সারফেস ল্যাপটপ : কিঞ্চিৎ কিন্তুর পরও দুর্দান্ত, দামটাও ভালো

এস এম তাহমিদ, টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : সারফেস প্রো ট্যাব ও সারফেস বুক ল্যাপটপ হাইব্রিডের পর সবাই অপেক্ষায় ছিলেন, কবে মাইক্রোসফট ল্যাপটপ বানাবে। অবশেষে প্রচলিত ল্যাপটপ বাজারে এনেছে টেক জায়ান্টটি, অবশ্যই নিজস্ব ডিজাইনে।

চলুন দেখা যাক আর দশটি ল্যাপটপের চেয়ে কেন সারফেস ল্যাপটপ আলাদা।

Techshohor Youtube

এক নজরে মাইক্রোসফট সারফেস ল্যাপটপ

  • ইন্টেল ৭ম প্রজন্মের প্রসেসর, কোর আই৫ অথবা কোর আই৭। দুটোই ডুয়াল কোর, হাইপারথ্রেডিং করা।
  • ৪, ৮ অথবা ১৬ গিগাবাইট ডিডিআর৪ র‌্যাম
  • ১২৮ থেকে ৫১২ গিগাবাইট পর্যন্ত এনভিএমই প্রযুক্তির এসএসডি
  • ইন্টেল এইচডি ৬২০ অথবা এইচডি ৬৪০ গ্রাফিক্স
  • আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লে, ১৩ দশমিক ৫ ইঞ্চি, ৩:২ অনুপাতের ২২৫৬ x ১৫০৪ পিক্সেল রেজুলেশন
  • ফুল টাচ স্ক্রিন, সারফেস পেন ব্যবহারের সুবিধা
  • ইউএসবি ৩ পোর্ট, মিনি ডিসপ্লে পোর্ট, সারফেস কানেক্ট পোর্ট, হেডফোন জ্যাক
  • ওয়েবক্যাম, উইন্ডোজ হ্যালো ফেইস রিকগনিশন ক্যামেরা
  • ডুয়ালব্যান্ড ওয়াইফাই, ব্লুটুথ ৪
  • ব্যাকলাইট সমৃদ্ধ কিবোর্ড, প্রিসিশন টাচপ্যাড
  • কাপড়ে মোড়ানো কিবোর্ড
  • ১৪ ঘণ্টার ওপর ভিডিও চালানোর মত ব্যাটারি লাইফ
  • উইন্ডোজ ১০ এস অপারেটিং সিস্টেম
  • মাত্র এক দশমিক ২ কেজি ওজন

ডিজাইন

খুবই পাতলা ল্যাপটপটি রঙের কারণে শুরুতেই নজর কাড়বে। লালচে বারগান্ডি, রূপালি প্ল্যাটিনাম, কোবাল্ট নীল ও কালচে সোনালি গ্রাফাইট গোল্ড রঙের ফিনিস দেওয়া অ্যালুমিনিয়ামে তৈরি করা হয়েছে ডিসপ্লে অংশটি।

ঠিক তার মাঝখানে আছে উইন্ডোজ লোগো। কিবোর্ড ও নিচের অংশটি একই রঙের কাপড়ে মোড়ানো। অ্যালকানটারা কাপড় ব্যবহার করে মাইক্রোসফট সারফেস সিরিজ আগেও সমাদৃত হয়েছে।

ডানপাশে দেওয়া হয়েছে সারফেস কানেক্টর, বামে ইউএসবি পোর্ট, মিনিডিসপ্লে পোর্ট ও হেডফোন জ্যাক।

যারা শক্তপোক্ত, সহজে বহনযোগ্য ও মূল কথা নজর কাড়া ডিজাইনের ল্যাপটপ খুঁজছেন তাদের জন্য সারফেস ল্যাপটপটি আকর্ষনীয়। তবে কাপড়ের কিবোর্ড দ্রুতই ক্ষয় হয়ে ময়লা হয়ে যেতে পারে, সেদিকে নজর রাখতে হবে।

ডিসপ্লে

প্রায় চারকোনা ৩:২ অনুপাতের ডিসপ্লে ওয়েব ব্রাউজিং বা অফিসের কাজের জন্য দুর্দান্ত। খুব বেশি স্ক্রল না করেই ডিসপ্লেতে প্রচুর তথ্য একসঙ্গে দেখা যায়।

ডিসপ্লের ব্রাইটনেসও দুর্দান্ত, কালার অ্যাকুরেসি ও পিক্সেল ঘনত্ব বাজারের বেশিরভাগ ল্যাপটপের চেয়েই এগিয়ে। তবে মুভি দেখার জন্য এ অনুপাতের ডিসপ্লে আরামদায়ক নয়। আর গ্লসি হওয়ায় সরাসরি রোদে দেখা একটু কষ্টকর।

পারফরমেন্স

আল্ট্রাবুক হিসেবে যেটুকু পারফরমেন্স আশা করা যায়, তার সবটুকুই আছে এ ডিভাইসে। কেনার সময় অবশ্য অন্তত ৮ গিগাবাইট র‌্যাম সংস্করণ কেনা উচিত।

সপ্তম প্রজন্মের ইন্টেল কোর আই৫ বা আই৭ প্রসেসরগুলো অনায়েসে সকল প্রকার অফিস, হালকা প্রোগ্রামিং বা ছবি এডিটিংয়ের মতো কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন।

