অপ্পো এফ৭ : সেলফির জন্য অবিকল্প ক্যামেরা ফোন

টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : নিজের ছবি দেখতে সুন্দর হোক সেটা প্রায় সবারই চাওয়া। অথচ সেলফির জন্য বিশেষায়িত ফোন বাজারে খুব একটা নেই। সেই ফাঁকা জায়গা ধরতে অপ্পো সেলফি এক্সপার্ট হিসেবে এনেছে এফ সিরিজ।

তার সর্বশেষ ফোন অপ্পো এফ৭ কী ধরে রাখতে পেরেছে ‘সেলফি লিডার অ্যান্ড এক্সপার্ট’ অবস্থান? চলুন দেখা যাক।

এক নজরে অপ্পো এফ৭

  • ডুয়াল সিম
  • ৬ দশমিক ২৩ ইঞ্চি, এলটিপিএস আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লে। অনুপাত দেয়া হয়েছে ১৯:৯,  রয়েছে ঠিক মাঝ বরাবর একটি নচ। রেজুলেশন রাখা হয়েছে ২২৮০ x ১০৮০পিক্সেল ফুল এইচডি প্লাস
  • মিডিয়াটেক হেলিও পি৬০ অক্টাকোর প্রসেসর। এরমধ্যে চারটি কোর কর্টেক্স এ৭৩ ও ৪টি এ৫৩ প্রযুক্তির, সবগুলোর কোরের সর্বোচ্চ গতি ২ গিগাহার্জ
  • মালি জি৭২ এমপি৩ জিপিউ
  • ৪ এবং ৬ গিগাবাইট র‌্যাম সংস্করণ
  • ৬৪ এবং ১২৮ গিগাবাইট স্টোরেজ সংস্করণ, মাইক্রো এসডি কার্ড স্লট
  • কালার ওএস ৫, অ্যান্ড্রয়েড ওরিও ৮.১ এর কাস্টমাইজড সংস্করণ অপারেটিং সিস্টেম
  • ১৬ মেগাপিক্সেল, এফ/১.৮ অ্যাপার্চারের ব্যাক ক্যামেরা
  • ২৫ মেগাপিক্সেল, এফ/২.০ অ্যাপার্চারের সেলফি ক্যামেরা
  • ১০৮০পি ফুল এইচডি ভিডিও ধারন করা যাবে দুটি ক্যামেরাতেই
  • ডুয়াল ব্যান্ড ওয়াইফাই, ব্লুটুথ ৪.২, জিপিএস
  • এফএম রেডিও, ইউএসবি ওটিজি
  • মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট ও হেডফোন জ্যাক
  • ৩৪০০ এমএএইচ ধারণক্ষমতার ব্যাটারি
  • ব্ল্যাক, সিলভার ও রেড তিনটি রঙ

ডিজাইন

Techshohor Youtube

ফোনটি ধরে প্রথমে মনে হতে পারে, সামনে ও পেছনে গ্লাস প্যানেল ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও তা সত্যি নয়, পেছনে দেয়া হয়েছে অ্যাক্রেলিক প্লাস্টিক কিন্তু তার ফিনিশিং পুরোই কাঁচের মত। রূপালি, লাল অথবা ডায়মন্ড ব্ল্যাক, যে রঙই হোক না কেন অ্যাক্রেলিক আর অ্যালুমিনিয়াম বডিতে তার চকচকে ফিনিশ সবারই নজর কাড়বে। ফোনটি ধরার ফিলিংও অসাধারণ, এ বাজেটে খুব কম ফোনই আছে হাতে এত সুন্দর মানিয়ে যায়।

ফোনটির পেছনের ডিজাইন তেমন পরিবর্তন হয়নি। সেখানে অপ্পো এফ৫ এর মতো ডিজাইনেই আছে। শুধু অ্যালুমিনিয়ামের জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে অ্যাক্রেলিক। তবে সামনে অনেক পরিবর্তন এসেছে।

