![]() |
টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : ফোনের পর ল্যাপটপ বাজারেও সাড়া ফেলেছে শাওমি। জনপ্রিয় চীনা কোম্পানিটি স্মার্টফোনের মতো মুন্সিয়ানা দেখাতে চায় ল্যাপটপেও।
যদিও তাদের প্রথম ল্যাপটপ এমআই নোটবুক এয়ার তেমন শক্তিশালী ছিল না। নতুন নোটবুক প্রোতে তা কাটিয়ে উঠতে পেশাজীবীদের জন্য দেওয়া হয়েছে যথেষ্ট শক্তিশালী স্পেসিফিকেশন।
তবে শাওমি মানেই সাধ্যের মধ্যে, তা হয়ত এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। চলুন দেখা যাক ৯৪,৯০০ টাকায় চীনা অ্যাপল খ্যাত ব্র্যান্ডটি কি দিচ্ছে। ল্যাপটপে নতুনত্ব রয়েছে, নাকি অ্যাপলের ছায়া রয়ে গেছে গেছে এ ডিভাইসের বেলাতেও।
এক নজরে এমআই নোটবুক প্রো
ডিজাইন
ডিজাইনে ম্যাকবুকের সঙ্গে মিল প্রচুর। পেছনে অ্যাপল লোগো বসিয়ে দিলে অনেকেই একে মার্কিন ব্র্যান্ডটির তৈরি ডিভাইস বলে ভুল করবেন। অ্যাপলের মতো অবশ্য পোর্ট কমানোতে বিশ্বাসী নয় শাওমি। তাই ডিভাইসের চারপাশেই আছে সবগুলো প্রয়োজনীয় পোর্ট।
অ্যালুমিনিয়াম বডির ল্যাপটপটির তৈরির মান খুবই ভালো। বডির প্রায় কোথাওই শাওমির কোনও ব্র্যান্ডিং নেই।
এতে ব্যবহার করা হয়েছে চিকলেট ঘরানার ব্যাকলাইটসহ কিবোর্ড। সুইচগুলো অন্যান্য ল্যাপটপের মতো গভীরে নেমে যায়, ম্যাকবুকের মতো ভেসে থাকা সুইচ নয়। ট্র্যাকপ্যাড দেওয়া হয়েছে বড়সড়, তার মধ্যেই আছে ফিংগারপ্রিন্ট সেন্সর।
টাইপিং বা স্ক্রলিং, দুটি কাজই যাতে আরামে করা যায় সেভাবেই তৈরি করা হয়েছে। ট্র্যাকপ্যাড নতুন ম্যাকবুকের মতো এত বড় নয়।
ডিসপ্লের বেজেলও কমানো হয়েছে অনেকটুকু। কালো বর্ডারযুক্ত কাঁচের মধ্যে আছে ১৫ দশমিক ৬ ইঞ্চি ডিসপ্লে। শুধু ডিসপ্লের নিচের বেজেলেই দেখা মিলবে এমআই লোগোর।
সব মিলিয়ে ল্যাপটপটি পাতলা, হালকা, শক্তপোক্ত ও খুবই আকর্ষণীয় ডিজাইনের। তবে ডিজাইন মৌলিক নয়, বরং ম্যাকবুক প্রোর মত।
ডিসপ্লে
ফুল এইচডি রেজুলেশনের আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লের কালার ও কন্ট্রাস্ট যথেষ্ট ভালো। কাত করে ১৭৮ ডিগ্রি পর্যন্ত অ্যাঙ্গেলে স্পষ্ট দেখা যায়।
এ দামে ফুল এইচডির চেয়ে বেশি রেজুলেশনের প্যানেল সমৃদ্ধ ল্যাপটপ তেমন নেই। ফলে রেজুলেশনে ঘাটতি মনে হবে না; কিন্তু এর সঙ্গে মাইক্রোসফট সারফেস বা ম্যাকবুকের রেটিনা ডিসপ্লের তুলনা অনুচিত।
ডিসপ্লের ব্রাইটনেস ৩০০ নিট, যা বাজেট ল্যাপটপ বা মাঝারি মূল্যের চেয়ে বেশি হলেও, লাখ টাকার উপরের ল্যাপটপের চেয়ে কম।
সরাসরি রোদে ব্যবহার করতে একটু কষ্ট হবে, কেননা ডিসপ্লেটি খুবই গ্লসি। কাজের সময় লাইট বা জানালার দিকে পিঠ না দেয়াই উচিত।
কালার অ্যাকুরেসি খুবই সাধারণ মানের। যারা এডোবি আরজিবি বা ডিসিআই-পি৩ কালারের ডিসপ্লে খুঁজছেন তাদের জন্য নয় এমআই নোটবুক প্রো।
পারফরমেন্স
ইন্টেল কোর আই৭ ৮ম প্রজন্মের প্রসেসরগুলো সব কোয়াডকোর। এ কারেণ পারফরমেন্স ৭ম প্রজন্ম ও আগের প্রসেসরগুলোর প্রায় দ্বিগুণ। প্রায় সব ধরনের কাজ এ ডিভাইসে স্বাচ্ছন্দে করা যাবে।
ভিডিও এডিটিংয়ের মতো ভারি কাজও প্রসেসরটি চালিয়ে নিতে পারবে সমস্যা ছাড়াই।