একই সঙ্গে এটি ভিডিও এডিটের ক্ষেত্রেও তেমন পিছিয়ে পড়বে না। বিশেষ করে ৫১২ গিগাবাইট স্টোরেজ ও ১৬ গিগাবাইট র‌্যাম সমৃদ্ধ কোর আই৭ প্রসেসরের সারফেস বুক ভিডিও এডিটের জন্যও কাজের। যদিও জিপিউ না থাকায় ভিডিও রেন্ডারিং, থ্রিডি গ্রাফিক্সের কাজের জন্য ল্যাপটপটি সঠিক নয়।

সারফেস ল্যাপটপটি তৈরি করা হয়েছে সহজে বহনযোগ্য হালকা কম্পিউটার হিসেবে, সেদিক থেকে এটি এগিয়ে আছে। অবশ্য টানা চাপে কাজ করার জন্য ল্যাপটপটি উপযুক্ত নয়।

অপারেটিং সিস্টেম

উইন্ডোজ ১০ এস অপারেটিং সিস্টেমের মূল সীমাবদ্ধতা অ্যাপ স্টোরের বাইরে কোনও অ্যাপ ব্যবহার করার উপায় নেই। অবশ্য মাইক্রোসফটের কাছে আবেদন করে উইন্ডোজ ১০ প্রো ইন্সটল করা যাবে। ল্যাপটপটি কেনার পর সেটাই হওয়া উচিত প্রথম কাজ।

হার্ডওয়্যার বিশেষত্ব

টানা টাইপ করার জন্য কাপড়ে মোড়ানো চিকলেট কিবোর্ডটি খুবই আরামদায়ক। যারা অল্প চাপ দিয়ে কিবোর্ডে টাইপ করে অভ্যস্ত তাদের কিবোর্ডটি হাতে আসতে একদমই সময় লাগবে না। বিশেষ করে যারা ম্যাকবুকের একদমই ট্রাভেলহীন বাটন ব্যবহার করে অসন্তুষ্ট, তাদের কাছে এটি ভালো লাগবে।

ফেইস রিকগনিশন ভালোভাবে কাজ করে, বিশেষ করে স্বল্প আলোতেও কাজ করতে সক্ষম। এ ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড লক বা ফিঙ্গারপ্রিন্টের মত দ্রুত বা নির্ভুল নয়, তা মনে রাখতে হবে।

টাচস্ক্রিন ও সারফেস পেন ব্যবহার করা গেলেও, ডিসপ্লে পুরোপুরি ভাঁজ করার উপায় না থাকায় আঁকাআঁকি বা ট্যাবের মতো ব্যবহার করার কোনও উপায় নেই। শুধু মাউসের বদলে সরাসরি ডিসপ্লেতে টাচ করে কাজ করার ফিচারটি দারুণ।

সাউন্ড

সারফেস সিরিজের স্পিকারগুলো পরিষ্কার ও জোরালো সাউন্ডের জন্য সমাদৃত, এটিও ব্যতিক্রম নয়। ডিসপ্লের দু’পাশে না দিয়ে স্পিকারগুলো কিবোর্ডে দেয়ায় সারফেস প্রো-এর মত সাউন্ড এটি দিতে অক্ষম। ম্যাকবুক এ দিক থেকে বেশ এগিয়ে।

হেডফোনে সাউন্ডের মান ও পরিমাণ দুটোই সন্তোষজনক। মাইক্রোসফটের কাছ থেকে আরও ভালো আশা করাই যায়, বিশেষ করে মূল্য অনুযায়ী।

ব্যাটারি লাইফ

এ দিক থেকে মাইক্রোসফটের দাবি ও সত্যিকার পারফরমেন্সে বেশ তফাত আছে। টেক জায়ান্টটির দাবি টানা ১৪ ঘণ্টা এটি ব্যবহার করা যাবে, দৈনন্দিন কাজে সেখানে ব্যাটারি লাইফ পাওয়া গেছে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা। আজকের যুগে আল্ট্রাবুকের থেকে আরও বেশি ব্যাটারি লাইফ আশা করা যায়।

পরিশেষ

সারফেস ল্যাপটপের মূল সমস্যা দুটি। একটি এর অপারেটিং সিস্টেম। বাড়তি ৫০ ডলার খরচ না করলে ল্যাপটপের হার্ডওয়্যার পূর্ণাঙ্গভাবে ব্যবহারের উপায় নেই। টেক জায়ান্টটির উচিত ছিল শুরুতেই ল্যাপটপে উইন্ডোজ ১০ প্রো ব্যবহার করা।

দ্বিতীয়টি হচ্ছে, ল্যাপটপটি খোলার কোনও উপায় নেই। ব্যাটারি বদল করতে হলেও কাপড় কেটে খুলে নতুন করে কাপড় লাগাতে হবে। এটি খুবই দুঃখজনক।

তৃতীয় সমস্যাটি যদিও তেমন প্রকট নয়। তা হচ্ছে, ইউএসবি সি পোর্ট বা থান্ডারবোল্ট ৩ প্রযুক্তির অভাব। আজকাল প্রায় সব ডিভাইসেই ইউএসবি টাইপ সি পোর্ট আছে, থান্ডারবোল্ট ৩ পোর্ট থাকলে সহজেই বাড়তি গ্রাফিক্স কার্ড যুক্ত করে ল্যাপটপটির ক্ষমতা বাড়ানো যেত।

মূল্য

ল্যাপটপটির মূল্য ৯৯৯ ডলার থেকে শুরু হয়ে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬৯৯ ডলার পর্যন্ত।

*

*

আরও পড়ুন