![]() |
টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : জনপ্রিয় ফোনগুলোর মধ্যে এখন শাওমির রেডমি নোট সিরিজ অন্যতম। এবার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শাওমি তাদের ‘রেডমি নোট ৫ প্রো’ বাজারে ছেড়েছে।
ফোনটিতে ২০১৮ সালের সকল ট্রেন্ডিং ডিজাইন ও ফিচার যুক্ত করা হয়েছে, চেষ্টা করা হয়েছে এটি যাতে সেরা মাঝারি বাজেটের ফোন হয়ে ওঠে। শাওমি কী পেরেছে সেটি করতে? দেখা যাক।
এক নজরে শাওমি রেডমি নোট ৫ প্রো
ডিজাইন
রেডমি নোট ৫ প্রো সামনে থেকে দেখতে অন্যান্য রেডমি নোট সিরিজের ফোনের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। লম্বাটে ১৮:৯ অনুপাতের ডিসপ্লে, চারপাশে চিকন বেজেল, ক্যাপাসিটিভ বাটনের অনুপস্থিতি আর ডিসপ্লের কোনাগুলো বৃত্তাকার করে দেয়ায় ফোনটির চেহারা পেয়েছে ২০১৮ সালের জন্য উপযুক্ত ডিজাইন।
পেছনের চিত্র অবশ্য ভিন্ন। ক্যামেরা ঢেকে দিলে সবাই এক নজরে একে রেডমি সিরিজের ফোন হিসেবে চিনতে পারবেন। ক্যামেরা এবার দেয়া হয়েছে বাম পাশের ওপরের অংশে, ডুয়াল ক্যামেরার সেন্সরগুলো আইফোন ১০ এর মত ডিজাইনের বাম্পে দেয়া হয়েছে। মাঝখানে দেয়া হয়েছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর।
ফোনটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নতমানের অ্যালুমিনিয়াম, সামনে আছে গরিলা গ্লাস তবে অ্যন্টেনার জন্য পেছনের উপরের ও নীচের অংশে প্লাস্টিক দেয়া হয়েছে।
ভলিউম আর পাওয়ার বাটন দেয়া হয়েছে ফোনটির ডান পাশে। বাটনগুলো শক্তপোক্ত, প্রেস করে নরম মনে হবে না। স্পিকার, মাইক্রোইউসএবি পোর্ট, হেডফোন জ্যাক আর মাইক্রোফোন দেয়া হয়েছে ফোনটির নিচে। বাম পাশে জায়গা পেয়েছে সিমকার্ড ও মেমরি কার্ড ট্রে। আর ওপরে আছে ইনফ্রারেড সেন্সর।
সব মিলিয়ে ডিজাইনে রেডমি নোট ৫ প্রো আগের চেয়ে এগিয়েছে, তবে পূর্বের ডিজাইন পুরোটা ফেলে দেয়নি।
ডিসপ্লে
বড়সড় ৫ দশমিক ৯৯ ইঞ্চি আকৃতির ডিসপ্লের রেজুলেশন দেয়া হয়েছে ২১৬০ x ১০৮০ পিক্সেল। তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে আইপিএস এলসিডি প্রযুক্তি। ডিসপ্লেটি বেজেলবিহীন না হলেও অন্তত পূর্বের মত মোটা বেজেলের মধ্যে নেই।
ডিসপ্লের কালার, ব্রাইটনেস ও কন্ট্রাস্ট খুবই উন্নতমানের, ডিসপ্লে ও ওপরের গরিলা গ্লাসের মধ্যে কোনও গ্যাপ না থাকায় ছবি ও ভিডিও সুন্দরভাবে ফুটে থাকে।
