![]() |
তুহিন মাহমুদ, টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : চাকরি হারিয়ে নিরুপায় হয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরুর অনেক গল্প আছে। তবে এবার এই চাকরি হারানোদের দল থেকে দেশ সেরা ফ্রিল্যান্সার হওয়ার উদাহরণ তৈরি করেছেন ময়মনসিংহের শরীফ। জেলাওয়ারি সেরাদের এ দলে আবার উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া একজন সফল কিশোর ফ্রিল্যান্সারও রয়েছেন।
এ কারণে ঢাকা বিভাগের সেরা ফ্রিল্যান্সারদের গল্প কিছুটা চমকপ্রদ বৈকি। যদিও শুরুতে অন্য সকলের মতো শখের বসে ও স্বউদ্যোগী হয়ে কাজ শিখেছেন তারা। উদ্দেশ্য বাড়তি কিছুটা আয়। তবে শেষ পর্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে দক্ষতা ও পরিশ্রম তাদের করে তুলেছে সফল ফ্রিল্যান্সার। যা বদলে দিয়েছে জীবনের লক্ষ্য।
এদের সবাই স্বাবলম্বী হয়েছেন। কেউবা অন্যদেরও কাজের ক্ষেত্র তৈরি করেছেন। নিজের ভুবনে সেরা এসব ফ্রিল্যান্সারদের এবার পুরস্কৃত করেছে বেসিস।
দেশজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব স্বউদ্যোমী তরুণদের মধ্য থেকে জেলাওয়ারি সেরা ফ্রিল্যান্সারদের খুঁজে বের করেছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শীর্ষস্থানীয় সংগঠনটি। তাদের অনুপ্রাণিত করতে দেওয়া হয়েছে ‘বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড’।
দেশের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এটিই সর্বোচ্চ সন্মানজনক পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত। সফল ফ্রিল্যান্সারদের সন্মানিত করার পাশাপাশি এ পেশাকে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) ২০১১ সাল থেকে দিয়ে আসছে এ পুরস্কার।
এ বছর আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ডে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৯৭ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পুরস্কার পেয়েছে। এদের সফলতার কথা জানাতে টেকশহরডটকমের এ বিশেষ আয়োজন। এ প্রতিবেদনে থাকছে ঢাকা বিভাগের সেরাদের কথা।
টেকশহরডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় সফল এসব ফ্রিল্যান্সাররা কাজের শুরু, বর্তমান পেক্ষাপট, বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তি ও আগামীর লক্ষ্য নিয়ে নানা তথ্য জানিয়েছেন। তাদের সেসব কথামালা তুলে ধরতে এ প্রতিবেদন।
আশরাফুল আলম শরিফ, ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহের সেরা নির্বাচিত শরিফের পড়াশোনা কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে। ভারতের ব্যাঙ্গালোর ইউনিভার্সিটি থেকে এ বিষয়ে বিএসসি করেছেন। পেশাগত জীবনের শুরুটা করেছিলেন চাকরির মাধ্যমে। তবে সেটা বেশি দিন করা হয়নি। নতুন চাকরি না পেয়ে যোগ দিয়েছেন ফ্রিল্যান্সারদের দলে।
২০১০ সালে ঢাকায় মেস্ট্রো নামের একটি কোম্পানিতে জাভা ডেভেলপার হিসেবে চাকরি করছিলেন। হটাৎ করে তাকে কাস্টমার কেয়ার বিভাগে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তখন তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। বিভিন্ন জব সাইটে ২০টির অধিক সিভি দিয়েও ডাক পেলেন না নতুন চাকরির।
বেকারও থাকলেন প্রায় তিন থেকে চার মাস। তখন অভিজিৎ নামের এক বন্ধুর মাধ্যমে ওডেস্কের নাম শোনেন। তার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে শুরু করেনে ফ্রিল্যান্সিং। শুরু হলো তার জীবন বদলের গল্প।
ওডেস্কে মূলত জাভা ও জাভাস্কিপ্ট নিয়ে কাজ করেন। বর্তমানে থ্রিডি ব্রাউজার (পরবর্তী প্রজন্মের ব্রাউজার) নিয়ে কাজ করছেন।
ব্যক্তিগতভাবে কাজ কারে গড়ে মাসে দেড় হাজার ডলার আয় করেন। গত মাসে আয় করেছেন তিন হাজার ডলারের বেশি।
আগামীতে ময়মনসিংহ শহরকে একটি তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর শহর হিসেবে পরিচিত করতে ও নিজের অভিজ্ঞতা তরুণদের সঙ্গে ভাগাভাগি করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে চান শরিফ।
ইকবাল সম্রাট, জামালপুর
জামালপুরের ছেলে সম্রাট ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ শুরুর দুই বছরের মাথায় জেলাভিত্তিক সেরা ফ্রিল্যান্সারের কাতারে নাম লিখিয়েছেন। গত বছর মাওলানা ভাষানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বিএসসি শেষ করেছেন। বর্তমানে রাজধানীর শাহজাদপুরে বসবাস করছেন।
