ফিও বিটিআর১ : কিছু অতৃপ্তির পরও মাঝারি দামে মিটবে আশা

টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : তারহীন অডিও নিয়ে এখনও অনেকে নাক সিটকালেও লো-ফিডেলিটি ব্লুটুথ অডিওর দিন বহু আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। যদিও একটি মানসম্মত তারহীন অডিও রিসিভার কিনতে চড়া মূল্য গুণতে হতো কয়েক দিন আগেও। সেই অবস্থা বদলে দিতে মাঝারি মূল্যে ফিও এনেছে ব্লুটুথ অডিও ড্যাক ফিও বিটিআর১।

এক নজরে ফিও বিটিআর১

  • ব্লুটুথ ৪.২
  • কোয়ালকম অ্যাপ্টএক্স কোডেক সমর্থন
  • হেডফোন জ্যাক
  • মাইক্রোইউএসবি চার্জিং
  • ৮ ঘন্টা ব্যাটারি লাইফ
  • স্টেরিও ওয়াইডেনিং ইফেক্ট
  • ৩২বিট ১৯২কিলোহার্জ হাইফাই ড্যাকচিপ
  • ১২০মিলিওয়াট পর্যন্ত সাউন্ড অ্যাম্পলিফাই

Techshohor Youtube

ডিজাইন
কালো অ্যালুমিনিয়াম বডির ক্ষুদ্র ডিভাইসটির ডিজাইন সাদামাটা হলেও দৃষ্টিনন্দন। প্রায় পুরোটা অ্যালুমিনিয়ামে তৈরি হলেও চার্জিং পোর্টের কাছে কিছু অংশে প্লাস্টিক রাখা হয়েছে, সম্ভবত ব্লুটুথ সিগন্যালের অ্যান্টেনা দেয়ার জন্য।

ডিভাইসের পেছনে শার্ট বা বেল্টের সঙ্গে আটকানোর জন্য ক্লিপ এবং সামনে রয়েছে পাওয়ার বাটন। পাওয়ার বাটন চেপেই পেয়ারিং মোড, কল রিসিভ ও স্টেরিও ওয়াইডেনিং চালু বা বন্ধ করা যাবে।

ওপরের অংশে দেয়া হয়েছে হেডফোন জ্যাক, নিচে রয়েছে চার্জিং পোর্ট এবং ডান পাশে আছে ভলিউম বাটন।

শক্তপোক্ত হলেও ফিও বিটিআর১ পানি নিরোধী নয়। তাই সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সব মিলিয়ে ডিজাইনের দিক থেকে বেশ।

সাউন্ড

বেইস : একদম সাব বেস থেকে শুরু করে মিড বেস, সবটুকুই সমানভাবে পাওয়া যাবে এতে। অডিওফাইলদের জন্য তৈরি হওয়ায় বেইস নিয়ন্ত্রণে রাখার যথাসম্ভব চেষ্টা করেছে ফিও।

তবে গান চালানোর ডিভাইসে বেইস বাড়িয়ে দিলে এর কিছুটা প্রভাব পড়বে। যারা শুধু কান না কাঁপিয়ে স্পষ্ট ও নিরপেক্ষ বেইস চান, তাদের জন্য এটি আদর্শ।

বেশ কিছু গান চালিয়ে ধারণা করা যায়, বেইসের মধ্যে ৪০-৫৫ হার্জের সাউন্ডের ওপর সর্বাধিক জোর দেয়া হয়েছে। আর সবচাইতে বেশি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে ৩০-২০ হার্জের সাব বেইস।

মিড : গানের কন্ঠ ও বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে। মিডের দিকে কোনও আপস করা হয়নি।

তবে সাউন্ডের ওয়ার্ম মিড বলতে যা বোঝায়, সেটি ফিও বিটিআর১ দেবে না। মূল সাউন্ড যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতেই কাজটি করা হয়েছে। ফলে সোর্স থেকে ইকুইলাইজ না করে সাউন্ডে ওয়ার্মথ আনা যাবে না।