যারা ভিআর কনটেন্ট দেখতে চান, শুধু তাদের কাছেই ডিসপ্লের রেজুলেশন একটু কম মনে হতে পারে। তবে এ বাজেটের এর চেয়ে বেশি রেজুলেশনের ডিসপ্লে পাওয়া সম্ভব নয়।
পারফরমেন্স
কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৬৩৬ প্রসেসর সব ধরনের কাজের জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী। এটি কিছু কিছু দিক থেকে স্ন্যাপড্রাগন ৮২০ এর সমকক্ষ, অর্থাৎ ২০১৭ সালের ফ্ল্যাগশিপের চেয়ে ব্রাউজিং বা অন্যান্য দৈনন্দিন কাজে ফোনটি পিছিয়ে নেই। অন্তত গিকবেঞ্চের সিঙ্গেলকোর বা মাল্টিকোর পয়েন্ট তাই বলে।
অ্যাড্রিনো ৫০৯ জিপিউটি সকল গেইমের জন্য যথেষ্ট, তবে ফ্ল্যাগশিপ পারফরমেন্স আশা করা যাবে না। আনটুটু বেঞ্চমার্ক অনুযায়ী, সকল গেইম মিডিয়াম সেটিংস এ খেলা যাবে, তবে হাই বা আল্ট্রা, বিশেষ করে পিইউবিজি মোবাইলের মত ভারি গেইমের হাই সেটিংস ব্যবহার না করাই ভালো।
ফোনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে এলপিডিডিআর৪এক্স র্যাম, ফলে ৪ গিগাবাইট দ্রুতগামী র্যাম ব্যবহার করে অ্যাপ লোডিংয়ের সময়ও বাঁচবে, আবার মাল্টিটাস্কিংও হবে দ্রুত।
সব মিলিয়ে পারফরমেন্সে রেডমি নোট ৫ প্রো বাজারে থাকা আর দশটি মাঝারি মূল্যের ফোনকে পেছনে ফেলে পুরোনো ফ্ল্যাগশিপকে সহজেই ধরতে পারবে।
ক্যামেরা
শাওমির দাবি, রেডমি নোট ৫ প্রোর ক্যামেরা গুগল পিক্সেল ২ বা আইফোন ১০ এর সঙ্গে পাল্লা দেয়ার মত মানের ছবি তুলে। মাঝারি মূল্যের ফোনের তুলনায় ক্যামেরার মান ও ফিচার খারাপ না হলেও, ফ্ল্যাগশিপের সঙ্গে তুলনা করাটা ভুল।
দিনের আলো বা লাইটিং সমৃদ্ধ জায়গায় ছবি তোলা হলে তাতে ডিটেইলের পরিমাণ সঠিক ও নয়েজ কম পাওয়া গেলেও, কালারের গভীরতা ও কন্ট্রাস্টের একটা ঘাটতি দেখা গেছে। বিশেষ করে একই রঙের বিভিন্ন গভীরতা ধারণে ক্যামেরটির বেগ পেতে হয়।
তবে এসকল সমস্যা সবসময়ই থাকে তা নয়, অনেক সময় ছবির ডিটেইল আর কালার অন্যান্য ফ্ল্যাগশিপের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। অতএব সমস্যা সম্ভবত হার্ডওয়্যারের নয়, সফটওয়্যারের।
স্বল্পআলোতে নয়েজ কম থাকলেও, ডিটেইল ও কালারের গভীরতার স্বল্পতা প্রকট হয়ে ওঠে। বিশেষ করে আলোর তারতম্যের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে ক্যামেরার অনেক সময় লেগে যায়।
তবে ফোকাস করা বা ছবি ধারণ করার জন্য সময় নষ্ট করে না রেডমি নোট ৫ প্রো। দ্রুততার সঙ্গে ছবি তোলার জন্য ফোনটি কাজের।