২০১১ সালে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন। ওয়েব প্রোগ্রামিং নিয়ে আগ্রহ তৈরি হওয়ায় প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেন। ২০১২ সালের মে মাসে ওডেস্কে ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলেপমেন্টে কাজ শুরু করেন। শুরুতে বন্ধুর ফ্রিল্যান্সিং অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কাজ করতেন। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে খোলেন নিজের অ্যাকাউন্ট।
কিছুদিনের মধ্যে ৫০০ ডলারের একটি কাজ পেয়ে যান। অনেকটা ই-বে’র মতো ই-কমার্স সাইট তৈরি করে দেওয়ার কাজ পান। কাজটি শেষ হলে গ্রাহক খুশি হয়ে আরও ৫০ ডলার উপহার দেন। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সম্রাটকে।
বর্তমানে ফুলটাইম ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন। এর আগে ইউএসএতে একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরির অফার পেলেও পড়ালেখা শেষ না হওয়ায় দেতে পারেননি। তবে এখন ওই কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার চিন্তা করছেন।
ওডেস্কে ঘন্টাপ্রতি ১৫ ডলারে কাজ করেন সম্রাট। পাশাপাশি ইউএসএতে কিছু নিয়মিত গ্রাহকের মাধ্যমে কাজ পান। মাসে গড় আয় এক হাজার ৩০০ ডলার।
আগামীতে নিজেকে একজন দক্ষ সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তরুণ এ ফ্রিল্যান্সার। এ ছাড়া নিউরন সিস্টেম নামে তার প্রতিষ্ঠিত ভার্চুয়াল আইটি ফার্মকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান।
নুরুল ইসলাম, টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলের সেরা নুরুলও ভারতের ব্যাঙ্গালোর ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক শেষে এখন ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসাবে নিয়েছেন।
২০১২ সালে একটি পত্রিকায় এ বিষয়ক লেখা পড়ে উৎসাহী হয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন। মূলত অনলাইন মার্কেটিং এবং ওয়েব রিসার্চের কাজ করেন নুরুল।
বর্তমানে জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র মেডিকেল ওয়েব রিসার্চার এবং ট্রেইনার হিসেবে কাজ করেছেন তরুণ এ ফ্রিল্যান্সার। পাশাপাশি কিছু প্রতিষ্ঠানের অনলাইন মার্কেটিংয়ের কাজ করেন। ব্যক্তিগতভাবে কাজ করে প্রতি মাসে প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় করছেন।
ওডেস্কে প্রায় ৩ হাজার ৩০০ ঘন্টা কাজ করেছেন। পেয়েছেন সর্বোচ্চ ৫ রেটিং। ঘন্টাভিত্তিক ৬.৬৭ ডলারে কাজ করেন। এ ছাড়া প্রজেক্টভিত্তিক কাজও করেন। আগামীতে একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চান নুরুল ইসলাম।
রাকিব রায়হান, গাজীপুর
গ্রামের বাড়ি নওগাঁ হলেও এবার গাজীপুর জেলা থেকে বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ডের জন্য আবেদন করে জেলাভিত্তিক সেরা ফ্রিল্যান্সার নির্বাচিত হয়েছেন রাকিব। গত বছর এশিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ শেষ করেছেন।
২০১০ সালের শেষের দিকে ইন্টারনেটে ডেটা এন্ট্রির কাজ পাওয়ার কথা জানতে পারেন তরুণ এ ফ্রিল্যান্সার। তখন এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার চেষ্টা করেও সফল হননি। তবে এতে দমে না গিয়ে গুগলে সার্চ করে ও ইউটিউবে ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের (এসইও) কাজ শেখেন।
এরপর ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে শখের বশে কাজ শুরু করেন। এরপর আয়ের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। তাই ২০১২ সাল থেকে ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে বেছে নেন।
একাই কাজ করেন রাকিব। মার্কেটপ্লেসে মূলত এসইও, ভিডিও এসইও এবং গুগল অ্যাডসেন্স নিয়ে কাজ করেন। মাসে আয় করছেন ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।
আগামীতে নিজের একটি আইটি ফার্ম দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন রাকিবের। এ ছাড়া ই-কমার্স নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
মুনতাসির মাহমুদ অমিও, মাদারীপুর
