আড্ডা উইথ রাগিব হাসান’ শীর্ষক আড্ডায় অংশ নেন তিনি। শিক্ষার্থী, উদ্যোক্তা ও নানা পেশার অর্ধশতাধিক মানুষের সামনে তার নানা উদ্যোগ ও অভিজ্ঞতার কথা শোনান। তরুণদের অংশগ্রহণে প্রানবন্ত হয়ে উঠে এই আড্ডা।
আড্ডায় যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা অ্যাট ব্রামিংহামের (ইউএবি) সহকারি অধ্যাপক, ইউএবি সিক্রেট ল্যাবের পরিচালক, বাংলা উইকিপিডিয়ার ব্যুরোক্র্যাট, শিক্ষক ডটকম ও বাংলা ব্রেইল প্রকল্পের উদ্যোক্তা ড. রাগিব হাসান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিডিওএসএনের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান, এপিক প্রপার্টিজ লিমিটেডের প্রিন্সিপাল আর্কিটেক্ট স্থপতি আহমেদ জিননুর চৌধুরী ও বাংলা উইকিপিডিয়ার প্রশাসক নুরুন্নবী চৌধুরী হাছিব।
অনুষ্ঠানে রাগিব হাসান বলেন, বড় কিছু দায়িত্ব পালন করলেই যথার্থ স্বার্থকতা থাকে না। পাশাপাশি অন্তত কিছু মানুষের কাজে লাগে এমন কিছু করতে হবে। ১০ বছর আগে স্বল্প কয়েকজনের প্রচেষ্টায় বাংলা উইকিপিডিয়ার যাত্রা শুরু হয়। সবার একান্ত প্রচেষ্ঠায় এখন বাংলা উইকিপিডিয়ায় ৩০ হাজারের অধিক নিবন্ধ রয়েছে। এগুলো সবই স্বেচ্ছাসেবী ভিত্তিকে করেছেন সবাই।
তিনি জানান, অনলাইনে বাংলা রিসোর্সের খুব অভাব। অনেকের পক্ষ্যে ভালো লেখকের ইংরেজি বই কিনেও পড়া সম্ভব হয় না। আবার অনেকেই নানা কারণে বেশিদুর লেখাপড়া করতে না পারলেও একটি বিষয়ে আগ্রহ থাকলেও সেটি নিয়ে পড়াশোনা করতে পারেন না। এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে ও বাংলাদেশ এবং ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য বাংলায় অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য শিক্ষক ডটকমের উদ্যোগ নিই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাঙালি শিক্ষাবিদরা এই প্ল্যাটফর্মটির পেছনে সময় দিচ্ছেন৷ প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতির বিপরীতে একটি মুক্ত এবং সহজলভ্য শিক্ষা পদ্ধতি তৈরি হয়েছে এখানে। যে কেউ ইচ্ছা করলে যেকোনও বিষয়ে এখানে পড়াতে পারবেন। এবং এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।
বাংলা ব্রেইল সম্পর্কে রাগিব হাসান জানান, প্রতিবন্ধিদের জন্য পর্যাপ্ত বই নেই। আবার ইচ্ছা করলেই প্রতিবন্ধিরা অষ্টম শ্রেণীর পর আর বিজ্ঞান বিষয়ে পড়তে পারে না। বাংলাদেশি এমন অনেকের সঙ্গেই কথা বলে জেনেছি তাদের আগ্রহের কথা। তারা যাতে ব্রেইলে পর্যাপ্ত বই পায় সেই লক্ষ্য নিয়েই বাংলা বেইলের কাজ শুরু করি। এই প্রজেক্টের অধীনে প্রচুর স্বেচ্ছাসেবী বাংলাদেশের স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যবইগুলোকে টাইপ করে বা অন্যভাবে ইউনিকোডে নিয়ে আসা হচ্ছে। এরপর তা ব্রেইলে পরিবর্তন করে ছাপার কার্যক্রম চলছে। এছাড়া অডিও টেক্সট বুক তৈরি করা হচ্ছে। ইতিমেধ্যেই প্রকল্পটি বেস্ট ববস পুরস্কার পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে রাগিব হাসান অংশগ্রহণকারীদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। সেসময় তিনি বিদেশে কিভাবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে যেতে পারে কিংবা গুগলের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে কিভাবে চাকরি পাওয়া যাবে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ভালো কিছু করতে হলে অবশ্যই বড় স্বপ্ন দেখতে ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে হয়। তথ্যপ্রযুক্তি মানুষের এই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের পথ সহজ করে দিয়েছে। একটি সুযোগ হারিয়ে গেলে থেকে থাকলে চলবে না। মানুষের সামনে অফুরন্ত সুযোগ। তাই একটি সুযোগ হারালে আরেকটি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।