হুয়াওয়ে কালার ব্যান্ড এ২ : নতুন প্রজন্মের চলনসই হাতঘড়ি

এস.এম. তাহমিদ, টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে স্মার্টব্যান্ড বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। স্বল্পমূল্যের স্মার্টব্যান্ডের বাজার এতদিন শাওমির হাতে থাকলেও এবার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হতে এসেছে আরেক চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ে।

তাদের স্মার্টব্যান্ড কালার এ২ স্বল্পমূল্যের মধ্যে বেশ কিছু ভালো ফিচার নিয়ে বাজারে এসেছে।  নতুন এই ব্যান্ড কিছুদিন ব্যবহার করে ভালোমন্দ জানার চেষ্টা করা হয়েছে।

Techshohor Youtube

এক নজরে হুয়াওয়ে স্মার্টব্যান্ড কালার এ২

  •  ০.৯৬ ইঞ্চি সাদাকালো ওএলইডি ডিসপ্লে
  • হার্টরেট সেন্সর
  • পরিবর্তনযোগ্য ব্যান্ড
  • নোটিফিকেশন, স্লিপ মনিটর, পেডোমিটার
  • ঘড়ি
  • ৯ দিন ব্যাটারি লাইফ, ১৮ দিন স্ট্যান্ডবাই

ডিজাইন

লম্বাটে চারকোনা ব্যান্ডটির মূল ডিজাইনের সঙ্গে হাতঘড়ির মিল রয়েছে। অন্যান্য স্মার্টব্যান্ডের মতো দেখতে, ব্রেসলেটের মতো নয়।

ওএলইডি ডিসপ্লে ব্যবহারের ফলে কালো বেজেল আলাদাভাবে নজরে আসে না। রাবারের ব্যান্ডটি বেশ কিছু রঙে পাওয়া যাবে, বদলে নিতেও সমস্যা হবে না।

ব্যান্ডের মধ্যে চেক ডিজাইন রয়েছে, ফলে আলো পড়লে দেখতে অনেকটা চেইনের মতো লাগবে।

ব্যান্ডের সঙ্গে মূল ডিভাইস আটকে থাকার জন্য ধাতব ফ্রেম ব্যবহার করা হয়েছে। ডিভাইসটির সামনের পুরোটা জুড়ে রয়েছে গরিলা গ্লাস, তার মধ্যে খুব হালকাভাবে হুয়াওয়ের লোগো দেয়া হয়েছে।

সামনে ডিসপ্লে ছাড়া পেছনে রয়েছে হার্ট রেট সেন্সর ও চার্জিং পিন। ডিভাইসটি নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ ব্লুটুথের মাধ্যমে অ্যাপ থেকে ও টাচস্ক্রিনের মাধ্যমে। বন্ধ বা চালু করারও কোনো বাটন নেই।

পানি ও ধূলা নিরোধী ডিভাইসটি তৈরি করা হয়েছে মানসম্মতভাবে, ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।

ব্যবহার

ডিভাইসটি কেনার পর ব্যবহার করতে হলে চার্জিং ডকে বসিয়ে চার্জ দেয়ার মাধ্যমে চালু করতে হবে। চালু করার পর হুয়াওয়ে ওয়্যার অ্যাপের সঙ্গে পেয়ার না করা পর্যন্ত সেটি কার্যকর হবে না, যা কিছুটা বিরক্তিকর।

চালু হয়ে গেলে নিজ থেকেই টাইম সেটিংস হয়ে যাবে ও ব্যবহারকারীর হৃদস্পন্দন ও হাঁটাচলার দিকে স্মার্টব্যান্ডটি নজর রাখতে শুরু করবে।

ব্যয়াম, ঘুম, হাঁটাচলা ও হৃদস্পন্দনের দিকে নজর রাখা ছাড়াও ব্লুটুথ সংযোগের মাধ্যমে ফোনের নোটিফিকেশনও এর ডিসপ্লেতে দেখা যাবে।

অ্যালার্মের সঙ্গে সেটি ভাইব্রেট করবে, দীর্ঘসময় বসে থাকলে উঠে কিছুক্ষণ চলাফেরা করার জন্য সচেতন করে দেবে।

ব্যান্ডের নোটিফিকেশন ও অন্যান্য সেটিংস ব্যবহারের জন্য রয়েছে হুয়াওয়ে ওয়্যার অ্যাপ, তবে স্বাস্থ্য ও ব্যায়ামের তথ্য দেখার জন্য হুয়াওয়ে হেলথ অ্যাপটি প্রয়োজন হবে।