মাদারীপুরের সেরা ফ্রিল্যান্সার অমিও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী। বাবার অনুপ্রেরণাতেই এসেছেন ফ্রিল্যান্সিংয়ে।
২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অমিওয়ের পিতা একটি জাতীয় দৈনিকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের সফলতা বিষয়ক একটি প্রতিবেদন দেখান তাকে। এরপর থেকে এ বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর অনিন্ত্য নামের এক ফ্রিল্যান্সার বন্ধুও তাকে উৎসাহিত করেন এ কাজে নামতে। শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং।
বর্তমানে পড়াশোনার পাশাপাশি ওডেস্ক ও ইল্যান্সে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ করছেন। তবে শুরুর দিকে আর্টিকেল রাইটিং ও ব্লগিংয়ের কাজ করতেন। বর্তমানে দিনে ১৫ থেকে ২২ ঘন্টা কাজ করছেন। মাসে গড়ে আয় করছেন ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।
একাই কাজ করেন অমিও। আগামীতে দেশের ফ্রিল্যান্সিং এবং ওয়েব ইন্ডাস্ট্রিতে কনট্রিবিউট করতে চান। ভার্চুয়াল পণ্য তৈরি করে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন তার। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করতে চান।
সোহাগ কুমার সাহা, মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জের সেরা ফ্রিল্যান্সার সোহাগ স্থানীয় স্কুল ও কলেজে এসএসসি ও এইসএসসির পর পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। বর্তমানে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) এ একই বিষয়ে এমএসসি পড়ছেন।
পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করে ভালোই আয় করছেন এ তরুন ফ্রিল্যান্সার। ২০১৩ সালের প্রথম দিকে আর্টিকেল রাইটিংয়ের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন। কাজ শিখে বছরের শেষের দিকে ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে কাজ শুরু করেন।
পড়াশোনার পাশাপাশি বর্তমানে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের বিভিন্ন বিষয় যেমন রেসপনিসভ ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ওয়ার্ডপ্রেস থিম ডেভেলপমেন্ট, ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগ-ইন ডেভেলপমেন্ট, ই-কমার্স ও পিএইচপি নিয়ে কাজ করছেন।
প্রথমদিকে ব্যক্তিগতভাবে কাজ করলেও বর্তমানে পাবনাতে ক্লাউড টেকনোলজি বিডি নামে একটি কোম্পানি গড়ে তুলেছেন সোহাগ। এ প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ১৩ জন কাজ করেন। প্রতি মাসে ৩০০ থেকে ৪০০ ডলার আয় করছেন।
সোহাগের মতে, ফুলটাইম কাজ করতে পারলে মাসে দেড় থেকে দুই হাজার ডলার আয় করতে পারতেন। আগামীতে নিজের কাজের মাধ্যমে দেশের অর্থনীদিকে শক্তিশালী করতে চান তিনি। পাশাপাশি নিজের প্রতিষ্ঠানকে দেশের শীর্ষ আইটি ফার্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান।
আরিফ হোসেন, মুন্সীগঞ্জ
১৬ বছর বয়সী আরিফ গত বছর এসএসসি পাশ করে এখন সবেমাত্র উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ছেন। এবার জেলাভিত্তিক ক্যাটাগরিতে সেরা ফ্রিল্যান্সার পুরস্কার পেয়েছেন। বর্তমানে ঢাকার উত্তর যাত্রাবাড়ীতে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন।
আশেপাশে বন্ধু ও সিনিয়রদের কাছে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফলতার কথা শুনে এবং স্বাধীনভাবে নিজে কিছু করার চিন্তা থেকে দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং। কাজ করছেন গ্রাফিক্স ডিজাইনে।
মূলত প্রিন্ট মিডিয়া, ইউজার ইন্টারফেস, ইউজার এক্সপেরিয়েন্স, ওয়েব ডিজাইন, টুডি, থ্রিডি ডিজাইনের কাজ করেন একেবারে কিশোর এ ফ্রিল্যান্সার।
এ ছাড়া ওয়েব ডেভেলপিংয়ের কাজও করে থাকেন। আর এসব কাজের মাধ্যমে প্রতি মাসে গড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা আয় করছেন বলে জানান আরিফ।
আগামীতে দেশে একটি আন্তর্জাতিকমানের বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান খোলার ইচ্ছা আছে আরিফের। এখানে সৃজনশীলদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমেও কাজ করার সুযোগ তৈরি করতে চান তিনি।
Khub valo laglo…..
Good job…..Boss der kotha sune valo laglo