![]() |
টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : দেশে চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবা বা ফোরজি চালু হয়েছে ১৯ ফেব্রুয়ারি। এ সেবা পেতে চাই ফোরজি উপযোগী হ্যান্ডসেট। সস্তায় একটি ফোন এনে একদম সাধারণ ব্যবহারীদের জন্য ফোরজি ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে উই।
ফোরজি চালুর আগের দিন মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন দেশীয় স্মার্টফোন নির্মাতা উই মোবাইলের সঙ্গে কো-ব্যান্ডেড ফোরজি স্মার্টফোনটি নিয়ে আসে।
চার হাজার ৪৪৪ টাকার ফোরজি ব্যবহার উপযোগী স্মার্টফোন ‘উই টি১’-এ কী কী থাকছে দেখা যাক।
এক নজরে উই টি১
ডিজাইন
শক্ত গ্লসি প্লাস্টিক ও ২.৫ডি গ্লাসে তৈরি উই টি১ গুণগতমানে এগিয়ে রয়েছে। ফোনটি জেট ব্ল্যাক ও কজমিক ব্লু দুটি রঙে পাওয়া যাচ্ছে। উভয় রঙের ফোনের প্লাস্টিকে রয়েছে গ্লসি ফিনিশ।
ফোনের ডিজাইনে অল্প কিছু কার্ভ রাখা হয়েছে, যার ফলে এটি সহজেই হাতের সঙ্গে মানিয়ে যায়। আবার গ্লসি ফিনিশের পরও পিছলে পড়ার আশঙ্কা নেই।
ফোনটির সামনে রয়েছে ৫ ইঞ্চি ডিসপ্লে, যার নিচে আছে ক্যাপাসিটিভ ন্যাভিগেশন বার। উপরে রয়েছে ইয়ারপিস, সেন্সরগুলো, ফ্রন্ট ক্যামেরা ও ফ্রন্ট ক্যামেরা ফ্ল্যাশ।
ডানে রয়েছে পাওয়ার ও ভলিউম বাটন। উপরে রয়েছে মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট ও হেডফোন জ্যাক এবং নিচে আছে স্পিকার ও মাইক্রোফোন। বাম পাশে কিছু দেয়া হয়নি। ফোনের পেছনে মাঝ বরাবর রয়েছে ব্যাক ক্যামেরা ও ফ্ল্যাশ।
ফোনটির ব্যাকপার্ট খোলার পর পাওয়া যাবে দুটি মাইক্রোসিম ও একটি মেমোরি লাগানোর স্লট এবং পরিবর্তনযোগ্য ২২০০ এমএএইচ ব্যাটারি। ব্যাটারি না খুলে অবশ্য মেমোরিকার্ড বা সিম পরিবর্তন করা যাবে না।
সবমিলিয়ে উই টি১ মূল্য অনুযায়ী ডিজাইন ও তৈরির মানে এগিয়ে রয়েছে।
ডিসপ্লে
উই টি১ এ ব্যবহার করা হয়েছে ৫ ইঞ্চি এলসিডি আইপিএস ডিসপ্লে, যার রেজুলেশন ১২৮০ x ৭২০ পিক্সেল।
ভিউইং অ্যাঙ্গেল, ব্রাইটনেসের দিক থেকে মূল্যের চেয়ে ফোনটি বেশ এগিয়ে রয়েছে। কালার ও কন্ট্রাস্টের ঘাটতিও দেখা যায়নি।
তবে ভিআর কনটেন্ট দেখার জন্য পিক্সেল ঘনত্ব যথেষ্ট নয়। এ মূল্যে তা আশা করা ঠিকও নয়।
ডিসপ্লেটির একটিই সমস্যা বলা যেতে পারে- সরাসরি আলোতে অতিরিক্ত প্রতিফলন। বাজেট ডিভাইসে তা কিছুটা মেনে নিতেই হবে। ডিসপ্লে রক্ষার জন্য রয়েছে ড্রাগন ট্রেইল গ্লাস।