ট্রেবল : ট্রেবলে অল্প পিছিয়ে আছে বিটিআর১। একদম হাই ফ্রিকুয়েন্সি ট্রেবল, অর্থাৎ ১৫,০০০ হার্জের ওপরের ট্রেবলগুলো কিছুটা অস্পষ্ট। তবে সেটি বেশিরভাগ সময় সমস্যার নয়।

সব মিলিয়ে, ফিও বিটিআর১ এটির মূল কাজ ভালভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম। মূল গানে নিজ থেকে কোনও প্রকার ইকুইলাইজার বা ডিস্টরশন যোগ করবে না এটি।

স্টেরিও সেপারেশন মোডটি বেশিরভাগ সময়ই কাজের নয়। ফলে বন্ধ রাখাই ভাল। এ মোডে সাউন্ডের মান কিছুটা কমে যেতে দেখা গেছে, বিশেষ করে বেইস ও মিডের মধ্যে পার্থক্য।

অ্যাপ্টএক্স

এ ডিভাইস কেনার আগেই খেয়াল রাখতে হবে যাতে ফোনে অ্যাপ্টএক্স সাপোর্ট থাকে। এটি না থাকলে বিটিআর১ কাজ করবে না তা নয়; কিন্তু ব্লুটুথের যেসব সমস্যা রয়েছে, যেমন মান কমে যাওয়া ও ল্যাগ, সেগুলোর কোনও উত্তরণ হবে না।

অ্যাপ্টএক্সের মাধ্যমে ল্যাগ মাত্র ২০ মিলিসেকেন্ডে নেমে আসবে। আর অ্যাপ্টএক্স কোডেক ব্যবহারে পাওয়া যাবে হাই-ফিডেলিটি সাউন্ড, যা এটি ছাড়া এসবিসি কোডেকে পাওয়া সম্ভব নয়।

ব্যাটারি লাইফ

টানা ব্যবহারে ৮ ঘন্টা ব্যাটারি লাইফ পাওয়া যাবে। গানে বেইস কম বা বেশির ওপর ব্যাটারিলাইফে তারতম্য হতে দেখা গেছে। ক্ষুদ্র ডিভাইসের তুলনায় চার্জিং টাইম দেড় ঘন্টা অবশ্য অনেক বেশি।

অন্যান্য

শুধু প্লে-পজ ছাড়া ট্র্যাক পরিবর্তনের সুবিধা নেই। হেডফোনে মাইক্রোফোন থাকলেও শুধু ফিও বিটিআর১ এর মধ্যে থাকা মাইক্রোফোনই কাজ করবে। এটি ফোনে কথা বলার ক্ষেত্রে অসুবিধাজনক।

এটি কেনার সময় তাই অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এ ডিভাইস কোনও হেডফোন নয়- শুধু তারহীন ড্যাক। ফলে এর সঙ্গে অবশ্যই মানসম্মত ৩.৫ মিলিমিটার জ্যাকের হেডফোন ব্যবহার করতে হবে।

ছবি: ফিও এ১ অ্যাম্পের পাশে বিটিআর১ ব্ল‌ুটুথ ড্যাক/অ্যাম্প

পরিশেষ
যারা বড় হেডফোনে গান শুনে অভ্যস্ত কিংবা ফোনে হেডফোন জ্যাক নেই এবং তারহীন অডিওর জন্য অ্যাডাপ্টার খুঁজছেন, তাদের জন্য ফিও বিটিআর১ স্বল্পমূল্যে ভালো সমাধান। অবশ্য সাউন্ডের মান নিয়ে যাদের মাথাব্যথা নেই, তাদের কাছে এটি অপ্রয়োজনীয় মনে হতে পারে।

মূল্য : দেশে এটি পাওয়া যাচ্ছে চার হাজার ৩০০ টাকায়।

রিভিউটি করেছেন টেক শহর ডটকমের কনটেন্ট কাউন্সিলর এস এম তাহমিদ

১ টি মতামত

*

*

আরও পড়ুন