ওপর, ডান ও বাম পাশে বেজেল কমিয়ে ডিসপ্লেতে দেয়া হয়েছে নচ, যার মাঝখানে আছে ইয়ারপিস আর সেলফি ক্যামেরা। তবে ডিসপ্লের নিচের অংশে খুব চিকন হলেও রয়ে গেছে বেজেল। ডিসপ্লে নচ যাদের অপছন্দ তাদের ফোনটি দৃষ্টিকটু মনে হতে পারে, তবে ২০১৮ সালের ফোনগুলোর প্রায় সবগুলোতেই নচ ব্যবহার করা হয়েছে ফলে নচযুক্ত ডিজাইন মেনে নেয়া ছাড়া উপায় আসলে নেই।

ফোনটির ডান পাশেই আছে পাওয়ার বাটন, সিম ও মেমরি কার্ড স্লট, ভলিউম বাটন আছে বাম পাশে। নিচে দেয়া হয়েছে হেডফোন জ্যাক, মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট আর স্পিকার। কোনও ক্যাপাসিটিভ বাটন নেই।

পেছনের বাম কোনায় দেয়া হয়েচে ব্যাক ক্যামেরা, তার পাশে আছে এলইডি ফ্ল্যাশ। উপরের মাঝ বরাবর আছে লম্বাটে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর।

সব মিলিয়ে অপ্পো এফ৭ এর ডিজাইন বলা যেতে পারে ফ্যাশনেবল। সেলফির জন্য বিশেষায়িত ফোনের ডিজাইন ফ্যাশন সচেতনদের মন জয় করার জন্যই করা উচিত, অপ্পো এদিক থেকে এগিয়ে আছে।

ডিসপ্লে

নচযুক্ত ৬ দশমিক ২৩ ইঞ্চি, আইপিএস এলসিডি প্যানেল ডিসপ্লের কালার ও ব্রাইটেনস সন্তোষজনক। প্যানেলটির রেজুলেশন দেয়া হয়েছে ২২৮০ x  ১০৮০ পিক্সেল, অনুপাত দেয়া হয়েছে ১৯:৯। কন্ট্রাস্ট আর কালার অ্যাকুরেসি ডিসপ্লেটির যথেষ্ট ভাল, বিশেষ করে মূল্যের এটি সেরা ডিসপ্লের একটি। তবে নচ অনেকের কাছেই দৃষ্টিকটু লাগতে পারে। তবে ডিসপ্লেটি অন্যান্য ফোনের মত ১৮:৯ না করে ১৯:৯ করার ফলে নচ শুধুমাত্র স্ট্যাটাসবার পর্যন্তই থাকবে, অ্যাপের কোনও অংশ ঢাকা পড়বে না।

পারফরমেন্স

মিডিয়াটেক হেলিও পি৬০ প্রসেসরের অপ্পো এফ৭কে উচ্চ-মাঝারি পারফরমেন্সের ডিভাইস বলা যেতে পারে। কর্টেক্স এ৭৩ ও এ৫৩, দুই প্রযুক্তির চারটি করে সর্বমোট আটটি কোর সমৃদ্ধ প্রসেসরটির গতি ২ গিগাহার্জ, যা অন্তত প্রসেসিং ক্ষমতার জন্য পিছিয়ে থাকবে না।

গিকবেঞ্চ অনুযায়ী, অপ্পো এফ৭ পেয়েছে সিঙ্গেল কোরে ১৫৯০ পয়েন্ট আর মাল্টিকোরে ৫৮৭০ পয়েন্ট। সেদিক থেকে ডিভাইসটি স্ন্যাপড্রাগন ৬৬০ এর সমকক্ষ।

মালি জি৭২ এমপি৩ জিপিউটি সমমানের অ্যাড্রিনো ৫১২ জিপিউর চেয়ে পারফরমেন্সে পিছিয়ে আছে, তবে খুব বেশি নয়। গেইম খেলার সময় ল্যাগ পাওয়া যাবে না ঠিকই, তবে আল্ট্রা গ্রাফিক্স বা কিছু নতুন গেইমের ক্ষেত্রে, যেমন প্লেয়ার আননোনস ব্যাটলগ্রাউন্ডসের ক্ষেত্রে মিডিয়াম গ্রাফিক্সের ওপর যাওয়া উচিত হবে না।