সেলফি ক্যামেরার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য, তবে ২০ মেগাপিক্সেল রেজুলেশন ছবির ডিটেইলের ঘাটতি পুষিয়ে দিতে সক্ষম।
পোর্ট্রেইট মোড, ডেপথ অফ ফিল্ড বা বোকেহ, যে নামেই ডাকা হোক না কেন, ফিচারটি সামনের ক্যামেরা ও পেছনের ক্যামেরা দুটিতেই কাজ করে। তবে এজ ডিটেকশন ও বাস্তবসম্মত বোকেহ-এর ঘাটতি রয়েছে কিছুটা। তবে মূল্য অনুযায়ী তা মেনে নেয়া যায়।
ভিডিওতে ফোরকে রেজুলেশন নেই। তবে শাওমি জানিয়েছে, পরের আপডেটে তা যুক্ত করা হবে। অপ্টিক্যাল স্ট্যাবিলাইজেশনের ঘাটতি পুষিয়ে দেবে ইলেক্ট্রনিক স্ট্যাবিলাইজেশন, তবে ডিটেইলের ঘাটতি ভিডিওগুলোর ব্যবহারযোগ্যতা কমিয়ে দেবে।
সবমিলিয়ে, বাজেটের মধ্যে সেরা পোর্ট্রেইটমোড সমৃদ্ধ ফোন রেডমি নোট ৫ প্রো তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে ফ্ল্যাগশিপের সঙ্গে তুলনা করার মত নয়।
সাউন্ড
সাউন্ডের দিক থেকে বলা যায়, রেডমি নোট ৫ প্রো বেশ এগিয়ে আছে। স্পিকারের ভলিউম অসাধারণ কিছু না হলেও, হেডফোনে গানের মান ও ভলিউম দুটোই চমৎকার। বিশেষ করে মনের মতো ইকুইলাইজার সেট করে নিলে ভালো মানের হেডফোনের সঙ্গে উচ্চমানের অডিও পাওয়া যাবে।
ব্যাটারি লাইফ
ওয়াইফাই ও মোবাইল ডেটা দুটো ব্যালেন্স করে ব্যবহার করলে ফোনটি থেকে অন্তত ৮ ঘণ্টা স্ক্রিন অন টাইম পাওয়া যাবে। টানা মোবাইল ডেটা ব্যবহার করলে অবশ্য তা ৬ ঘণ্টায় নেমে যেতে পারে। ব্যাকাপ দেয়ার জন্য ৪০০০ এমএএইচ ব্যাটারি কম নয়, অন্তত দুই দিন ব্যাকাপ পাওয়ার আশা করা যায়।
চার্জিং ততটা সন্তোষজনক নয়। কুইকচার্জ ৩ না থাকা দুঃখজনক, বক্সে কুইকচার্জ সমর্থিত চার্জার না থাকা আরও বিরক্তিকর। কুইকচার্জ সমৃদ্ধ চার্জার ব্যবহার করেও ব্যাটারি ০-৫৫ শতাংশ চার্জ হতে সময় নিয়েছে ১ ঘণ্টা।
পরিশেষ
বাজেটের মধ্যে ফ্ল্যাগশিপ পোর্ট্রেইট ক্যামেরা যারা চাচ্ছেন, তাদের জন্য রেডমি নোট ৫ প্রো হতে পারে আদর্শ। তবে একই মূল্যে শাওমি এমআই এ১, এমআই ৫এক্স, হুয়াওয়ে নোভা ২আই, অপ্পো এফ৩ ফেলনা নয়। ব্যাটারি লাইফে অবশ্য রেডমি নোট ৫ প্রো রয়েছে এগিয়ে।
মূল্য
আনুষ্ঠানিকভাবে ফোনটি এখনো দেশের বাজারে আসেনি, তবে বাজারে অনানুষ্ঠানিকভাবে ২৪ হাজার থেকে ২৬ হাজার টাকার মধ্যে স্পেসিফিকেশন ও রংভেদে পাওয়া যাচ্ছে।
এক নজরে ভালো
এক নজরে খারাপ
ডিজাইনটা অনেক সুন্দর লেগেছে আমার কাছে …
আমার কাছে সুন্দর লেগেছে
আমি একটি ফোন ব্যাবোহার করতে চাই
Thanks.