ব্যায়ামের রুটিন ও গোল হেলথ অ্যাপে দেয়ার পর সেটি কোচের ভূমিকায় কাজ করবে।

ডিসপ্লে

ওলেড প্রযুক্তির সাদা-কালো ডিসপ্লেটি তৈরি করা হয়েছে, যাতে বেশি ব্যাটারি খরচ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই পিক্সেল ঘনত্ব বা ব্রাইটনেস দুটোরই ঘাটতি রয়েছে। বিশেষত দিনের আলোতে দেখতে বেশ কষ্টকর।

তবে ডিসপ্লেতে ল্যাগ বা রিফ্রেশের গতিতে সমস্যা নেই। টাচ রেসপন্সও খুবই উন্নতমানের। পিক্সেল ঘনত্ব কম হওয়ার ফলে মেসেজে বেশিরভাগ সময় স্ক্রল করে পড়তে হবে, যা বিরক্তিকর হলেও এর যা মূল্য তাতে মেনে নেওয়া যায়।

হেলথ সেন্সর ও মনিটরিং

কত কদম হাঁটা হয়েছে ও হৃদস্পন্দনের গতি, এ দুটি জিনিসের দিকে খেয়াল রাখতে সক্ষম হুয়াওয়ে স্মার্টব্যান্ড। দুটির সমন্বিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ব্যান্ডটি ঘুম ও ব্যায়ামের দিকে নজর রাখতে সক্ষম, দুটির ওপর ভিত্তি করে কত দূরত্ব হাঁটা হয়েছে ও কত ক্যালরি খরচ হয়েছে তাও দেখাতে পারবে।

হার্টরেট সেন্সরটি বেশ নির্ভুল। তবে হাতে সঠিকভাবে ব্যান্ড না পড়লে রিডিং নিতে অক্ষম। পেডোমিটারের অযথাই রিডিং নেয়ার সমস্যা রয়েছে। হয়ত ভবিষ্যৎ আপডেটে এগুলো শুধরে নেয়া হবে।

সব মিলিয়ে, ফিটনেস ব্যান্ড হিসেবে হুয়াওয়ে কালারব্যান্ড এ২ চলনসই।

নোটিফিকেশন

ফোন কল, ম্যাসেজ, বিভিন্ন ম্যাসেজিং অ্যাপের নোটিফিকেশন দেখাতে ও ভাইব্রেট করে সে সম্পর্কে জানান দিতে পারবে স্মার্টব্যান্ডটি।

কে কল দিয়েছে সে নম্বর অথবা সেভ করা নাম, ম্যাসেজের টেক্সট দুটোই ব্যান্ডে দেখা যাবে।

কোন কোন অ্যাপের নোটিফিকেশন দেখানো হবে তা হুয়াওয়ে ওয়্যার অ্যাপ থেকে নির্ধারণ করে দিতে হবে।

নোটিফিকেশন দেখার জন্য হুওয়াওয়ে স্মার্টব্যান্ড স্বল্পমূল্যে খুবই কাজের।

ব্যাটারি লাইফ

হুয়াওয়ের দাবি, এক চার্জে অন্তত ৯ দিন স্মার্টব্যান্ডটি ব্যবহার করা সম্ভব। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তাদের দাবি অযৌক্তিক নয়, তবে ৯ দিনের কম সময়ই ব্যাটারি ফুরিয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। চার্জ হতে সময় নেবে এক থেকে দুই ঘণ্টা।

পরিশেষ

ফিটনেস ব্যান্ড, নোটিফিকেশন স্ক্রিন, অ্যালার্ম ঘড়ি ও রিস্টওয়াচের এমন সমন্বয় এ মূল্যে আর নেই। স্ক্রিনের ব্রাইটনেস ও পেডোমিটারের নির্ভুলতার অভাব ভাবাবে।

মূল্য

বাজারে  দুই হাজার ৮৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে

এক নজরে ভালো

  • নোটিফিকেশন দেখার জন্য উত্তম
  • দৃষ্টিনন্দন
  • ঘড়ি হিসেবে কাজের

এক নজরে খারাপ

  • ডিসপ্লের ব্রাইটনেস দিনের আলোতে একেবারে কম
  • পেডোমিটারের ভ্রান্তি
  • ব্যাটারি লাইফ কম
  • হার্ট রেট সেন্সরে রিডিং নেয়া সমস্যাজনক

*

*

আরও পড়ুন