সব মিলিয়ে ডিসপ্লেতে শুধু অতিরিক্ত গ্লসিনেস ছাড়া আর তেমন সমস্যা নেই।
পারফরমেন্স
মিডিয়াটেক ৬৭৩৭এম কোয়াডকোর প্রসেসরচালিত ফোনটির পারফরমেন্স দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট।
গিকবেঞ্চ অনুযায়ী প্রসেসরটির পারফরমেন্স কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৪১০-এর সমকক্ষ।
ব্রাউজিং, ভিডিও দেখা, গান শোনা বা হালকা গেইম খেলার জন্য পারফরমেন্স যথেষ্ট। একসঙ্গে স্প্লিটস্ক্রিনে ভিডিও দেখা ও অন্যান্য কাজ করার সময় অল্প ল্যাগ দেখা গেলেও কোনো অ্যাপ বন্ধ বা ফোন হ্যাং করেনি।
অ্যাপ ইন্সটল ও বড় অ্যাপ লোড হতে কিছুটা সময় লাগলেও সে সময় ফোন হ্যাং করা বা ক্র্যাশ করতে দেখা যায়নি। স্বল্পমূল্যের ডিভাইসে পারফরমেন্স ঘাটতি থাকা স্বাভাবিক। তারপরও উই টি১ ফোনটি নির্ভরযোগ্যভাবে ক্র্যাশ না করে কাজগুলো করতে সক্ষম।
সাধারণ টু-ডি গেইমের বাইরে হাইডেফিনিশন গেইম খেলার মত শক্তি ফোনটির সিঙ্গেলকোর মালি-টি৭২০ জিপিউর নেই। এ রকম মূল্যে সেটি আশা করাও অনুচিত। চলার পথে সময় কাটানোর জন্য ছোট ছোট গেইম অনায়াসে খেলা যাবে।
ফোনটির সফটওয়্যার এক গিগাবাইট র্যামকেও চমৎকারভাবে কাজে লাগিয়েছে। গান শুনতে শুনতে অন্য কাজ করার মাঝখানে হঠাৎ অ্যাপ বন্ধ হয়ে যায়নি। তবে ভারি মাল্টিটাস্কিংয়ের জন্য আরও শক্তিশালী ফোন প্রয়োজন।
সব মিলিয়ে মূল্য অনুযায়ী যেটুকু পারফরমেন্স আশা করা যায় তার চেয়ে ভালো পারফরমেন্স দেখিয়েছে উই টি১।
সাউন্ড কোয়ালিটি
সাধারণত বাজেট ফোনের সাউন্ডের মান তেমন উন্নত না হলেও টি১ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। স্পিকারে সাউন্ডের লাউডনেস ও মান চলনসই হলেও অসাধারণ নয়।
হেডফোনে গানের বেইস, ট্রেবল ও মিড চমৎকারভাবে উত্থাপন করেছে টি১। ভালো সাউন্ড পেতে হলে অবশ্যই বক্সে থাকা হেডফোনের বদলে আরও ভালো মানের হেডফোন প্রয়োজন।
ফোনটিতে আলাদা কোনো অ্যাম্প বা শক্তিশালী ড্যাক নেই বলে কম ইম্পিডেন্সের হেডফোন ব্যবহার করা উচিত।
পরীক্ষা করার জন্য ১৬ ওম ইম্পিডেন্সের হেডফোন ব্যবহার করা হয়েছে, যার মাধ্যমে হেডফোনে যথেষ্ট লাউড সাউন্ড পাওয়া গেছে। ইম্পিডেন্স বেশি বা সেন্সিটিভিটি কম এমন হেডফোনের সঙ্গে উই টি১ কম ভলিউমে সাউন্ড দিবে।
ক্যামেরা
সামনে ও পেছনে দুপাশেই ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা ও ফ্ল্যাশ ব্যবহার করেছে উই। উভয় ক্যামেরার পার্থক্য, সামনেরটিতে অটোফোকাস নেই। দুটি ক্যামেরাতেই স্বল্প আলোতে ছবি তোলার জন্য রয়েছে বিএসআই সেন্সর। দুটি ক্যামেরাতেই রয়েছে f/2.8 অ্যাপার্চারের লেন্স।