র‍্যামের ঘাটতি আজকাল কোনও মাঝারি মূল্যের ফোনেই নেই, অপ্পো এফ৭ ব্যতিক্রম নয়। আজও ৪ গিগাবাইট র‍্যাম যথেষ্ট, যারা ৬ গিগাবাইট র‌্যাম সংস্করণ কিনবেন তারা আরও বেশি অ্যাপ একসঙ্গে চালাতে পারবেন, এটাই পার্থক্য।

সব মিলিয়ে, পারফরমেন্সে অপ্পো এফ৭ পিছিয়ে নেই। ফোনটি কেনার পর অন্তত স্পিড বা ল্যাগ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। তবে মিডিয়াটেক প্রসেসর কিছুটা গরম হতে পারে, বা কিছু কিছু অ্যাপে করতে পারে ল্যাগ তবে তা অ্যাপের ডিজাইনের কারণে, প্রসেসরের ক্ষমতা কম তা নয়।

ফোনটিতে দেয়া হয়েছে কালার ওএস ৫, যা তৈরি করা হয়েছে অ্যান্ড্রয়েড ৮.১ ওরিও কাস্টমাইজ করে। বড় বড় রঙিন আইকন আর প্রচুর রঙচঙে ইন্টারফেইস সবার ভালো নাও লাগতে পারে, তবে অন্তত ফোনটির বাইরের সঙ্গে ইন্টারফেইস মানিয়েছে বেশ।

ক্যামেরা

সেলফি ক্যামেরা ফোনটির মূল আকর্ষণ হলেও পেছনের ক্যামেরার দিকে অপ্পো আরও একটু নজর দিতে পারত। এ সময় ডুয়াল ক্যামেরার বদলে সিঙ্গেল ক্যামেরা ব্যবহার কিছুটা বেমানান, তবে তার মান যথেষ্ট ভালো। পেছনের ক্যামেরার রেজুলেশন দেয়া হয়েছে ১৬ মেগাপিক্সেল, আর অ্যাপার্চার এফ/১.৮।

স্বল্প আলোতেও ক্যামেরাটি সুন্দর ছবি ধারণ করতে সক্ষম, বিশেষ করে নয়েজের পরিমাণ মূল্য বিচারে কম। তবে ক্যামেরাটিতে ২এক্স জুম বাটন দেখে অনেকেই ভাবতে পারেন সেটি অপটিক্যাল জুম সমৃদ্ধ, যেখানে আসলে সেটি ডিজিটাল জুম ফলে ছবি কিছুটা ফেটে যাবে।

ক্যামেরা একটি হলেও, পোর্ট্রেইট মোড বাদ পড়েনি, যদিও সাবজেক্ট ও পেছনের দৃশ্য আলাদা করতে ফোনটির একটু বেগ পেতে হয়। পেছনের ক্যামেরার মূল দুর্বলতা কোনও প্রকার স্ট্যাবিলাইজেশন না থাকায় ধারণকৃত ভিডিওতে প্রচুর ঝাঁকুনি আর ভিডিওর রেজুলেশন সর্বোচ্চ ১০৮০পিক্সেল ফুল এইচডি। এ মূল্যের আর কনফিগারেশনের ফোনে ফোরকে ও ৬০ এফপিএস ভিডিও আশা করা অস্বাভাবিক নয়।

সেলফি ক্যামেরার রেজুলেশন দেয়া হয়েছে ২৫ মেগাপিক্সেল, যার অ্যাপার্চার এফ/২.০। বলা যেতে পারে, অপ্পো এফ৭ এর এটিই মূল ক্যামেরা। হার্ডওয়্যার এইচডিআর এবং এআই বিউটি ২.০ প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ক্যামেরাটি দুর্দান্ত মানের সেলফি ধারণ করতে সক্ষম। বিশেষ করে বিউটি মোডের অল্পবিস্তর ব্যবহার করে চেহারার খুঁতগুলো ঢেকে দয়া যাবে, তবে তা দেখতে আর যাই হোক, বাস্তব মনে হবে না।

