![]() |
মাত্র ৭০০ টাকায় শুরু এ উদ্যোগের এখন নিজস্ব অফিস হয়েছে। কর্মসংস্থান হয়েছে ১২ জনের। বিদেশে কান্ট্রি ম্যানেজার নিয়োগের মাধ্যমেও আসছে ব্যবসা। সিলেটের দুই সাহসী বন্ধুর উদ্যোগের হালহকিকত জানাচ্ছেন তুহিন মাহমুদ
সিলেটের ছেলে প্রদ্যোত বরণ চৌধুরী ঢাকায় বেড়ে উঠেছেন। অক্সফোর্ড ব্রুকেস ইউনিভার্সিটি ইউকেতে এসিসিএ পড়ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে বন্ধু আহমেদ শিফাতের সঙ্গে মিলে গড়ে তোলেন একটি ওয়েবভিত্তিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান।
শুরুতে হোঁচট খেলেও থেমে যায়নি অদম্য সাহসী এ দুই বন্ধুর উদ্যোগটি। আস্তে আস্তে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন তারা। পরিশ্রম ও মনোবলের দৃঢ়তায় দাঁড় করিয়েছেন মিস্টিক ওয়েব সলিউশন। আগামীতে আরও বড় স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় তাদের।
উদ্যোগের শুরু
অ্যাকাউন্টিং নিয়ে পড়াশোনা করলেও ওয়েবের কাজের প্রতি আগ্রহ প্রদ্যোতের। ২০০৭ সালে ওডেস্ক ও ওয়ারিয়র ফোরামে নিয়মিত ঘাটাঘাটি শুরু করেন। ওয়েবভিত্তিক কোনো কিছু করার আগ্রহ থেকেই প্রয়োজনীয় অনেক রিসোর্স সংগ্রহ করলেন তিনি। একবারে শুরুর এ সময়টাতে সঙ্গে পেলেন বন্ধু শিফাতকে। তারও আগ্রহের কমতি ছিল না।
এ বিষয়ে দু’জনে মিলে বিভিন্ন সাইটে পড়াশোনা ও গবেষণা শুরু করলেন। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসলেন সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির বিবিএ বিভাগের প্রধান। তিনি অনুপ্রেরণা যেমন দিলেন, তেমনি রিসোর্স সংগ্রহেও করলেন সহযোগিতা। অবশেষে দুই বন্ধু মিলে গড়ে তুললেন ‘মিস্টিক ওয়েব সলিউশন’ নামের ওয়েব সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান।
মাত্র ৭০০ টাকা নিয়ে মিষ্টিক ওয়েব সলিউশনের যাত্রা শুরু হয়। ব্যক্তিগত একটি কাজ করাতে গিয়ে প্রদ্যোতের সঙ্গে পরিচয় হয় ভিকি গভিক নামের অস্ট্রেলিয়ার এক ব্যক্তির। পরে তিনি মিষ্টিকের কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবেও দায়িত্ব নেন। তার মাধ্যমে নিয়মিত কাজ পেতে থাকে তাদের প্রতিষ্ঠান। একই সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়ায় আরেক বন্ধু নুরুল ফজল।
এগিয়ে চলা
প্রথমদিকে টাকা পাওয়ার সরাসরি কোনো সহজ মাধ্যম না থাকায় অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে প্রদ্যোত ও শিফাতকে।
এ ছাড়া শুরুর দিকে গ্রাহকদের অনেক চাওয়া পাওয়াগুলো ঠিকমতো বুঝতে পারতেন না তারা। কিছুদিন পর বুঝলেন এভাবে চলবে না। তাই টেলি-মার্কেটিং করলেন।
একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে ও অষ্ট্রেলিয়াতে লিফলেটসহ সেখানকার ওয়েবসাইটগুলোতে বিজ্ঞাপন দিলেন। পাশাপাশি ওয়ারিয়র ফোরাম, ব্ল্যাক হ্যাট ওয়ার্ল্ডের মতো ফোরামগুলোতে প্রচারণা শুরু করলেন। সেখানে অনেক ভালো অবস্থান তৈরি হলো।
এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বিদেশে থাকা কান্ট্রি ম্যানেজার ও ফোরামগুলোর মাধ্যমে নিয়মিত কাজ পেতে থাকলেন।
বর্তমান পেক্ষাপট
যাত্রা শুরুর দিকে মিষ্টিকের কোনও অফিস ছিল না। বর্তমানে সিলেটে নিজেদের জায়গার ওপরে একটি অফিস রয়েছে, যেখানে ১২ জন ব্যক্তি কাজ করেন।
এদের মধ্যে একজন বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার রয়েছেন, যিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করেন। গ্রাহকদের সুবিধার জন্য ২৪/৭ গ্রাহকসেবা দিয়ে থাকে মিষ্টিক ওয়েব সলিউশন। ইতিমধ্যে অষ্ট্রেলিয়ার সর্ববৃহৎ পেমেন্ট গেটওয়ে ই-ওয়ে এবং মার্কেটিং কোম্পানি ট্রেইড ই-মার্কেটিংয়ের পার্টনার হয়েছে মিষ্টিক।
প্রচারণা
মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও অষ্ট্রেলিয়াসহ বিদেশের কাজই করে থাকে মিষ্টিক। তাই সেখানকার পত্রিকা, লোকাল অ্যাড সার্ভিস ও ফোরামগুলোতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়্
আগামীর পরিকল্পনা
আগামীতে ১২ জনের পরিবর্তে অন্তত ৩০০ জনের কর্মসংস্থান করতে চায় মিষ্টিক ওয়েব সলিউশন। এ ছাড়া একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে সফল এ দুই বন্ধু উদ্যোক্তার।
নতুনদের জন্য পরামর্শ
নিজেদের সংগ্রাম ও অভিজ্ঞতা থেকে তরুণ উদ্যোক্তা প্রদ্যোত ও শিফাতের পরামর্শ নতুন কিছু করতে হলে আগে ভালোভাবে তা জেনে মাঠে নামতে হবে। এ বিষয়ে বাজার নিয়ে গবেষণা করতে হবে। হাল ছাড়লে চলবে না। টাকার পেছনে না ছুটে বরং কাজের পিছনে ছুটলেই ভালো হবে বলে মনে করেন পোড় খাওয়া এ উদ্যোক্তারা।
যোগাযোগ
মিষ্টিক ওয়েব সলিউশন
২৪-২৫ হক সুপার মার্কেট, দ্বিতীয় তলা,
জিন্দাবাজার, সিলেট-৩১০০
মোবাইল ফোন : ০১৭২৩-৭০৯৪৩৩
ইমেইল : [email protected]