![]() |
টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : স্যামসাংয়ের মাঝারির চেয়ে একটু বেশি দামের ফোন সিরিজে নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে গ্যালাক্সি এ৮। এটিকে গ্যালাক্সি এস৮-এর স্বল্পমূল্যের সংস্করণ বলছেন অনেকে, কিন্তু সত্যিই কি তাই?
একটি ফ্লাগশিপের পর বেশ দ্রুতই নতুন এ মডেল নিয়ে এসেছে শীর্ষস্থানীয় এ ব্র্যান্ড। চলুন দেখা যাক ফোনটির খুঁটিনাটি।
এক নজরে স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৮
ডিজাইন
ফোনটির ডিজাইনে গ্যালাক্সি এস৮ ও এলজি জি৬ দুটোরই ছাপ রয়েছে। এটির সামনে থাকা পুরো ফ্ল্যাট লম্বাটে ডিসপ্লের গোলাকার কোনা ও বেজেলগুলো এলজি জি৬-এর কথা মনে পড়িয়ে দেবে। আর পেছনের গ্লাস ব্যাকের সঙ্গে গ্যালাক্সি এস৮-এর রয়েছে দারুন মিল।
তবে পেছনে ক্যামেরার পাশে না দিয়ে ফিংগারপ্রিন্ট সেন্সরটি দেওয়া হয়েছে এর নিচে। ফলে এটি ব্যবহার করা এস৮-এর চাইতে সহজ।
ফোনটির ডানে রয়েছে পাওয়ার বাটন ও বামে ভলিউম রকার। একটি সিম স্লট রয়েছে বামে এবং মাইক্রোএসডি কার্ড ও দ্বিতীয় সিম রয়েছে ফোনটির ওপরে।
এ ছাড়া স্পিকারটি নিচে না দিয়ে দেওয়া হয়েছে ডান পাশে। হেডফোন জ্যাক ও ইউএসবি টাইপ সি পোর্ট দেওয়া হয়েছে ফোনটির তলায়। সামনে ডিসপ্লে ক্যামেরা ও ইয়ারপিস ছাড়া আর কিছু নেই। সবটুকুই রয়েছে গরিলা গ্লাসে আচ্ছাদিত।
ডিজাইনের দিক থেকে এ৮ অনেক এগিয়ে রয়েছে। ফোনটি দেখে পুরাতন ডিজাইনের মনে হবার সম্ভাবনা নেই বরং অনেক ব্যবহারকারী এটিকে স্বল্প মূল্যের এস৮ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ডিসপ্লে
স্যামসাং সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে বরাবরই অসাধারণ কন্ট্রাস্ট ও কালার দিয়ে আসছে। গভীর ব্ল্যাক ও সরাসরি রোদে স্বাচ্ছন্দে ব্যবহারের মতো ব্রাইটনেস দিতে সক্ষম গ্যালাক্সি এ৮।
রেজুলেশনের ঘাটতি না থাকলেও তা গ্যালাক্সি এস৮ পর্যায়ের নয়। ভিআর কনটেন্টের কথা মাথায় রেখে ফোনটি তৈরি করা হয়নি।
ডিসপ্লের আকৃতি ও রেজুলেশন মাল্টিটাস্কিংয়ের জন্য কার্যকর। দুটি অ্যাপ এক সঙ্গে ব্যবহার করার সময় সেগুলো চাপা মনে হবে না।
সব মিলিয়ে ডিসপ্লেটি মূল্য অনুযায়ী অসাধারণ, ফ্ল্যাগশিপ পর্যায়ের।
পারফরমেন্স
এক্সিনস ৭৮৮৫ প্রসেসরটি কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৬৬০-এর চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে। গিকবেঞ্চ অনুযায়ী এর সিঙ্গেল কোর পারফরমেন্স ১৫৬০ পয়েন্ট ও মাল্টিকোর পারফরমেন্স ৪৪৮০ পয়েন্ট।