ক্যামেরাটি ভালো পরিমাণ ডিটেইল ধারণ করতে পারবে, তবে ক্যামেরার লেন্স  ওয়াইড অ্যাঙ্গেল না হওয়ায় অনেকের সঙ্গে সেলফি তোলাটা একটা চ্যালেঞ্জ। সামনের ক্যামেরাতে ধারণ করা যাবে ১০৮০পিক্সেল ভিডিও তবে এবারও স্ট্যাবিলাইজেশনের অভাব ধারণকৃত ভিডিওর মান কমিয়ে দিয়েছে।

সাউন্ড

ফোনটিতে ডুয়াল স্পিকারের অনুপস্থিতি অস্বাভাবিক নয়, তবে সিঙ্গেল স্পিকারের পারফরমেন্স আরও ভালো হতে পারত। হেডফোনে সাউন্ড কোয়ালিটি অসাধারণ নয়, তবে খারাপ বলা যাবে না। ক্যামেরাকেন্দ্রিক ফোন হওয়ায় অপ্পো সাউন্ডের দিকে বিশেষ জোর দেয়নি, ফলে সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে ফোনটি প্রথম পছন্দ নাও হতে পারে।

ব্যাটারি লাইফ

বিশাল ডিসপ্লে থাকলেও ফোনটিতে দেয়া হয়েছে ৩৪০০ এমএএইচ ব্যাটারি, যা হেলিও পি৬০ প্রসেসরের গুনে সহজেই একদিন ব্যাকাপ দিতে পারবে। তবে স্ক্রিন অন টাইন ৬ থেকে ৭ ঘণ্টার বেশি আশা করা উচিত হবে না। তবে ফোনটির মূল খারাপ দিকের একটি কোনও প্রকার ফাস্ট চার্জিং অপশন না থাকা, ফলে চার্জ ফুরিয়ে গেলে হাতে অন্তত ২ ঘণ্টা সময় রাখতে হবে ফুল চার্জ করার জন্য।

বিশেষ ফিচার

স্মার্টফোন জগতে নতুন দুটি জনপ্রিয় ফিচার এআই এবং এআর স্টিকার। অপ্পো দুটি ফিচারই ফোনটিতে দিয়েছে, তবে ফিচারগুলো কতটুকু কার্যকর ও কাজে লাগবে তা নিয়ে আছে সন্দেহ। এআর স্টিকার সেলফি ক্যামেরার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর চেহারায় নানাবিধ চিত্রকর্ম বা ইফেক্ট যুক্ত করবে, আইফোন ১০ বা স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯ প্লাসের মত স্ক্যান করে ইমোজি তৈরি নয়।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অপ্পো কাজে লাগিয়েছে ছবির সাবজেক্ট নিজ থেকেই বুঝে নিয়ে সে অনুযায়ী ক্যামেরা সেটিং ঠিক করে নেয়ার জন্য। অপ্পোর দাবি, অন্তত ১৬ ধরনের ছবি ও সাবজেক্টের লিঙ্গ ও বয়সভেদে বিশেষায়িত বিউটি ইফেক্ট দিতে সক্ষম অপ্পো এফ৭, তবে তা এখনো খুব কার্যকর নয়।

ফোনটিতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরের পাশাপাশি ফেইস আনলক দেয়া হয়েছে, যদিও তা সহজেই ছবি ব্যবহার করে বাইপাস করা সম্ভব তাই ব্যবহার না করাই শ্রেয়।

এক নজরে ভালো

  • সেলফির মান
  • পারফরমেন্স
  • ডিজাইন
  • ব্যাটারি লাইফ

এক নজরে খারাপ

  • ফোরকে ভিডিও অপশন নেই
  • ক্যামেরাতে স্ট্যাবিলাইজেশন নেই
  • ফাস্ট চার্জিং নেই

মূল্য

ফোনটির ৪ গিগাবাইট র‍্যাম ও ৬৪ গিগাবাইট স্টোরেজ সংস্করণ ২৯ ঞঅঝঅল ৯৯০ টাকাতে পাওয়া যাবে। যারা ৬ গিগাবাইট র‍্যাম আর ১২৮ গিগাবাইট স্টোরেজ সংস্করণটি কিনবেন তাদের গুনতে হবে ৩৫ হাজার ৯৯০ টাকা।

এস এম তাহমিদ

*

*

আরও পড়ুন