র্যামের ঘাটতিও নেই। ডিডিআর৪ প্রযুক্তির ১৬ গিগাবাইট র্যাম আজও ভিডিও এডিটিং, অ্যানিমেশনের মতো কাজের জন্য চলনসই ধরা হয়। বিশেষ করে ল্যাপটপে ১৬ গিগাবাইটের ওপর র্যাম সহজে দেখাও যায় না।
ডিডিআর৪ র্যাম এলপিডিডিআর৩-এর চেয়ে দ্রুত কাজ করতে সক্ষম। দৈনন্দিন কাজে র্যামের গতি তেমন চোখে না পড়লেও, ভারি অ্যাপ্লিকেশন চালানাের সময় গতির প্রয়োজনীয়তা বোঝা যাবে।
এটি এনভিএমই এসএসডি সমর্থন করে। ১০০০ মেগাবাইটের ওপর রিড ও রাইট করতে সক্ষম প্রতি সেকেন্ডে। প্রয়োজনে আরও একটি এসএসডি লাগানোর স্লটও দেওয়া আছে।
সব মিলিয়ে পারফরমেন্সে বেশ এগিয়ে আছে এ নোটবুক।
গেইমিং ও গ্রাফিক্স
এনভিডিয়া এমএক্স১৫০ গেইমিংয়ের জন্য তৈরি করা হয়নি, অন্তত এনভিডিয়ার তাই দাবি। যাতে একে কেউ গেইমিং মনে না করে সেজন্য নাম থেকে জিটিএক্স বা জিফোরসই সরাসরি বাদ দেয়া হয়েছে। এরপরও এমএক্স১৫০ বেশিরভাগ গেইম লো গ্রাফিক্স ও ৭২০পি রেজুলেশনে চালাতে সক্ষম।
শুধু সর্বশেষ হাই গ্রাফিক্স গেইম, যেমন অ্যাসাসিন্স ক্রিড অরিজিনস বা ঘোস্ট রিকন ওয়াইল্ডল্যান্ডস চালাতে বেগ পেতে হবে। বাকি গেইমগুলো অন্তত ৩০ এফপিএসে খেলা যাবে।
এমএক্স১৫০ ডেস্কটপের জিটি১০৩০-এর কাছাকাছি পারফরমেন্স দেখাতে সক্ষম। রেডিওন আরএক্স ৪৬০ বা ৫৫০ এর চাইতে কিছুটা ভাল পারফরমেন্স দেখিয়েছে।
গেইম খেলার জন্য তৈরি করা হয়নি এনভিডিয়া এমএক্স১৫০। এটি মূলত ভিডিও রেন্ডারিং বা থ্রিডি মডেল নিয়ে কাজ করার জন্য তৈরি। তাই এটি কাজ চালানোর মতো ফুল এইচডি ভিডিও রেন্ডার করে দেখিয়েছে। শুধু সিপিউর ওপর নির্ভর করার চেয়ে অন্তত ৫০ শতাংশ কম সময় ভিডিও রেন্ডার করা যাবে।
ব্যাটারি লাইফ
টানা ব্যবহারের জন্য ল্যাপটপটি খুবই ভালো। কাজের চাপ থাকলেও অন্তত সাত ঘন্টা ব্যাটারি লাইফ পাওয়া যাবে। হালকা কাজে ১০ ঘন্টা সহজেই পার করতে পারবেন। যাদের কাজের তাগিদে বাইরে থাকতে হয়, তারা কিনতে পারেন।
থার্মাল ডিজাইন
ডুয়াল ফ্যানের ল্যাপটপটি একমাত্র গরম হতে দেখা গেছে গেইম খেলার সময়। জিপিউ ও সিপিউতে এক সঙ্গে চাপ পরলে ল্যাপটপ গরম হতে বাধ্য। তার পরও গরমের কারণে স্লো হয়ে যাওয়ার পরিমাণ নগণ্য।
ডিভাইসটির ভেন্ট পেছনে হওয়ায় হাত রাখার জায়গা অস্বাভাবিক গরম হয় না। আর অ্যালুমিনিয়াম বডির ল্যাপটপ গরম হবে সেটাই স্বাভাবিক।
সাউন্ড
মূল্য অনুযায়ী স্পিকার যথেষ্ট ভালো মানের। সাউন্ডের পরিমাণ হেডফোন কিংবা স্পিকারে আরও বেশি হতে পারত। বিশেষ করে হেডফোনের সাউন্ডে বেশ ঘাটতি রয়েছে। স্পিকার ব্যবহার করে অন্তত ব্যস্ততার মাঝে ভিডিও দেখা সুখকর হবে না।
পরিশেষ
প্রায় এক লাখ টাকায় কেনা ল্যাপটপে সবাই সেরা পারফরমেন্স চাইবেন। সেক্ষেত্রে শাওমির ফোনগুলো যেমন ফ্ল্যাগশিপের স্বাদ বেশ কমিয়ে দিয়েছে, এমআই নোটবুক প্রোও তাই।
৯৪ হাজার ৯০০ টাকা দামের ডিভাইসটির পারফরমেন্স লাখ টাকার ওপরের ল্যাপটপটির সমান। কেনার সময়ই খেয়াল করে নতুন করে উইন্ডোজ ইন্সটল করে নিতে হবে। কেননা ল্যাপটপের সঙ্গে থাকা অপারেটিং সিস্টেম শুধু চীনা ভাষা সমর্থন করে।
এক নজরে ভালো
এক নজরে খারাপ
আরও পড়ুন: এসার নাইট্রো৫ স্পিন : বাজেটের মধ্যে গেইমিং টু-ইন-ওয়ান
অন্যান্য গ্যাজেট: ফিও বিটিআর১ : কিছু অতৃপ্তির পরও মাঝারি দামে মিটবে আশা