পেছনের ক্যামেরাটি কাজ চালানোর মত। ফোকাসিংয়ে সমস্যা পাওয়া না গেলেও ফোকাসিং ও চিত্রধারণ দুটোই ধীর। এ মূল্যে অবশ্য ল্যাগহীন ক্যামেরা পাওয়া যাবে না।
স্বল্পশক্তির এনার্জি সেভিং লাইটেও তোলা ছবিতে অতিরিক্ত নয়েজ বা ডিটেইলের অভাব দেখা যায়নি। দুটি ক্যামেরার ধারণ করা ছবিতেই রয়েছে ডাইনামিক রেঞ্জের অভাব। মূল্য বিচারে সেটিও মেনে নেয়া যায়।
ছবি : উপরেরটি উই টি১ এ ধারণ করা, নিচেরটি ওয়ানপ্লাস ৫
সামনের ক্যামেরার ছবিতেও ডিটেইলের অভাব নেই। দুটি ক্যামেরার মধ্যে ছবির মানে নেই কোনও পার্থক্য। সামনে ফ্ল্যাশ থাকায় অল্প আলোতেও সেলফি তোলা যাবে।
ভিডিও ধারণের দিক থেকে ফোনটি খারাপ নয়। যদিও স্ট্যাবিলাইজেশনের অভাব রয়েছে। সব মিলিয়ে ৫ হাজার টাকার কম মূল্যের ফোনে এর চেয়ে বেশি ভালো ক্যামেরা আশা করা ভুল হবে।
ব্যাটারি লাইফ
ফোনটিতে ২২০০ এমএএইচ ধারণক্ষমতার ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে, যা এমটি৬৭৩৭ প্রসেসরের সঙ্গে যথেষ্ট ভালো ব্যাটারি লাইফ দিতে সক্ষম।
ফোনটির ইন্টিলিজেন্ট ব্যাটারি সেভিং ও ডিউরোস্পিড মিলিতভাবে অন্তত ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা স্ক্রিন অন টাইম এবং দু’দিন ব্যাকআপ দিতে পারবে।
পরীক্ষা করার সময় ফোনে দুটি সিম ও ওয়াইফাই কানেকশন চালু ছিল। টানা এক ঘণ্টা বেঞ্চমার্ক ব্রাউজিং ও অন্যান্য কাজের পরও মাত্র ৮ শতাংশ ব্যাটারি কমতে দেখা গেছে।
অন্যান্য
ফোনটির গরম হয়ে যাওয়ার প্রবণতা নেই। উই ক্লাউড ও অন্যান্য উই সেবা ফোনটিকে করেছে আরও কাজের।
উই টি১-এর সঙ্গে থাকছে গ্রামীণফোনের ফোরজি ডেটা অফার, একটি ব্যাক কেইস ও হেডফোন।
মূল্য
ফোনটি ৪ হাজার ৪৪৪ টাকায় গ্রামীণফোন সেন্টারে পাওয়া যাচ্ছে।
এক নজরে ভালো
তৈরির মান
ডিসপ্লে
ব্যাটারি লাইফ
মূল্য অনুযায়ী পারফরমেন্স
এক নজরে খারাপ
গ্লসি ডিসপ্লে ও বডি, হাতের ছাপ বোঝা যায়
micro max canvas ১ এর একটি রিভিউ চাই……..symphony i nova এর একটি রিভিউ চাই…এই দুইটি সেটের ম্যধে পার্থক কেমন……
অনেক ধন্যবাদ । আপনার ইচ্ছে আমরা আমাদের সাংবাদিকদের জানিয়ে দিব ।
দুটি ফোনের মধ্যে আসলে তেমন পার্থক্য নেই, যেটা সহজে ও সল্পমূল্যে পাওয়া যাবে সেটাই নেয়া ভাল। রিভিউ শিডিউল অনুযায়ী দেয়া হবে। ধন্যবাদ, সঙ্গে থাকুন।