তুলনা করে বলা যেতে পারে, স্ন্যাপড্রাগন ৮২০-এর সিঙ্গেলকোর ১৮০০ পয়েন্ট ও মাল্টিকোর এরূপ ৪৪০০ পয়েন্ট। মূলত ব্যাটারি সাশ্রয়ী কর্টেক্স এ৫৩ কোরের জন্য সিঙ্গেলকোর পারফরমেন্স কিছুটা পিছিয়ে ও কর্টেক্স এ৭৩ কোর থাকায় মাল্টিকোরে প্রসেসরটি এগিয়ে রয়েছে।
দৈনন্দিন কাজের জন্য অবশ্য এটি যথেষ্ট, কোনও অ্যাপই ল্যাগ করার কথা নয়।
ডিসপ্লের রেজুলেশনের তুলনায় মালি জি৭১ ডুয়ালকোর জিপিউটি এগিয়ে নেই। গেইম খেলার সময় ল্যাগ না করলেও খুব বেশি ফ্রেমরেটে গেইম চালানো যাবে না। ইন্টারফেইসে অবশ্য ল্যাগ পাওয়া যায়নি।
আনটুটু বেঞ্চমার্ক অনুযায়ী ফোনটির স্কোর ৮৫,৫০০। মাঝারি ফোনের পারফরমেন্স রেঞ্জের মাঝেই রয়েছে।
৬ গিগাবাইট র্যাম আজও ফ্ল্যাগশিপ পর্যায়ের। ফলে মাল্টিটাস্কিং নিয়ে চিন্তা নেই।
অডিও
মাত্র একটি স্পিকার তাও ফোনের পাশে দেওয়ার ফলে লাউডস্পিকার পারফরমেন্সে ঘাটতি রয়েছে। কেননা হাতের আঙুলের নিচে স্পিকারটি চাপা পড়ে যেতে পারে। তবে স্পিকরের জোর কম নয়, ৮১ ডেসিবেল পর্যন্ত সাউন্ড পাওয়া যাবে।
হেডফোনে আউটপুট খুবই উন্নতমানের। ফ্রিকোয়েন্সি রেসপন্সে কোনও ব্যাতিচার নেই। বেইস থেকে ট্রেবল ও ভোকাল সবটুকুই সমানভাবে পাওয়া যাবে। হেডফোনের ভলিউমে কিছুটা কমতি রয়েছে। তাই হেডফোন অ্যাম্প ব্যবহার করতে হতে পারে।
ক্যামেরা
সামনে ডুয়াল ক্যামেরা সমৃদ্ধ ফোনের পেছনে একটি ক্যামেরা দেওয়া অস্বাভাবিক। তবে এ ক্ষেত্রে পেছনের ক্যামেরা একাই দুর্দান্ত পারফরমেন্স দেখিয়েছে।
পেছনের ক্যামেরা দিনে ও রাতে সমানভাবে নয়েজবিহীন ছবি তুলতে সক্ষম। কালার ও কন্ট্রাস্ট, ডিটেইল সব কিছুই প্রায় এস৮-এর সমকক্ষ। শুধু ছবি তোলার গতিতে রয়েছে ঘাটতি।
ভিডিওতে ফোনটি বেশ পিছিয়ে রয়েছে। এর চাইতে কম মূল্যের ফোন আজকাল ফোরকে রেজুলেশনে ভিডিও করতে সক্ষম। এটি দিয়ে ১০৮০পি ৩০ এফপিএস-এর বেশি ভিডিও করা কঠিন।
মানের দিক থেকে অবশ্য ভিডিও খুবই উন্নত, ডিটেইলের অভাব নেই। যদিও অপ্টিক্যাল স্ট্যাবিলাইজেশনের অভাব ভোগাবে।
সামনের ডুয়াল ক্যামেরা পোর্ট্রেইট সেলফি তোলার জন্য ভালোভাবে কাজ করে। অটোফোকাস না থাকলেও স্যামসাংয়ের নিজস্ব ইচ্ছেমত আর্টিফিশিয়াল ফোকাস ও বোকেহ করা যাবে।
ডিটেইল ও কালার কন্ট্রাস্ট যথেষ্ট ভাল। সব মিলিয়ে ক্যামেরাতে এ৮ এগিয়ে রয়েছে।
ব্যাটারি লাইফ
মাঝারি ক্ষমতার চিপসেট ও ৩৫০০ এমএএইচ ব্যাটারির ফোনটি ভালো ব্যাটারি লাইফ দেখিয়েছে। অনায়াসে একদিন ছয় ঘন্টা পর্যন্ত স্ক্রিন অন পাওয়া যাবে।
পরিশেষ
আনুষ্ঠানিক মূ্ল্য তালিকা অনুযায়ী গ্যালাক্সি এ৮ মাঝারির চেয়ে একটু বেশি দামের ফোন। এ দামে বাজারে চীনা নির্মাতাদের আরও ভালো পারফরমেন্সের বেশ কিছু ফোন রয়েছে।
মূল্য : শোরুমে ফোনটির দাম ৬৫ হাজার ৯০০ টাকা।
এক নজরে ভালো
এক নজরে খারাপ
রিভিউটি তৈরি করেছেন টেক শহর ডটকমের কনটেন্ট কাউন্সিলর এস এম তাহমিদ